‘নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে আলাপ হয়নি’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। বিএনপিকে নির্বাচনে আনতেও যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাওয়া হয়নি।
রোববার (১৬ এপ্রিল) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বিজ্ঞাপন
মন্ত্রী মোমেন অতি সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান এবং সেখানে তার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
আজকের ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক মন্ত্রীর কাছে জানতে চান নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না। এর জবাবে মন্ত্রী বলেন, কোনো আলোচনা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তোমাদের দেশের আইনে নির্বাচন হবে। আমরা আশা করব, তোমরা নির্বাচনে একটা ম্যাজিক দেখাবে। যাতে আমরা দুনিয়ার লোকের কাছে বলতে পারি।
বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘না’। তিনি বলেন, সব দলের আন্তরিকতা না থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।
নির্বাচন নিয়ে সর্বিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। আমরাও চাই। এখানে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। আমি সহযোগিতা চেয়েছি। আমি বলেছি, সুষ্ঠু নির্বাচন সরকার একা করতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন একা করলে হবে না। সব দল ও মতের লোকের আন্তরিকতা থাকতে হবে। তোমরা (যুক্তরাষ্ট্র) এসব ব্যাপারে সাহায্য করো।
আরও পড়ুন : বিদেশিদের কাছে নালিশ করে লাভ হবে না : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তিনি বলেন, কেউ কেউ তাদের (যুক্তরাষ্ট্রকে) বলেছে, আমাদের বিরোধী দলের লোকজন মিটিং করতে পারে না, করতে গেলে তাদের জেলে নিয়ে যায় সরকার। আমি জানিয়েছি, আমরা তো রাজনৈতিক কারণে জেলে নিই না। কোনো অপরাধ করলে জেলে নিই। তাদের (বিরোধী দল) তো আমরা কোথাও আটকাই না।
তিনি বলেন, কেউ যদি রাস্তা বন্ধ করে দিতে চায়, তোমার দেশে (যুক্তরাষ্ট্রে) হলে তুমিও (ব্লিঙ্কেন) এলাউ করবে না। তারা (বিএনপি) মুক্তভাবে সব মিটিং করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে নির্বাচন নিয়ে প্রচুর বার্তা আসছে। এ ব্যাপারে সরকার বিরক্ত বা চাপ অনুভব করছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, না, আমরা খুব খুশি। আমরা নিজেরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করব। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) বলছে, ভালো। আমাদের চাঙা রাখছে। আমরা চাই সুষ্ঠু নির্বাচন হোক।
বিএনপি নির্বাচনে না এলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, কেন হবে না? দেশের মানুষ ভোট দিলে হবে না কেন? আমেরিকা একটা বড় দেশ, ওদের দেশে কত রাজনৈতিক দল আছে, সেগুলোর নাম শুনেছেন?
নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষক পাঠানো নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) যত পারুক পর্যবেক্ষক পাঠাক। কোনো অসুবিধা নেই। তাদের বলেছি, তোমাদের দেশের পর্যবেক্ষক নাও, আমরা এটা ওপেন করে রেখেছি।
এবারের যুক্তরাষ্ট্র সফর থেকে কী পেলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, স্পিরিট। আমরা একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করব। এটা আমাদেরও তাগিদ। তারাও সেটার তাগিদ দিচ্ছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ডিএসএ নিয়ে আমরা বলেছি, এখানে যদি কোনো দুর্বলতা থাকে আমরা দেখব। আইনের কোথাও দুর্বলতা থাকলে আমরা ঠিক করে ফেলব। সব দেশে এ ধরনের আইন আছে। কখনও কখনও প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে। সেজন্য আমরা রেকটিফাই করব।
মোমেন-ব্লিঙ্কেনের বৈঠক নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সুশীল সমাজের কথা বলার অধিকারে বিষয়টি স্থান পাওয়া নিয়ে মোমেন বলেন, আমি বলেছি, আমার দেশে ১২৫১টি দৈনিক বের হয়। তোমার দেশ এত বড়, সেখানে মাত্র ১২৭৯টা বের হয়। আমরা মোটামুটি তোমাদের কাছাকাছি আছি। বাংলাদেশ হলো সেই দেশ যারা-গণতন্ত্রের জন্য, ন্যায় বিচারের জন্য, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে, সংগ্রাম করেছে। সুতরাং আমাদের আর এটা নতুন করে শেখানোর প্রয়োজন নেই।
র্যাবের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা একটা প্রসেসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
এনআই/এসকেডি