১৮৩ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ৮ মেডিকেল টেকনোলজিস্টকে তলব করা হলেও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ডাকে কেউই সাড়া দেননি।

সোমবার ও মঙ্গলবার ধারাবাহিকভাবে বক্তব্য নেওয়ার জন্য হাজির হতে নোটিশ দেওয়া হলেও কেউই হাজির হননি। যদিও তাদের হাজির না হওয়ার কারণ কিংবা নতুন করে সময় চেয়ে আবেদন করেছেন কি না, এ বিষয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুদকের বিশেষ টিম অনুসন্ধানের শুরুতে বেশকিছু রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেছে। নতুন তথ্য দুদকের হাতে এসেছে। যা যাচাই-বাছাই করতেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তলব করা হয়েছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে ৮ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের ডাকা হয়েছিল। যদিও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। দুদক তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়েছে, না আসলে কী আর করার।

আরও পড়ুন : ১৮৩ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগে ঘুষ লেনদেন, ৮ জনকে তলব

আজ যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা ছিল তারা হলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো. ফিরোজ রেজা, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো. রাজিব হোসেন, মো. জাহাঙ্গীর আলম ও মো. রিপন মিয়া।

গতকাল আরও ৪ জনকে তলব করা হলেও তারা হাজির হননি। গতকাল যাদের হাজির হওয়ার কথা ছিল তারা হলেন,   ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো. জয়নাল আবেদীন, মোস্তাফিজুর রহমান, মাসুদ রানা ও শাকিল আহমেদ। তাদের আগামীকাল বুধবার জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে।

গত ৬ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশাসন বিভাগের পরিচালক বরাবর তলবি নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশে অভিযোগের বিষয়ে বলা হয়, করোনা আক্রান্ত রোগীদের জরুরি সেবা দানের জন্য ১২০০ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদের মধ্যে ১৮৩টি পদে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থের বিনিময়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সরাসরি স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের তীর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পরিষদের ঊর্ধ্বতন নেতাদের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, দেশের হাসপাতালগুলোয় দীর্ঘদিন ধরে মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের ঘাটতি বিদ্যমান। যে কারণে করোনার মহামারি মধ্যেই দেশে করোনা মহামারি শুরু হওয়ায় ল্যাবরেটরিগুলোর কার্যক্রম বাড়াতে হয়েছে। ফলে নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের ঘাটতি প্রকট আকার ধারণ করে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে চিকিৎসক ও নার্সের মতো টেকনোলজিস্ট নিয়োগের দাবি ওঠে। সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩ হাজার টেকনোলজিস্ট নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

যার ধারাবাহিকতায় করোনা আক্রান্তদের নমুনা পরীক্ষার আওতা বাড়াতে ১২০০ মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ ২৮১৭টি পদে নিয়োগের অনুমোদন চূড়ান্ত হয়। ২০২০ সালের শুরুতেই বিশেষ ব্যবস্থায় ১৮৩ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় তড়িঘড়ি এ নিয়োগ সম্পর্কিত কাজ শেষ করা হয়। পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে অধিদপ্তরের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও জড়িত। অযোগ্যদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স, অভিজ্ঞতাসহ অন্যান্য বিষয় শিথিল করা হয়। নিয়োগ বাণিজ্য বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভেরিফায়েড নয় এমন আইডি থেকে তথ্য চাওয়া হয়। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জনপ্রতি মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আর্থিক লেনদেনের অডিও রেকর্ড রয়েছে দুদকের হাতে। অডিওতে জনপ্রতি ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য রয়েছে।

আরএম/এসকেডি