পানির দাম ফের বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে ঢাকা ওয়াসা। প্রস্তাব অনুমোদন হলে আগামী জুলাই মাস থেকে আবাসিক গ্রাহকদের প্রতি ইউনিট অর্থাৎ এক হাজার লিটার পানির জন্য দাম দিতে হবে ১৫ টাকা ১৮ পয়সা, আর বাণিজ্যিক সংযোগে দিতে হবে ৪২ টাকা।

ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, ৫ শতাংশ হারে পানির দাম বাড়ানোর জন্য ওয়াসা যে প্রস্তাব করেছে তা মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) এক বোর্ড সভায় অনুমোদন হতে পারে।

বিভিন্ন দফায় পানির দাম বাড়িয়ে বর্তমানে আবাসিক গ্রাহককে প্রতি ইউনিট অর্থাৎ এক হাজার লিটার পানিতে বর্তমানে গুনতে হচ্ছে ১৪ টাকা ৪৬ পয়সা। পাশাপাশি বাণিজ্যিক সংযোগের জন্য গ্রাহককে গুণতে হচ্ছে ৪০ টাকা করে। যা ৫ শতাংশ বাড়িয়ে দাম নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে ঢাকা ওয়াসা। করোনাভাইরাস মহামারির শুরুর দিকে গত বছরের এপ্রিলেও এক দফা পানির দাম বাড়িয়েছিল ঢাকা ওয়াসা। সে সময় প্রতি ইউনিটে দাম বাড়ানো হয়েছিল ২ টাকা ৮৯ পয়সা। বর্তমানে দেশে যখন করোনার প্রকোপ বাড়ছে ঠিক সে সময়ই পানির দাম ফের বাড়ানোর প্রস্তাব করল ওয়াসা।

এ বিষয়ে কথা বলতে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের সঙ্গে মোবাইলে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াসার এক কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব করা হয়েছে। বোর্ড সভায় বিষয়টি তোলা হবে। যদি প্রস্তাবটি অনুমোদন হয় তবেই পানির দাম বাড়বে। পানি ও পয়ঃঅভিকর (পয়ঃব্যবস্থা ব্যবহারের জন্য কর্তৃপক্ষ আরোপিত চার্জ) 
ছাড়া ওয়াসার আর কোনো আয় না থাকায় পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া পানি উৎপাদন ব্যয় আগের চেয়ে বেড়েছে।

ওয়াসার পানির মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব বিষয়ে সাধারণ নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওয়াসা আইন ১৯৯৬ অনুযায়ী, বাৎসরিক সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়ানোর বিধান রয়েছে। কিন্তু করোনাকালে এমনিতেই অসহায় অবস্থায় আছে সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে পানির দাম বাড়ানোর জন্য ওয়াসার এমন প্রস্তাব করা আসলেই অমানবিক। এতে করে করোনাকালে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। পরিচালন ব্যয়, ঘাটতি ও ঋণ পরিশোধের অজুহাতে আবাসিক এবং বাণিজ্যিক খাতে ঢাকা ওয়াসার পানির মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব অযৌক্তিক, গ্রাহকের ওপর এক ধরনের চাপিয়ে দেওয়া নির্যাতনমূলক সিদ্ধান্ত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তবে ওয়াসা বলছে, ঢাকা ওয়াসার এক হাজার লিটার পানির উৎপাদন খরচ ২৫ থেকে ২৮ টাকা। সে কারণে পানির মূল্য বৃদ্ধি প্রয়োজন। এছাড়া মূল্যস্ফীতি সমন্বয় করতেও মূল্য বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে। ওয়াসা আইন ১৯৯৬ এর ২২(২) ধারা অনুযায়ী ওয়াসা বোর্ড অনধিক ৫ শতাংশ হারে পানি ও পয়ঃঅভিকর সমন্বয় করতে পারে।

এদিকে করোনাকালে ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর বিষয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। রাজধানীর বাড্ডার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী নূরুন নাহীদ বলেন, করোনাকালে যখন গ্রাহকদের প্রতি ওয়াসার মানবিক আচরণ করা উচিত ছিল সে সময় উল্টো দাম বাড়ানোর প্রস্তাব পুরোপুরি অমানবিক আচরণ। ওয়াসার ওপর গ্রাহকদের এমনিতেই আস্থা নেই, এরপর পানির দাম ফের বাড়ানোর বিষয়টি তাদের ওপর ক্ষোভ আরও বাড়বে।

রাজধানীর গ্রিন রোড এলাকার বাসিন্দা হাসিবুর রহমান বলেন, ওয়াসার পানি নিয়ে নগরবাসীর অভিযোগের অন্ত নেই। এর মধ্যে নিত্যনৈমিত্তিক একটি ব্যাপার হলো অনেক স্থানেই পানিতে দুর্গন্ধ থাকে। গরমের মৌসুমে পানির সঙ্কট হয় তীব্র। এরপরও তারা সেবার মান না বাড়িয়ে পানির দাম বাড়ানোর পায়তারা করছে, যা খুবই দুঃখজনক। ওয়াসার উৎপাদন ও বিতরণ পর্যায়ে দুর্নীতি কমালে মূল্য বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন হবে না। জনস্বার্থ বিবেচনা করে তাদের উচিত এই করোনাকালে পানির দাম না বাড়ানো।

এএসএস/জেডএস