বার বার আলোচনায় ব‌সেও মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সি‌ন্ডি‌কেট বিতর্ক বন্ধ করা যা‌চ্ছে না। বর্তমানে দেশটির শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের জন্য খোলা থাকলেও সি‌ন্ডি‌কেট জটিলতার কার‌ণে প্রত্যাশিত শ্রমিক পাঠাতে পারছে না বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমবাজারটির জটিলতার অবসান চায় বাংলা‌দেশ। একইসঙ্গে দেশটি‌তে স্বল্প অভিবাসন ব‌্যয়ে কাঙ্ক্ষিত কর্মী পাঠাতে চায় ঢাকা।

আগামী ১০ মে ঢাকায় পররাষ্ট্র-সচিব পর্যায়ের সভা ‘ফরেন অফিস কনসালটেশন’ বসছে ঢাকা-কুয়ালালামপুর। সভায় ঢাকার পক্ষ থেকে বাংলা‌দে‌শি কর্মী‌দের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নি‌য়ে সব ধরনের জটিলতার অবসানে কুয়ালালামপুরের সহ‌যো‌গিতা চাওয়া হ‌বে। পাশাপাশি বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার বি‌নি‌য়োগসহ দেশ‌টি‌র স‌ঙ্গে বা‌ণি‌জ্যের পরিমাণ আরও বাড়া‌নোর বিষ‌য়ে গুরুত্ব দেওয়া হ‌বে।

আরও পড়ুন : সুদান থেকে বাংলাদেশিদের যেভাবে ফেরানোর পরিকল্পনা

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, দুই দেশের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে হতে যাওয়া এফওসিতে আলোচনার টেবিলে শ্রম বাজার সমস্যার সমাধান ছাড়াও ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পর্যটন, কৃষি খাতে সহযোগিতা, রোহিঙ্গা ইস্যু, আসিয়ানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিষয়গুলো থাকবে।

ঢাকার পক্ষে বৈঠ‌কে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা র‌য়ে‌ছে পররাষ্ট্র-সচিব মাসুদ বিন মোমেনের। অন্যদিকে কুয়ালালামপুরের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন দেশটির পররাষ্ট্র-সচিব বা অতিরিক্ত সচিব।

ঢাকার এক‌টি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ঢাকা-কুয়ালালামপুরের আসন্ন এফওসি নি‌য়ে রোববার (৩০ এপ্রিল) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভা করা হয়। সভায় মন্ত্রণালয়ের মিশন মহাপরিদর্শক (আইজিএম) আসাদ আলম সিয়াম সভাপতিত্ব ক‌রেন।

আরও পড়ুন : অর্থের কাছে তুচ্ছ তাদের আবেগ

বৈঠ‌কে পূর্বের এফওসিতে আলোচনাধীন যেসব বিষ‌য়ে এখনও সমাধানে পৌঁছা‌নো যায়নি, সেগু‌লো নি‌য়ে আলোচনা হ‌য়ে‌ছে এবং সেগু‌লো‌তে সভায় তোলার সিদ্ধান্ত হ‌য়ে‌ছে। পাশাপাশি নতুন নতুন যে ক্ষেত্রগু‌লো‌তে দুই দে‌শের একস‌ঙ্গে কাজ করার সু‌যোগ র‌য়ে‌ছে, সেগু‌লো এফওসিতে তোলার সিদ্ধান্ত হ‌য়ে‌ছে। ত‌বে মালয়েশিয়ার শ্রম বাজ‌ার জটিলতার নিরসন এবং দেশ‌টির বি‌নি‌য়ো‌গের পাওয়ার বিষ‌য়ে গুরুত্বের কথা উঠে এসেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা ব‌লেন, এফওসিতে সাধারণত দুই দেশের সার্বিক বিষয়গুলো আলোচনা হয়। আগের বৈঠকগু‌লোর নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা বিষয়‌টি থা‌কে এবং সেগু‌লো কেন সমাধান হয়‌নি তা চিহ্নিত করে সমাধানের পথ খোঁজা হয়।

