এপ্রিলের ১৫ তারিখ থেকে সুদানে লড়াই শুরু হয়

সুদানে সেনাবাহিনী ও মিলিশিয়া বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের নিরাপদে অন্য দেশের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। 

শুরুতে দেশে ফিরতে আগ্রহী প্রায় ৫০০ বাংলাদেশিকে পোর্ট সুদানে এবং সেখান থেকে জাহাজে করে জেদ্দায় নিতে চায় খার্তুমের বাংলাদেশ দূতাবাস। এরপর জেদ্দা থেকে বাংলাদেশিদের বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফেরানো হবে। সেজন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

খার্তুমের বাংলাদেশ দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

দূতাবাস এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ৩০ এপ্রিল থেকে ১ বা ২ মের মধ্যে প্রথম দফায় ৫০০ বাংলাদেশিকে সুদান থেকে জেদ্দায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এসব বাংলাদেশিদের পোর্ট সুদানে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর সেখান থেকে তাদের জাহাজে করে জেদ্দা নেওয়া হবে। তবে এখনও জাহাজ ভাড়া চূড়ান্ত হয়নি। জাহাজ ভাড়ার তারিখ চূড়ান্ত হলে বাস ভাড়া করবে দূতাবাস।

বাংলাদেশিদের ফেরানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে খার্তুমে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত (চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স) তারেক আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে আমরা খার্তুম থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছি। এখান থেকেই আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। আমরা একটা তারিখ চূড়ান্ত করেছি ৩০ এপ্রিল। তবে জাহাজ এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। যার জন্য এ তারিখটা চূড়ান্ত না। জাহাজের তারিখ চূড়ান্ত করার পর বাস চূড়ান্ত করা হবে। আমরা আশা করছি, ৩০ এপ্রিল থেকে ২ মার্চের মধ্যে বাংলাদেশিদের জেদ্দায় নিতে পারব। 

আরও পড়ুন : সুদান থেকে ভারতীয়, বাংলাদেশিদের সরালো সৌদি আরব 

সুদানে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত অন্তত ৪শ মানুষ নিহত হয়েছে

অনেক বিদেশি পোর্ট সুদান এলাকায় মানবেতর জীবন-যাপন করছেন বলে জানান ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, একোমোডেশনের অভাবে অনেক বিদেশি মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। তারা মসজিদ-রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন জায়গায় খুব কষ্টে আছে। যার জন্য আমরা তারিখটা এমনভাবে করতে চাই, যেন বাংলাদেশিদের অসুবিধা না হয়। তাই আমরা ঠিক করেছি, জাহাজের তারিখ চূড়ান্ত হওয়ার পর বাস ঠিক করব। আমরা চেষ্টা করছি, বাংলাদেশিদের যেন ভালোভাবে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের প্রথম ধাপে টার্গেট ৫০০ জনকে ফেরানো। যারা রেসপন্স করেছে তাদের। তবে দূতাবাস জানিয়েছে, তালিকার অনেকে না আসার কথা বলছে। আবার নতুন নতুন যুক্ত হচ্ছে। আমাদের খার্তুমের দূতাবাস এবং সৌদি দূতাবাস কাজ করছে। পোর্ট সুদান থেকে বাংলাদেশিদের জেদ্দায় নিয়ে আসার পর সেখান থেকে বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফেরানোর কথা চিন্তা করা হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।

মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফরে যাওয়ার আগে সুদানে থাকা বাংলাদেশিদের দেশে ফেরানোর তাগিদ দিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন, যারা ফিরতে চাইবে, তাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশিদের ফেরাতে দূতাবাস সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সুদানে যেসব বাংলাদেশি আছে সবার সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। সবাইকে একত্রিত করা হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসের প্রথম সচিব নিরাপদ দূরত্বে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশিরা যেন নিরাপদে আসতে পারেন সেজন্য কোন কোন রুটে আনা যায়, তারা সেটা ঠিক করেই কাজ করছেন। আমরা আশা করছি, তাদের দ্রুত ফেরাতে পারব। প্রথম দফা হয়ে গেলে পরবর্তীতে যারা আসতে চাইবে তাদেরও দ্রুত ফেরানো হবে।

