বৈঠকে বসছে ঢাকা-হ্যানয়
রোহিঙ্গা ও আন্তর্জাতিক ফোরামে ভিয়েতনামের সমর্থন চায় বাংলাদেশ
প্রায় পাঁচ বছর বিরতির পর ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) সভায় বসছে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম। দুই দেশের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে হতে যাওয়া এফওসিতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেশটির নিজস্ব সমর্থন ছাড়াও আসিয়ানের সমর্থন পেতে হ্যানয়কে পাশে চাইবে বাংলাদেশ। এছাড়া বৈশ্বিক বিভিন্ন ফোরামের নির্বাচনে দেশটির সমর্থন পেতে চায় ঢাকা।
রোববার (১৪ মে) ঢাকা-হ্যানয়ের মধ্যে হতে যাওয়া দ্বিতীয় এফওসি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কূটনৈতিক সূত্রগুলো থেকে এ তথ্য মিলেছে।
বিজ্ঞাপন
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট প্রথম এফওসি বৈঠক করেছিল বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম। বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন দ্বিপাক্ষিক আলোচনা স্থবির হয়েছিল। দ্বিতীয় এফওসি হ্যানয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঢাকায় ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য ভিয়েতনাম থেকে একটি প্রতিনিধিদল এসেছে। উভয়পক্ষের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়, এ সুযোগে এফওসিটা ঢাকায় হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, রাজনৈতিক, অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যু, রোহিঙ্গা ইস্যু, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, কৃষি, মৎস্য এবং পশু পালন, সুনীল অর্থনীতি, পর্যটন, সংস্কৃতি এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রে সহযোগিতাসহ দুই দেশের ফরেন সার্ভিস ইনস্টিটিউটের মধ্যে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করতে চায় উভয়পক্ষ।
ঢাকার পক্ষে বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। অন্যদিকে হ্যানয়ের পক্ষে দেশটির ডেপুটি ফরেন মিনিস্টার দু হাং ভিয়েত নেতৃত্ব দেবেন।
এফওসিতে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সার্বিকভাবে দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনা হবে। রাজনৈতিক, প্রতিরক্ষা, অর্থনীতি, আঞ্চলিক সহযোগিতা, রোহিঙ্গা ইস্যু, বিভিন্ন ফেরামে নির্বাচনে সমর্থনের বিষয় আছে। এছাড়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু, পানি নিরাপত্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জ্বালানি সহযোগিতাসহ ইন জেনারেল অভিবাসন ইস্যুতে আলোচনার সুযোগ রয়েছে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলোতে দুই দেশের একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ রয়েছে-জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, দুই দেশের প্রতিরক্ষা ইনস্টিটিউটের মধ্যে বিনিময়ের সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন ট্রেনিং, স্টাডিজ, যদি সম্ভব হয়-ভিয়েতনামের নেভাল শিপের বাংলাদেশে ভিজিট হতে পারে। দুই দেশে প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত এক্সপো হয়, সেখানে আমরা যোগ দিতে পারি; আবার ভিয়েতনামও আসতে পারে। উভয় দেশ প্রশিক্ষণার্থী পাঠাতে পারে।
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনার বিষয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ভিয়েতনামের নিজস্ব সমর্থন চাইবে। ভিয়েতনাম আসিয়ানের গুরত্বপূর্ণ সদস্য। আসিয়ান চাইলে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। ভিয়েতনামসহ আসিয়ান জোটের অন্যরা যেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে অবদান রাখে, সেজন্য ভিয়েতনামের সমর্থন চাওয়া হবে।
বর্তমান বৈশ্বিক সংকট এবং আঞ্চলিক ইস্যুতে এফওসির আলোচনায় কোন বিষয়গুলো আসতে পারে-জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, এক্ষেত্রে আমরা আমাদের ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা তাদের সঙ্গে শেয়ার করব। আর এ বিষয়ে তাদের ভাবনা জানতে চাইব। আঞ্চলিক সংস্থা যেগুলো আছে যেমন- আসিয়ান, এআরএফ, আসেমসহ অন্য যেসব সংস্থা আছে; সেগুলোতে সহযোগিতার বিষয়ে পারস্পরিক মতবিনিময় হবে। এর মধ্যে আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়লগ পার্টনার হতে বাংলাদেশ যে অনেক দিন ধরে চেষ্টা করছে, সে বিষয়ে ভিয়েতনামের সহযোগিতা চাইবে বাংলাদেশ।
ওই কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ফোরামে নির্বাচনে সমর্থন খুব জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন ফোরামে নির্বাচনে ভিয়েতনামের সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ। এ বিষয়টি এফওসিতে তোলা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এনআই/জেডএস