আরও পড়ুন : সম্পর্ক নতুন মাত্রায় যুক্ত করছে বাংলাদেশ-জাপান

বৈঠ‌কে কোন কোন বিষয়গু‌লো‌তে ঢাকার পক্ষ থে‌কে জোর দেওয়া হ‌বে, জান‌তে চাইলে এ কর্মকর্তা ব‌লেন, শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের বিষয়‌টি অগ্রাধিকার পা‌বে। ব‌ার বার চেষ্টা ক‌রেও শ্রমবাজার জটিলতার সমাধান করা যা‌চ্ছে না। আমরা সি‌ন্ডি‌কেটমুক্ত শ্রমবাজার চাই, স্বল্প ব্যয়ে অভিবাসন চাই। সেইসঙ্গে অবৈধদের বৈধ করার বিষয়‌টি থাকবে। কর্মী‌দের স্বার্থটা বড় ক‌রে দেখ‌তে চাই। কিন্তু সি‌ন্ডি‌কেটসহ নানা সমস্যার কার‌ণে কাঙ্ক্ষিত কর্মী যে‌তে পার‌ছে না। এখন কর্মী যা‌চ্ছে, কিন্তু যেভ‌া‌বে হওয়ার দরকার ছিল সেটা হ‌চ্ছে না। আমরা এসব বিষ‌য়ের সমাধান চাই। সেটা মালয়েশিয়ার প্রতিনিধির কা‌ছে তু‌লে ধরা হ‌বে।

এর বা‌ইরে আলোচনার বিষ‌য় সম্পর্কে এ কর্মকর্তা ব‌লেন, বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার বি‌নি‌য়োগ চাওয়া হ‌বে। প্রয়োজন হ‌লে তা‌দের জন‌্য বি‌শেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল দেওয়ার প্রস্তাব থাক‌বে। এছাড়া কৃষি সহযোগিতা বাড়া‌নো, বি‌শেষ করে প্রযুক্তি হস্তান্তর জোর দেওয়া হবে। মালয়েশিয়ায় হালাল খাদ্যের বাজার নি‌য়ে আগ্রহ র‌য়ে‌ছে বাংলাদেশের। পর্যটনে তারা এগিয়ে, এখানে সহ‌যো‌গিতা পে‌তে পারি। সাংস্কৃতিক বিষয় নি‌য়ে কাজ কর‌া যে‌তে পা‌রে। মালয়েশিয়া অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী র‌য়ে‌ছে, তা‌দের সুযোগ-সুবিধা নি‌য়ে কথা আস‌বে।

দুই দেশের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে হতে যাওয়া এফওসিতে আলোচনার টেবিলে শ্রম বাজার সমস্যার সমাধান ছাড়াও ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পর্যটন, কৃষি খাতে সহযোগিতা, রোহিঙ্গা ইস্যু, আসিয়ানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিষয়গুলো থাকবে।

আসিয়া‌নের সেক্টরাল ডায়লগ পার্টনারশিপ এবং রো‌হিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কুয়ালালামপুর‌কে ঢাকা পাশে চাইবে ব‌লেও জানান এ কর্মকর্তা।

এফওসিতে আলোচনার বিষ‌য়ে জান‌তে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা ঢাকা পোস্ট‌কে ব‌লেন, দ্বিপক্ষীয় সব বিষয় নি‌য়ে আলোচনার সু‌যোগ র‌য়ে‌ছে। যেসব বিষয়গু‌লো সমাধান হয়‌নি, সেগু‌লো তোলার সু‌যোগ আছে। তাছাড়া নতুন কো‌নো ক্ষে‌ত্রে য‌দি কাজ করার সু‌যোগ থা‌কে উভয়পক্ষ আলোচনা কর‌তে পা‌রে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সা‌লে কুয়ালালামপুরে দ্বিতীয় এফওসি বৈঠক ক‌রে বাংলা‌দেশ-মালয়েশিয়া। প্রায় পাঁচ বছর বিরতির ঢাকায় তৃতীয় এফওসি বৈঠকে বস‌ছে উভয়পক্ষ।

এনআই/এসকেডি