সকালে চাপ, দুপুর গড়াতে সড়কে বাড়ছে যানজট
অন্য বছরের তুলনায় এবারের রমজানে রাজধানীর সড়কের যানজটের চিত্র তুলনামূলক ভালো বলে দাবি ট্রাফিক পুলিশের। তারা বলছেন, যানজটের ভোগান্তি কমিয়ে সড়কের শৃঙ্খলা ও যানবাহনের গতি সচল রাখতে এবার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে দুপুরের পর থেকে সড়কে দাঁড়াচ্ছেন ট্রাফিকসহ ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তারাও।
তবে আজ বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে রাজধানীর সড়কে সকাল থেকেই যানবাহনের বাড়তি চাপ, যা সময় গড়াতেই রূপ নিয়েছে যানজটে।
বিজ্ঞাপন
যাত্রী ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকালে সড়কে বাড়তি চাপ ছিল। দুপুর গড়াতেই সেটা যানজটে রূপ নিয়েছে। প্রতি সিগনালে বেশি সময় দাঁড়াতে হচ্ছে। মার্কেট, বাস টার্মিনাল ও রেলস্টেশনমুখী সড়কে চাপ চোখে পড়ার মতো। অতিরিক্ত গরম আবহাওয়ায় সড়কে চাপ বাড়াচ্ছে ভিআইপি প্রটোকলও।
ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ঈদে ঘরে ফেরা মানুষ টার্মিনালগামী সড়কে চাপ বাড়াচ্ছে। দিনে মার্কেটমুখী সড়কেও ভিড় বাড়ছে। অফিস টাইম সামলাতে না সামলাতেই মার্কেটকেন্দ্রিক চাপ তৈরি হচ্ছে। যে কারণে সড়কের শৃঙ্খলায় নিরবচ্ছিন্ন কাজ করতে হচ্ছে ট্রাফিক সদস্যদের। অন্যদিকে সকালের চাপ দুপুরে কোথাও কোথাও যানজটে রূপ নিচ্ছে। তার মধ্যে আজ সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে বাড়তি চাপ তো আছেই।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর আগারগাঁও, জাহাঙ্গীর গেট, মহাখালী, বিজয় সরণি, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, সিগনালগুলোতে বাড়তি চাপ। ৫ মিনিটের সিগনালে দাঁড়াতে হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ মিনিট। তার মধ্যে তেজগাঁও থেকে মগবাজার ফ্লাইওভারে ওঠার মুখে একটি গাড়ি নষ্ট হওয়ায় মুহূর্তেই চারদিকে যানজট লেগে যায়।
অন্যদিকে, মহাখালী ফ্লাইওভারের উপরের সড়ক ফাঁকা থাকলেও নিচের সড়কে আমতলীতে ইনকামিং সড়কে চাপ লেগেই আছে।
সেখানে কর্তব্যরত এক ট্রাফিক কর্মকর্তা বলেন, টার্মিনালকেন্দ্রিক ঝামেলা হচ্ছে। ঈদ আসন্ন। টার্মিনালের কার্যক্রম বাড়ছে। অনেকে বাস সড়কে পার্ক করছে, সেগুলো ক্লিয়ার করতে হচ্ছে। আজকের এই চাপে বিকেলে ব্যাপক যানজট তৈরির আশঙ্কা করছেন তিনি।
রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিনগর, কাকরাইল, নিউ মার্কেট ও খিলগাঁও এলাকায় সরেজমিন ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সকালে চাপ বেশি ছিল তবে দুপুরে সেরকম চাপ নেই।
মিনহাজ নামে এক সিএনজি চালক বলেন, প্রচন্ড গরম। এই গরমে বিজয় সরণিতে দাঁড়িয়ে থাকা খুবই মুশকিল। তার মধ্যে দীর্ঘসময় সিগনালে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। তেজগাঁও এসে তো আরও বিপাকে পড়েছি। আধা ঘণ্টার জন্য যেন চারদিক স্থবির হয়ে পড়েছিল। পরে শুনলাম সড়কে একটা গাড়ি নষ্ট হয়েছে। সেটা সরানোর পর সড়ক সচল হয়।
ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকালে অফিসগামী চাপ তো থাকেই। তবে আমাদের বিশেষ ব্যবস্থাপনা ও নজরদারির কারণে সড়ক সচল থাকে, কোথাও কোথাও হয়ত গতি কমে যায়। কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার, চাপটা থাকবে।
তিনি বলেন, মার্কেটকেন্দ্রিক চাপ আছে। মার্কেটমুখী সড়ক যেন গতিশীল থাকে সেজন্য আইজিপি ও কমিশনার মহোদয় মার্কেট ভিজিট করেছেন। বসুন্ধরাসহ তেজগাঁও এলাকার মার্কেটমুখী সড়কে বিশেষ নজর থাকছে।
এক ফুটওভার ব্রিজ বন্ধে নাকাল নিউমার্কেট সড়ক
প্রত্যক্ষদর্শী ও পথচারীদের বক্তব্যে উঠে এসেছে, নিউমার্কেট সড়কে বাড়তি চাপ ও যানবাহন চলাচলে ধীরগতি রয়েছে। নাজমুল হুদা নামে এক ব্যবসায়ী জানান, গাউছিয়া মার্কেট ঘেঁষা ফুটওভার ব্রিজে কেউ উঠতে পারছেন না। সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে নিচে পারাপারে ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। সড়কে যানজট বা গাড়ি চলাচলে স্থবিরতা আনছে।
যোগাযোগ করা হলে ট্রাফিক রমনা বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার (নিউমার্কেট জোন) শান্তা ইয়াছমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিউ মার্কেটগামী সড়কে সমস্যা নেই। গাড়ি চলছে, তবে গতি কম। আমরা চেষ্টা করছি স্বাভাবিক রাখতে। গতি কম থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, পথচারীর সংখ্যা এখানে বেশি। ক্রেতারা সড়কে হাঁটছেন, দাঁড়াচ্ছেন, কেনাকাটা করছেন, কেউ কেউ গাড়ি পার্ক করে মার্কেটে ঢুকে পড়ছেন।
ট্রাফিক রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জয়নুল আবেদীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গাউছিয়া মার্কেট পরিদর্শনের পর সেখানকার ফুটওভার ব্রিজটা ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে দুই পাশ থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে। ওই ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করে দিনে হাজার হাজার মানুষ পারাপার হতেন। এখন তারা রাস্তায় নেমে পারাপার হচ্ছেন। বুঝতেই পারছেন সড়কের অবস্থা কি হতে পারে।
জেইউ/এসএসএইচ/