বইমেলার স্টলে-স্টলে বঙ্গবন্ধু
বাঙ্গালির স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তী হচ্ছে এবারের অমর একুশে বইমেলার মূল থিম। সে অনুযায়ী সাজানো হয়েছে মেলার স্টল ও প্যাভিলয়নগুলো। লেখকরাও এবারের মেলায় বিষয় নির্বাচনেও প্রাধান্য দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ওপর।
মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনী সংস্থাগুলো বই প্রকাশে প্রাধান্য দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা দিক নিয়ে লেখা বই। তাই মেলার স্টলগুলোর চারপাশে শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ এবং জীবনীর ওপর লেখা নানা বই। অনেক প্রকাশনী সংস্থা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নামে তৈরি করেছে পৃথক কর্নারও।
বিজ্ঞাপন
মেলা ঘুরে দেখা গেছে, মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রায় প্রতিটি প্রকাশনী বঙ্গবন্ধুর ওপর লেখা বিভিন্ন লেখকের বই প্রকাশ করেছে। তবে, সবচেয়ে বেশি বই প্রকাশ করেছে মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। বঙ্গবন্ধুর শতবর্ষে ১০০টি বইয়ের ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত ৪০টি বই স্টলে সাজিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রকাশনী সংস্থা তাম্রলিপি বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা দিক নিয়ে বিভিন্ন লেখকের লেখা ৪৬টি বই প্রকাশ করেছে। পাঞ্জেরী প্রকাশনী সম্পাদনা ও মৌলিক গ্রন্থ মিলে বঙ্গবন্ধুর ওপর ১৮টি বই প্রকাশ করেছে। কথা প্রকাশ বঙ্গবন্ধু ও মক্তিযুদ্ধবিষয়ক ২২টি বই এনেছে এবারের বইমেলায়। অন্যদিকে সময় প্রকাশন, মাওলা ব্রাদার্স, অবসর, প্রকাশনা সংস্থা পার্লসহ বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থা এবারের বইমেলায় বঙ্গবন্ধুর ওপর নতুন বই এনেছে।
এবারের বইমেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের নানা অধ্যায় নিয়ে প্রকাশিত বইগুলোয় তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন থেকে শুরু করে শাসনামল, রাষ্ট্রদর্শন, শিল্প-সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ, বহির্বিশ্বে তার নেতৃত্বের মূল্যায়ন, সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগ, দেশ গঠনের ভাবনাসহ বিবিধ বিষয় উঠে এসেছে। ইতিহাস সচেতন পাঠকদের মনোযোগ টানছে বঙ্গবন্ধুর জীবনের ওপর লেখা গ্রন্থগুলো।
জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ও সময় প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ বলেন, এবারের বইমেলায় আমাদের নতুন বইয়ের প্রায় সবই বঙ্গবন্ধুর ওপর। আগামী সপ্তাহের মধ্যে সব বইমেলায় চলে আসবে।
তাম্রলিপি প্রকাশনা সংস্থার পরিচালক তাসনুভা সেঁজুতি বলেন, সাধারণ পাঠকের পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগারগুলো এসব বই সংগ্রহ করছে।
আগামী প্রকাশনী থেকে এসেছে শেখ হাসিনার লেখা ‘মাই ফাদার, মাই বাংলাদেশ’, আবদুল গাফফার চৌধুরীর লেখা ‘হাসিনা ও রেহানা: অরূপকথার দুইবোন’, ‘শেখ কামাল যদি বেঁচে থাকতেন’, ‘বঙ্গবন্ধু-মক্তিযুদ্ধ: বাংলাদেশের রাজনীতি’, ‘আমার বঙ্গবন্ধু আমার বাংলাদেশ’। অন্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হারুন-অর-রশীদের লেখা ও সম্পাদনায় ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে নির্বাচিত প্রবন্ধ’ ও ‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা’ এবং সেলিনা হোসেন সম্পাদিত ‘নির্বাচিত গল্পে বঙ্গবন্ধু’। প্রকাশনা সংস্থা পার্ল থেকে এসেছে সাহিদা বেগমের সম্পাদনায় ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ইতিবৃত্ত’ ও বঙ্গবন্ধুসহ অভিযুক্তদের জীবনবন্দী’ এবং রফিকুল ইসলামের লেখা ‘বাংলা ও বাঙালির বঙ্গবন্ধু’। অনিন্দ প্রকাশ থেকে এসেছে দুখু বাঙালির লেখা ‘দীর্ঘ কবিতায় পিতা তুমি’।
