পথিকের ফুটপাতে চসিকের উৎপাত
পথচারীদের চলাচলের জন্যই ফুটপাত। সেই ফুটপাত দেখভালের দায়িত্বও প্রশাসনের। কেউ ফুটপাত দখল করলে উচ্ছেদের দায়িত্বও তাদের। কিন্তু দখলদার উচ্ছেদ তো পরের কথা উল্টো চট্টগ্রামে ফুটপাত দখলে ব্যস্ত সিটি করপোরেশন (চসিক)। কৌশলে একের পর এক দোকান বসিয়ে ফুটপাত দখল করছে চসিক। সিটি করপোরেশনের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ পথচারী ও নগরবাসী।
নগরের লালদিঘী জেলরোড এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, সেখানে ফুটপাতের উপরই দুটি স্টল বসিয়ে খোলা হয়েছে নার্সারি। স্টলের আশপাশে ফুটপাতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে দুই শতাধিক গাছের চারা। এর ঠিক ১০০ গজ দূরে ফুটপাতেই তৈরি করা হয়েছে শাহ আমানত নামের আরেকটি নার্সারি। সিটি করপোরেশন থেকে লিজ নিয়ে এই দোকান দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ফুটপাতে দোকান লিজ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আগে যারা সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে ছিল, তারা ফুটপাতের দোকানগুলো লিজ দিয়ে গেছে। এখানে আইনের কিছু বিষয় আছে। শাহ আমানত মাজার এলাকায় যে দোকান উঠেছে, সেটা লিজ দিয়ে গেছে তারা (আগে দায়িত্বে থাকা)। এরকম অনেক ফুটপাত লিজ দিয়ে গেছে। আমি এগুলোর আইনগত প্রক্রিয়া বিচার বিশ্লেষণ করে ধীরে ধীরে পদক্ষেপ নেব।’
তিনি বলেন, ‘ফুটপাতের অবৈধ দোকান ধীরে ধীরে তুলে দিচ্ছি, জরিমানাও করছি। আস্তে আস্তে কাজ করছি। একসঙ্গে তো পুরো চট্টগ্রাম পরিষ্কার করতে পারব না! ফুটপাতে অবৈধভাবে যারা বসেছে তাদের ধীরে ধীরে উচ্ছেদ করব। একটু সময় দেন, এরপর দেখেন।’
লিজ হিসেবে জেলরোডের ফুটপাতে জায়গা বরাদ্দ পেয়েছেন সাদ্দাম হোসেন। সেখানে তিনি গড়ে তুলেছেন শাহ আমানত নামের নার্সারি। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ‘দুই বছরের জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এস্টেট শাখা জায়গাটি লিজ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য সিটি করপোরেশনকে প্রতি বছরে ৪৫ হাজার টাকা করে দিতে হবে।’
এর আগে, জামালখান এলাকায় ফুটপাতের উপরই করা হয়েছে অ্যাকুরিয়ামসহ অন্যান্য দোকান। সেগুলোও চসিক থেকে লিজ নেওয়া। সিটি করপোরেশনের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ নগরবাসী।
এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ আশিক ইমরান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ফুটপাত দিয়ে হাঁটা নাগরিকদের মৌলিক অধিকার। এটা দোকানদার ও হকাররা দখল করে রাখছে। ফুটপাতে দোকান বসানো নগর পরিকল্পনার কোনো শালীনতার মধ্যে পড়ে না। ফুটপাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার কোনো সুযোগ নেই। পৃথিবীর সব দেশে ফুটপাতের পরিসর বাড়ানো হচ্ছে। যাতে মানুষ অল্প দূরত্বের পথ পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ফুটপাতের পরিসর বাড়ানো হচ্ছে। আর আমাদের দেশে হচ্ছে উল্টো, ফুটপাতে দোকান করা হচ্ছে। চলে যাচ্ছে অবৈধ দখলে। এগুলোর পেছনে প্রভাবশালী মহলের কিছু আর্থিক বিষয় জড়িত থাকার ফলে প্রশাসন চাইলেও সমস্যার সমাধান করতে পারছে না। তবে নাগরিকদের যে অধিকার আছে, তার ফিরিয়ে দেওয়া হোক। ফুটপাত হচ্ছে হাঁটার জন্য। জামালখান এলাকার ফুটপাতের যে জায়গা এর অর্ধেকটা জুড়েই দোকান। কাজেই মানুষের হাঁটাচলার জন্য খুব অল্প জায়গা অবশিষ্ট আছে। এটা কোনোভাবেই মানা যায় না।’
ফুটপাতের জায়গা লিজ দেওয়ার বিষয়ে এ নগর পরিকল্পনাবিদ বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ যখন নিজেরাই এই ধরনের কাজগুলো করে তখন সাধারণ মানুষ অবৈধ কাজে উৎসাহিত হয়। এসব থেকে বিরত থাকা দরকার।’
পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ফুটপাতে যা করা উচিত নয়, সিটি করপোরেশন তাই করেছে। ফুটপাতে দোকান থাকার কারণে মানুষকে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হয়। এতে দুর্ঘটনাও ঘটে। নতুন মেয়র আসেন অঙ্গীকার করেন, কিন্তু যেটা আছে তা চলছেই। ফুটপাতে দোকান দিয়ে মানুষের হাঁটার অধিকার হরণ করা হয়েছে।’
জেলরোড এলাকায় আবু নাসের নামের এক পথচারী বলেন, ‘এখানে ফুটপাতের পুরোটাই দখল করে দোকান দেওয়া হয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে সড়ক দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে। এতে করে যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
জামালখান এলাকায় কামরুল ইসলাম নামে এক পথচারী বলেন, ‘ফুটপাতে অ্যাকুরিয়ামসহ নানা দোকান দেওয়া হয়েছে। যা দেখতে দৃষ্টিকটু। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর এলাকাটিতে মানুষ বেশি থাকে। দোকানের কারণে ফুটপাত সরু হওয়ায় তখন পথচারীদের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হয়।’
কেএম/এফআর/এমএইচএস