রেলওয়ে স্টেশন ব্যবস্থাপনায় অভিযোগ নেই যাত্রীদের!
প্রথমবারের মতো কয়েক স্তরের টিকিট চেকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীরা যাত্রীদের ঢাকা, বিমানবন্দর এবং জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশ করাচ্ছেন। শুধুমাত্র টিকিটধারীদের যাত্রী উল্লেখ করে এর বাইরের কাউকে প্ল্যাটফর্ম এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। যার ফলে প্ল্যাটফর্ম এলাকায় যাত্রী ছাড়া টিকিটবিহীন কাউকেই দেখা যায়নি। কোন ভিড় না থাকায় স্বচ্ছন্দে প্ল্যাটফর্মে বিচরণ করতে দেখা গেছে যাত্রীদের।
বুধবার (১৯ এপ্রিল) ঢাকা পোস্টের তিন সদস্যের টিম ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের (কমলাপুর) বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে থাকা যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। কথা বলার মূল উদ্দেশ্য ছিল, অভিযোগ খুঁজে বের করা। কিন্তু সেখানে যাত্রীদের কেউই এবার ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপনা নিয়ে কোনও অভিযোগ করেননি। বরং সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন। অনেকেই বলছেন, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনকে যেন আবার নতুন করে দেখলাম।
বিজ্ঞাপন
মূলত যাত্রীর নিজস্ব ভ্রমণ নিশ্চিত করতে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এবার ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি করা হয়েছে। এসব টিকিটধারী যাত্রীরা যেন নির্বিঘ্নে ট্রেনে চড়ে নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারেন তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কমলাপুর, বিমানবন্দর এবং জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনে। কারণ, এসব স্টেশন থেকে ঈদের সময় বিপুল সংখ্যক যাত্রী দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রেনে ভ্রমণ করেন।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ঢোকার আগে বাঁশের জিগজ্যাগ তৈরি করা হয়েছে। এখানে প্রথম দফায় যাত্রীর টিকিট ও এনআইডি মিলিয়ে দেখছেন ট্রাভেলিং টিকিট এক্সামিনাররা (টিটিই)। জিগজ্যাগ থেকে বের হওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় টিকিট কাউন্টারের সামনের অংশেও চেকিংয়ের আওতায় আসছেন যাত্রীরা। সর্বশেষ অর্থাৎ তৃতীয় দফায় প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের প্রধান গেটেও চেকিং করা হচ্ছে। চেকিংয়ের কাজে সহায়তা করছেন রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সদস্যরা। বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পরিচালনা করা হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালতও।
বগুড়ার বোনারপাড়াগামী যাত্রী মো. শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘ ৫ বছর পর আমি ট্রেনে সিটে বসে যাচ্ছি। আমি প্রতিবারই ট্রেনে গিয়েছি এবং টিকিটে সিটও পেয়েছি। কিন্তু ট্রেনে উঠে সিটে বসতে পারিনি। এবারই প্রথম ট্রেনে এসে আমার সিট পেয়েছি এবং আরামে বসতে পেরেছি। এবার কোনও অভিযোগ নেই আমার। তাদের সিস্টেম এবার খুবই সুন্দর।
শান্তাহারগামী যাত্রী শাহজাদা বলেন, আমি এসি চেয়ার কোচের টিকিট কিনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটি পাইনি, তবে নন এসি চেয়ারের টিকিট পেয়েছি। এখানে এসে দেখলাম চেকিং করা হচ্ছে এবং এটি ভালো মনে হয়েছে। কারণ, টিকিট ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
জামালপুরগামী জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী জুলফিকার আলী জিসান বলেন, আমার কাছে এবার ভালো লাগছে। ট্রেনে উঠতে কোনও মানুষের জটলা পাইনি, কারও কোনও তাড়াহুড়োও নেই। নিরাপত্তা বেশ ভালো দেখলাম। স্টেশন ব্যবস্থাপনাও অনেক ভালো লেগেছে।
শাহ হেলাল বলেন, কমলাপুর রেল স্টেশনে ট্রেনের টিকিট ও এনআইডি কার্ড ছাড়া কাউকে স্টেশনে ঢুকতে দিচ্ছে না স্টেশন কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন। টিকিট ছাড়া কেউ স্টেশনে ঢুকতে না পারায়, স্টেশন ও ট্রেনের পরিবেশ অনেকটা সুন্দর, ৩ স্তরে টিকিট চেকিং করা হচ্ছে। অথচ আগে ঈদের সময় ট্রেনের ভেতরে ও স্টেশনে মানুষের ভিড়ের কারণে দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়া যেতো না। সত্যিই এটি ভালো উদ্যোগ।
নাসিম কবির বলেন, আজ অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা হয়েছে। প্ল্যাটফর্ম ঢোকার আগে এনআইডি এবং টিকিট দুই বার চেক করেছে। প্ল্যাটফর্মে টিকিট ছাড়া কোনও মানুষ দেখিনি। ট্রেনে কোনও দাঁড়ানো লোক দেখিনি। সত্যিই দারুণ কমলাপুর স্টেশন দেখলাম। এমনটা সব সময়ই থাকুক, সেটিই চাই।
এ বিষয়ে ঢাকা বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সফিকুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, যাত্রী সাধারণের জন্য সুষ্ঠু, নিরাপদ ও আরমাদায়ক ভ্রমণের ব্যবস্থা করাই আমাদের উদ্দেশ্য। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। এখন মূল্যায়নের দায়িত্ব যাত্রীদের। যাত্রীরা যদি ভালো কিছু বলে থাকে সেটা শুধু রেলওয়েকে না, গোটা সরকারি ব্যবস্থাকে বলছে। এর জন্য যারা এটার সঙ্গে জড়িত, তারা সবাই ভাগীদার। আমাদের কাজ হলো যাত্রীদের নিরাপদে পৌঁছানো। আমরা সেটাই করছি।
তিনি আরও বলেন, একাধিক স্তরে আমাদের রেলওয়ে পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টিসি, টিটিইসহ সবাই দায়িত্ব পালন করছেন। স্টেশনে প্রবেশের শুরুতেই র্যাব, পুলিশ ও আরএনবির কন্ট্রোলরুম আছে। তারপরই টিটিইরা টিকিট ও এনআইডি চেক করছে। একাধিক স্তরের এ চেকিংয়ের ফলে আমরা বিনা টিকিটের যাত্রীদের প্রতিরোধ করতে পারছি। টিকিটধারী যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি।
এমএইচএন/এসএম