বনশ্রীতে পানি নেই তিন দিন
গত দুই সপ্তাহ ধরে রাজধানীসহ সারা দেশের তাপমাত্রার পারদ ঊর্ধ্বমুখী। অসহ্য গরমে জনজীবনে নাভিশ্বাস অবস্থা। এর মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার পানি সংকট দেখা দিয়েছে। একদিকে তীব্র গরম অন্যদিকে পানি সংকট, দুইয়ে মিলে চরম ভোগান্তিতে মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত তিন ধরে পানির তীব্র সংকট চলছে রাজধানীর বনশ্রীর ডি ব্লক, রামপুরা ডিআইটি প্রজেক্টসহ আশের বেশ কিছু এলাকায়। পানি সংকট নিরসনে বারবার ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে যোগাযোগ করেও সমাধান পাননি এলাকাবাসী।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অতিরিক্ত তাপপ্রবাহ, পানির স্তর নেমে যাওয়াসহ দুই একটি পাম্পে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ কারণে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে বনশ্রী, ডিআইটি প্রজেক্ট ছাড়াও বর্তমানে রাজধানীর আদাবর, শেখেরটেক, রায়ের বাজার, মেহেদীবাগ, মোহাম্মাদিয়া হাউজিং, মান্ডা, কুসুমবাগ এলাকার কিছু কিছু অংশে পানির সংকট তীব্রভাবে দেখা দিয়েছে। এসব এলাকায় পানির সমস্যা নিয়মিত হলেও রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ভাষানটেক, মাটিকাটা, উত্তরা, আফতাবনগর, বাড্ডা, ভাটারাসহ বেশ কিছু এলাকায় মাঝে মধ্যেই পানির সংকট দেখা দিচ্ছে।
গত তিন দিন ধরে একেবারেই পানি পাচ্ছেন না বনশ্রী ডি ব্লকের বাসিন্দারা। একদিকে তীব্র গরম অন্যদিকে রমজান মাসে পানির এমন সংকটে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।
আরও পড়ুন : এই গরমেও পানি নেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়
বনশ্রী ডি ব্লকের রেডিয়েন্ট কৃষ্ণচূড়া এলাকার বাসিন্দা এবং কলামিস্ট মীর আব্দুল আলীম এ বিষয়ে বলেন, বনশ্রী ডি ব্লকের রেডিয়েন্ট কৃষ্ণচূড়া (হাউজ-১,২ রোড-৮) থেকে আশেপাশের এলাকার গত তিন দিন ধরে পানি সরবরাহ বন্ধ। এ এলাকায় ২ হাজারের বেশি পরিবারের বসবাস। গত তিন দিন ধরে একটুও পানি পাইনি। খাওয়া দাওয়া এবং গোসলের পানি মিলছে না। স্থানীয়রা মিলে সংশ্লিষ্টদের কাছে বারবার অভিযোগ করেও কেউ সাড়া দিচ্ছে না।
একই এলাকার বাসিন্দা শারমিন আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পানি ছাড়া আমরা কীভাবে চলব? এত গরম, এর মধ্যে পানি নেই আমাদের এলাকায় তিন দিন ধরে। পানি ছাড়া কোনো কাজই করা যায় না। আমাদের এলাকার সবার গোসল বন্ধ, খাওয়ার জন্য বোতলের পানি কিনে আনতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।বাড়িওয়ালারা মিলে স্থানীয় ওয়াসার অফিসে গিয়ে অভিযোগ জানিয়ে এসেছে, তবুও কাজ হচ্ছে না।
আরও পড়ুন : ঢাকায় আশঙ্কাজনক হারে নামছে পানির স্তর, বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ
ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকার বাসিন্দা সাইদুর রহমান বলেন, পানি ছাড়া জীবন যাপন যে কতটা কষ্টের তা আমাদের এখন ফেস করতে হচ্ছে। তীব্র গরম সহ্য করতে না পেরে অন্য এলাকায় সহকর্মীদের বাসায় গিয়ে গোসল করে আসলাম। এভাবে কি পানি ছাড়া জীবন চলে? বারবার এমন সমস্যা হচ্ছে তারপরও ওয়াসা পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
সার্বিক বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার মডস জোন ৮ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ, ওভার হিটের কারণে অনেক জায়গায় পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। যে কারণে পাম্পগুলো পানি টানতে পারছে না। পাম্পের আশেপাশে বাসিন্দারা কিছুটা পানি পেলেও একটু দূরের বাসিন্দারা পানি পাচ্ছেন না। তবে সব এলাকায় এ এমন সমস্যা হচ্ছে না।
আরও পড়ুন : আশীর্বাদের তিস্তা এখন অভিশাপ
তিনি বলেন, যে এলাকার কথা বলছেন, সেই এলাকায় পাম্পের সংযোগ লাইনে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তবে আমাদের কাজ চলছে আজ রাত বা কালকের মধ্যে এ সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, একদিকে পানির স্তর নেমেছে, অন্যদিকে পানির চাহিদা বেড়েছে অনেক। ওভারহিটের কারণে প্রচুর পানি ব্যবহার হচ্ছে। একজন ২-৩ বার করে গোসল করছে। ফলে সব এলাকায় পানির ব্যবহার অনেক বেড়েছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার পানি শোধনাগার রয়েছে ৫টি। তবে সংস্থাটি পানি পাচ্ছে ৪টি শোধনাগার থেকে। চলতি বছরে উপরিতলের পানির উৎপাদন ৭০ শতাংশে উন্নীত করার কথা থাকলেও সেই লক্ষ্যপূরণ এখনও করতে পারেনি ঢাকা ওয়াসা। বর্তমানে উপরিতলের পানি পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩৫ শতাংশ। আর বাকি ৬৫ শতাংশ পানি ভূগর্ভস্থ থেকে সরবরাহ করছে ওয়াসা।
এএসএস/এসকেডি