মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম / ছবি: সংগৃহীত

প্রায় নয় বছর যাবৎ বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার শীর্ষ নেতাদের মধ্যে সফর বিনিময় হচ্ছে না। সেজন্য রাজনৈতিক পর্যায়ে দু’দেশের শীর্ষ নেতাদের সফর বিনিময়ে জোর দেওয়া হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, চলতি বছরেই সরকারি সফরে ঢাকায় আসবেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম।

বুধবার (১০ মে) ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের সভা ফরেন অফিস কনসালটেশনে (এফওসি) বসছে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া। দুই দেশের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে হতে যাওয়া এফওসিতে আলোচনার টেবিলে থাকছে উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময়ের প্রসঙ্গ। এক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের ঢাকা সফরের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলবে ঢাকা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, উভয়পক্ষের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সফর বাড়ানো দরকার। মহামারি পরবর্তী সময়ে নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমরা রাজনৈতিক পর্যায়ে সফর বিনিময়ের কথা চিন্তা করছি। বিশেষ করে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো আছে। আমরা চাই, যত দ্রুত সম্ভব মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করুক। দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় (এফওসি) মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সফরের বিষয়টি আবারও গুরত্ব সহকারে তুলে ধরা হবে।

মন্ত্রণালয়ের এ কর্মকর্তা বলেন, সফরটা আমরা এ বছরই চাচ্ছি। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীও বাংলাদেশে আসতে ইচ্ছের কথা জানিয়েছেন। যত দ্রুত পারা যায় তিনি আসবেন বলে অভিপ্রায় জানিয়েছেন। এ বিষয়টি সামনে রেখে দু’পক্ষ কাজ করে যাচ্ছে।

কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ দূতাবাসের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, ২০০০ সালে প্রথম মালয়েশিয়ায় সরকারি সফরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তী সময়ে এক যুগের বেশি সময় ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে দ্বিতীয়বার দেশটিতে সফর করেন তিনি।

অন্যদিকে, ঢাকার মালয়েশিয়ার হাইকমিশনের দূতাবাসের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, সর্বশেষ ২০১৩ সালের নভেম্বরে সরকারি সফরে ঢাকায় এসেছিলেন মালয়েশিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক।

এদিকে, আগামী শুক্রবার (১২ মে) থেকে ঢাকায় দুই দিনব্যাপী ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলন বসছে। সম্মেলনে বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের পক্ষ থেকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ঢাকায় যে সময়ে ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলন চলবে ওই সময়ে ইন্দোনেশিয়াতে আসিয়ানের একটি সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। যার কারণে ঢাকা সফর করতে পারছেন না মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। ঢাকা সফরে আসতে পারবেন না বলে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দুঃখ প্রকাশ করে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, দুই দেশের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে হতে যাওয়া এফওসিতে আলোচনার টেবিলে শ্রমবাজার সমস্যার সমাধানে জোর দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে সি‌ন্ডি‌কেট জটিলতার অবসান ও দেশটি‌তে স্বল্প অভিবাসন ব‌্যয়ে কাঙ্ক্ষিত কর্মী পাঠানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিতে চায় ঢাকা।

এছাড়া বৈঠকে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পর্যটন, কৃষি খাতে সহযোগিতা, রোহিঙ্গা ইস্যু ও আসিয়ানের সঙ্গে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার বিষয়গুলো থাকবে।

ঢাকার পক্ষে বৈঠ‌কে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। অন্যদিকে কুয়ালালামপুরের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল (বাইলেটারাল অ্যাফেয়ার্স) দাতো নরম্যান মুহাম্মদ।  

বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হবে। পাশাপাশি নতুন নতুন ক্ষেত্রগু‌লো‌তে দুই দে‌শের একস‌ঙ্গে কাজ করার সু‌যোগ নিয়ে আলোচনা হবে। শ্রমবাজার নিয়ে আলোচনা হবে। উভয়পক্ষের সহযোগিতায় কীভাবে এ সেক্টরকে স্মুথ করা যায় তা নিয়েও আলোচনা হবে। এছাড়া অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়টি থাকবে। বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার বি‌নি‌য়োগ চাওয়া হ‌বে। প্রয়োজন হ‌লে তা‌দের জন‌্য বি‌শেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল দেওয়ার প্রস্তাব থাক‌বে।

এ কর্মকর্তা বলেন, এছাড়া কৃষি সহযোগিতা বাড়া‌নো, বি‌শেষ করে প্রযুক্তি হস্তান্তর জোর দেওয়া হবে। পর্যটনে তারা এগিয়ে, এখানে সহ‌যো‌গিতা পে‌তে পারি। সাংস্কৃতিক বিষয় নি‌য়ে কাজ কর‌া যে‌তে পা‌রে। মালয়েশিয়া অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী র‌য়ে‌ছে, তা‌দের সুযোগ-সুবিধা নি‌য়ে আলোচনা হবে।

আসিয়া‌নের সেক্টরাল ডায়লগ পার্টনারশিপ এবং রো‌হিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কুয়ালালামপুর‌কে ঢাকা পাশে চাইবে ব‌লেও জানান এ কর্মকর্তা।

এনআই/কেএ