পুথিনিলয় থেকে এসেছে অধ্যাপক মুহম্মদ জালাল উদ্দিনের সম্পাদনা ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’। জার্নিম্যান থেকে প্রকাশিত তারিক সুজাতের লেখা ‘শাহাবুদ্দিনের শিল্পকর্মের আলোকে কবিতা’। শোভা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত শামসুজ্জামান খানের লেখা ‘বঙ্গবন্ধু ভাষা-আন্দোলন ও মক্তিযুদ্ধ’। চারুলিপি থেকে এসেছে শেখ হাসিনার সম্পাদনায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনক আমার নেতা আমার’। অন্বেষা থেকে প্রকাশিত সুরমা জাহিদের ‘বহির্বিশ্বে গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও মক্তিযুদ্ধ’।
পাঞ্জেরী প্রকাশনী থেকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা ১৮টি বই প্রকাশ করছে। এরমধ্যে রয়েছে আনিসুজ্জামান সম্পাদিত ‘বঙ্গবন্ধু-বীক্ষণ: কর্মজীবন’, হাবীবুল্লাহ সিরাজীর ‘আমাদের বঙ্গবন্ধু’, শাহজাহান কবির বীরপ্রতীকের ‘নৌ-যুদ্ধ একাত্তর’, আনিসুল হকের ‘গুড্ডুবুড়ার বিজয় দিবস’, ফরিদুর রেজা সাগরের ‘বঙ্গবন্ধু এন্ড সুমন’স স্টোরি’, সেলিনা হোসেনের ‘আওয়ার বিলাভড শেখ মুজিব’ ও ‘রাসেলের জন্য অপেক্ষা’।
কথা প্রকাশ থেকে প্রকাশিত আমীরুল ইসলামের লেখা ‘বঙ্গবন্ধু ও দোয়েলের গল্প’, শামসুজ্জামানের লেখা ‘বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রচিন্তা ও বর্তমান বাংলাদেশ’, মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাকের ‘জনকের প্রতিবাদী জীবন’, রফিকুর রশীদের ‘অহংকারের উৎস’।
বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ বলছে, অমর একুশে বইমেলায় বঙ্গবন্ধুর ওপর ৪০ টির বই প্রকাশিত হবে। এর মধ্যে ৩৬টি বইমেলার প্রথম দিন থেকে পাওয়া যাচ্ছে।
আজকের মেলার নতুন বই
বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার মেলায় নতুন বই এসেছে ১১৮টি। সংখ্যায় এগিয়ে থাকা কবিতার বই এসেছে ৩৮টি। এছাড়া উপন্যাস ১৮টি, প্রবন্ধ ১০টি এবং অন্যান্য বই ১৩টি।
আজকের মেলা মঞ্চের আয়োজন
মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) বিকেল মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : মুক্তিযুদ্ধ ও নারী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মনিরুজ্জামান শাহীন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মোহাম্মদ জাকীর হোসেন এবং একেএম জসীমউদ্দীন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সেলিনা হোসেন।
সভাপতির বক্তব্যে সেলিনা হোসেন বলেন, নারী-পুরুষের যৌথ শক্তিতেই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সফলতা লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি নারীরা যে অসীম সাহস ও বীরত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন তা আমাদের স্মরণ রাখতে হবে।
বুধবারের মেলার আয়োজন
বুধবার (২৪ মার্চ) অমর একুশে বইমেলার সপ্তম দিন। এদিন মেলা মঞ্চে বিকেলে ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : মুক্তিযুদ্ধে সংবাদ সাময়িকপত্র শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জাফর ওয়াজেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মোহাম্মদ সেলিম, মো. এমরান জাহান এবং কুতুব আজাদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ।
এএইচআর/এসকেডি