শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রথমবারের মতো রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে তিন দফা চেকিং শেষে যাত্রীদের প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। এতে অধিকাংশ যাত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে কিছু যাত্রী ঢুকতে না পেরে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন, শাসাচ্ছেন ট্রাভেলিং টিকিট এক্সামিনারকে (টিটিই)।

সোমবার (১৭ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, স্টেশনের প্রবেশ পথে রয়েছে বাঁশের তৈরি জিগজ্যাকের পাঁচটি গেট। প্রথমে সেখানে পাঁচ জন টিটিই যাত্রীদের টিকিট ও এনআইডি চেকিং করছেন। তাদের সহায়তা করছেন রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর (আএনবি) সদস্যরা। দ্বিতীয় চেকিং হচ্ছে টিকিট কাউন্টারের সামনের অংশে, সেখানে রয়েছে তিনটি গেট। সবশেষে মেইন গেটে প্রবেশ পথে সন্দেহভাজনদের তৃতীয়বার চেকিং করা হচ্ছে। পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) মেশিন ব্যবহার করে টিকিট চেকিং ও এনআইডি মিলিয়ে দেখার কাজটি অতি দ্রুত করছেন টিটিইরা। তাদের এই কাজে সর্বোচ্চ ১০-২০ সেকেন্ড সময় লাগছে। এমন কঠোরতার মধ্য দিয়ে যাত্রীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে প্ল্যাটফর্মে।

প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ কঠোর হওয়ায় টিকিট পাওয়া যাত্রীরা ব্যাপক সন্তোষ প্রকাশ করেছে। তবে যাদের টিকিটে গরমিল আছে তারা হয়েছেন নাখোশ। টিটিইরা এমন গরমিল থাকা টিকিটের যাত্রীদের ফেরত পাঠাচ্ছেন। রাগে তারা মন্ত্রীর পিএসকে কল করবেন বলেও শাসাচ্ছেন টিটিইদের।

সকাল পৌনে ৮টার দিকে প্রথম চেকিংয়ে একই পরিবারের চার আসনের যাত্রী আসেন। তবে যার নামে টিকিট, তিনি ওই চার জনের কেউ নন। এ কারণে টিটিইরা তাদের আটকে দেন। ওই যাত্রীরা টিটিইকে শাসান মন্ত্রীর পিএসকে কল করবেন বলে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পরিচয় দেওয়া সেই যাত্রী বলেন, আমার আইডি (রেলওয়ের সার্ভারে রেজিস্টার্ড আইডি) নষ্ট বলে ভাইয়ের আইডি দিয়ে টিকিট কেটেছি। আমি কেন এটা দিয়ে যেতে পারব না। টিকিট কাটা আছে যশোর পর্যন্ত, কিন্তু আমরা যাব টাঙ্গাইল। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে তিনি বলেন, মন্ত্রীর পিএসকে কল দেব।

এসময় তার সঙ্গে থাকা অন্যজন বলেন, এত কড়াকড়ি হলে চলবে। আস্তে আস্তে কড়াকড়ি করতে হবে।

টিটিই তাদের বলেন, এই চার আসনের কারও একজনের সঙ্গে যদি এনআইডি মিলত, তবুও যেতে দিতে পারতাম। কিন্তু আপনাদের কারও সঙ্গে আইডি মিলেনি। তাই আপনাদের যেতে দিতে পারব না। কারণ, অন্য কেউ যদি এই টিকিট ও এনআইডি শো করে তাকে যেতে দিতে বাধ্য আমি। তখন কি করব?

মহানগর প্রভাতী ট্রেনের যাত্রী হুমাইরা সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক কষ্টে অনলাইনে এবার টিকিট কাটতে পেরেছি। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছি। এবারের মতো চেকিং আরও আগে শুরু করা উচিত ছিল। এখন স্বাচ্ছন্দ্যে ট্রেনে চড়তে পারব।

তিনি আরও বলেন, আগে তো যে কেউ টিকিট ছাড়া ট্রেন পর্যন্ত চলে যেতে পারত। অনেক বিনা টিকিটের যাত্রী থাকত। তাদের ভিড়ে আমাদের আসন পর্যন্তই যেতে কষ্ট হতো। শুধু ঈদ না, বর্তমান চেকিং ব্যবস্থা সবসময়ই রাখা উচিত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন টিটিই ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রায় ৯৫ শতাংশ যাত্রীর টিকিটের সঙ্গে এনআইডির মিল আছে। ৫ শতাংশ যাদের মিল নেই, তাদের আমরা ফেরত পাঠাচ্ছি। আমাদেরকে এভাবেই নির্দেশনা দেওয়া আছে।

তিনি আরও বলেন, ট্রেনপ্রতি যে ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট ইস্যু করা হয়েছে, সেটি একেবারেই কম। টিকিট না পেয়ে অনেক যাত্রী ফেরত যাচ্ছেন। শর্ট ডিস্টেন্সের টিকিটের চাহিদা অনেক বেশি।

ঢাকা বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সফিকুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্টেশনে প্রবেশের জন্য একজন যাত্রীকে চার স্তরের চেকিং সম্পন্ন করতে হচ্ছে। যারা সত্যিকারের টিকিটের যাত্রী তাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। যারা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে টিকিট সংগ্রহ করেছেন, তারা হয়ত অসুবিধায় পড়েছেন।

তিনি আরও বলেন, গতকাল (রোববার) থেকেই যাত্রীর চাপ শুরু হয়েছে। আজও আছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও চাপ বাড়বে।

রোববার কমলাপুর রেলস্টেশন পরিদর্শন শেষে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, যারা টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন, তারাই শুধু যাত্রী। টিকিটবিহীন কেউ যেন জোর করে তথাকথিত ট্রেনের যাত্রী হতে না পারে, সবাই মিলে আমরা সেই চেষ্টা অব্যাহত রাখব।

/এমএইচএন/এসএসএইচ/