শ্যামপুরের এডিসি আলাউদ্দিনের বাসায় গৃহকর্মীর রহস্যজনক মৃত্যু
রাজধানীর পল্টন থানার শান্তিনগরের স্কাই ভিউ পার্ক সিটিতে এক পুলিশ কর্মকর্তার বাসায় আগুনে পুড়ে গৃহকর্মীর মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। ঘটনাটিকে দুর্ঘটনা বলে দাবি করেছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। আর মেয়ের মৃত্যু নিয়ে যেন মুখে কুলুপ এঁটেছেন নিহত কিশোরীর বাবা। একাধিকবার জানতে চাইলেও বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি।
সোমবার(১৭ এপ্রিল) বিকাল পাঁচটায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ১৩ বছরের ওই কিশোরীর। সে শ্যামপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আলাউদ্দিনের বাসার গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করত।
বিজ্ঞাপন
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা.এস এম আইউব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শান্তিনগর থেকে দগ্ধ অবস্থায় এক কিশোরী আমাদের এখানে এসেছিল। গতকাল (সোমবার) বিকালে এসে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে মারা যায়। তার শরীরের ৮৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।
নিহত জান্নাতের প্রতিবেশী রহিমা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া এলাকায় আমার পাশের বাসায় জান্নাতরা ভাড়া থাকে। তার বাবা-মা অনেক গরিব। আমাকে একজন ঢাকায় পুলিশ অফিসারের বাসায় একটি কাজের মেয়ে লাগবে বলে জানায়। পরে আমি ওই মেয়ের সন্ধান দিলে তারা ঢাকায় পৌঁছানোর জন্য টাকা পাঠিয়ে দেয়। পরে তাকে ঢাকায় এই বাসায় কাজ করতে দেওয়া হয়। পরে আমরা খবর পেয়ে পরশুদিন ঢাকায় এসেছি।
মুঠোফোনে তিনি আরও বলেন, সাদা পোশাকে আমাদের আশেপাশে অনেক লোকজন আছে। আমরা এখনও ঢাকা মেডিক্যালের মর্গে যেতে পারিনি। আশেপাশেই আছি কিন্তু কোথায় আছি সেটা বলতে পারছি না।
নিহত কিশোরী জান্নাতের বাবা আবু বক্করের সঙ্গেও মুঠোফোনে কথা হয় ঢাকা পোস্টের এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, আমরা খবর পেয়ে ঢাকায় এসেছি। আমার মেয়ে শুধু আমাকে তিনবার আব্বু বলে ডাক দিয়েছিল, এরপর আমার আর কিছু মনে নাই।
আপনার মেয়ে তো ঢাকা মেডিক্যালের মর্গে আছে মরদেহ নিতে আসবেন না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি তো লেখাপড়া জানি না আমি ঢাকায় আছি। তবে কোথায় আছি সেটা বলতে পারছি না। আমার আশেপাশে সাদা পোশাকে অনেক লোক আছে।
আপনার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে নাকি দুর্ঘটনা, কি মনে হয়- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে রাখছি। এখন আশেপাশে অনেক মানুষ। বেশি কিছু বলতে পারছি না।
অন্যদিকে ওই গৃহকর্মীকে দগ্ধ অবস্থায় শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করেন মামুন নামে এক পুলিশ কনস্টেবল। ভর্তির খাতায় তার মোবাইল নাম্বার থাকলেও তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ঘটনার পর থেকে তিনি সবসময় সঙ্গে আছেন কিন্তু কোন কথা বলছেন না। ঢাকা মেডিক্যালের মর্গে মামুনের দেখা পাওয়া গেলেও তিনি সাংবাদিক দেখেই পালিয়ে যান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্যামপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আলাউদ্দিন বলেন, আমার বাসায় একটি ঘটনা ঘটেছিল। আনুমানিক দুপুর দুইটা আড়াইটার দিকে চুলায় গরম পানি করার সময় হঠাৎ গায়ে আগুন লেগে যায়। পরে আমি বাসায় এসে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠাই। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে মৃত্যু হয় তার।
গৃহকর্মীর মাথায় আঘাতের চিহ্ন নিয়ে তিনি বলেন, এই আঘাতের চিহ্ন অনেক আগের। আর আমার বাসায় এক মাস ২০ দিনের মতো কাজ করেছে সে।
তার পরিবারের কেউ ঢাকায় আসছে কি না- সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার বাবা ও নানি ঢাকায় এসেছে। হয়ত আশেপাশেই আছেন।
জান্নাতের সুরতহাল প্রতিবেদনকারী পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুইটি বলেন, আমি থানা থেকে খবর পেয়ে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে গিয়ে তার সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছি।
কার বাসায় ঘটনাটি ঘটেছে এবং কে তাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছে, জান্নাতের সুরতহাল প্রতিবেদনে বিষয়টি উল্লেখ নেই কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আর কিছুই বলতে পারছি না। বাকি বিষয়টি অন্য আর একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা দেখবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক বলেন, সুরতহাল প্রতিবেদন দেখে আমি পুলিশের উপ-পরিদর্শকের কাছে জানতে চেয়েছি- কেন তিনি গৃহকর্মী উল্লেখ করেননি এবং কার বাসায় ঘটনা ঘটেছে, কে তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে? কিন্তু তিনি এ বিষয়ে কিছুই বলেননি।
ওই চিকিৎসক আরও বলেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ভয়ে হয়তো তারা সঠিকভাবে সুরতহাল প্রতিবেদনটি তৈরি করেনি। তবে তার শরীর পুড়ে যাওয়ায় অন্য কোথাও আঘাতের চিহ্ন আছে কি না সে বিষয়টি দেখা যায়নি।
এদিকে মর্গের সামনে ওই গৃহকর্মীর বাবাকে দেখে কথা বলতে এগিয়ে যান সাংবাদিকরা। এসময় পুলিশ কনস্টেবল মামুন ওই কিশোরীর বাবাকে টেনেহিঁচড়ে সেখান থেকে নিয়ে যান।
এসএএ/এমজে