তৃতীয় কোনো দেশের সহযোগিতা নিয়ে বিশেষ করে ভারতের নাগরিকদের সঙ্গে বাংলাদেশি নাগরিকদের সুদান থেকে ফেরানো যেতে পারে কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের এ জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, প্রয়োজন হলে সহযোগিতা নিতেই পারি। 

আরও পড়ুন : সহসাই থামছে না সুদানের দুই বাহিনীর লড়াই

যুদ্ধ সহসাই থামছে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে

ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদের দেওয়া তথ্য বলছে, সুদানে বর্তমানে প্রায় দেড় হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন। এদের মধ্যে খার্তুমেই প্রায় ১ হাজার ২০০ বাংলাদেশি রয়েছেন। বাকিরা দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থান করছেন। 

বিবিসির তথ্য অনুযায়ী এপ্রিলের ১৫ তারিখ থেকে সুদানে লড়াই শুরু হয় সেনাবাহিনী ও মিলিশিয়া র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে। 

১৫ এপ্রিলই রাজধানী খার্তুমে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদের বাসা আক্রান্ত হয়। রাষ্ট্রদূতের বাসার দেওয়াল ও জানালা ভেদ করে ঢুকে পড়ে মেশিনগানের গুলি। এরপর গত ২২ এপ্রিল বাংলাদেশ দূতাবাসের জানালা ও দেওয়াল ভেদ করে মেশিনগানের গুলি। 

চলমান এ লড়াইয়ের এখন পর্যন্ত চার শতাধিক লোক প্রাণ হারানোর কথা বলছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। তবে প্রকৃত নিহতের সংখ্যা আরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

সহসাই থামছে না লড়াই 
সুদানে এই লড়াই সহসাই থামছে না। কারণ সমস্যা সমাধানে কোনো পক্ষই সত্যিকার অর্থে আলোচনায় আগ্রহী নয় বলে জানিয়েছেন সুদানে নিযুক্ত জাতিসংঘের দূত। 

আক্রান্ত হয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাসও

মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে সুদানে নিযুক্ত জাতিসংঘের দূত ভলকার পার্থেস জানিয়েছেন, দেশের কোথাও কোথাও এটি মানা হচ্ছে। কিন্তু আবার অনেক জায়গায় চুক্তি ভঙ্গ করে একে-অপরকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে সেনাবাহিনী ও প্যারামিলিটারি র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)

রাজধানীতে হামলার কারণে সেখানে মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভলকার। দুটি সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে লড়াই হলেও এর পুরো ভোগান্তি ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

সংঘাতের কারণ কী 
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, সুদানে কিভাবে বেসামরিক শাসন ফিরিয়ে আনা হবে, মূলত তা নিয়ে দুই ক্ষমতাধর সামরিক অধিনায়কের দ্বন্দ্ব থেকে এই লড়াই চলছে। 

প্রথম দফায় ৫০০ বাংলাদেশিকে সুদান থেকে জেদ্দায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে

সুদানের বর্তমান সামরিক সরকার চলে মূলত সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বে। তার সঙ্গে উপনেতা হিসেবে আছেন আরেকটি আধা-সামরিক বাহিনী আরএসএফ প্রধান মোহাম্মদ হামদান হেমেডটি ডাগালো। 

বেসামরিক শাসনে প্রত্যাবর্তনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই দুটি বাহিনীকে একীভূত করার কথা। কিন্তু আরএসএফ তাদের বিলুপ্ত করার বিপক্ষে, এবং এই পরিকল্পনা থামানোর জন্য তাদের বাহিনীকে রাস্তায় নামায়।

এরপর এটি সেনাবাহিনী এবং আরএসএফের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ লড়াইয়ে রূপ নিয়েছে। জাতিসংঘ হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, দশ হাজার হতে বিশ হাজার মানুষ- যাদের বেশিরভাগ নারী এবং শিশু, সুদান ছেড়ে পালিয়েছে পাশের দেশ চাডে আশ্রয় নেয়ার জন্য।

এনআই/এনএফ