‘উইঘুরদের রক্ষায় মুসলিম বিশ্বের জোরালো ভূমিকা প্রয়োজন’
ব্যারেন জনপদে গণহত্যাসহ উইঘুর মুসলমানদের ওপর চীন সরকারের চালানো নির্যাতনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ইসলামিক প্রগতিশীল জনতা ফ্রন্ট। উইঘুরদের বিষয়ে চীনের কার্যক্রমকে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন দাবি করে জাতিসংঘের অধীনে এসবের তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা। আলোচনা সভায় ওআইসি ও মুসলিম বিশ্বকে উইঘুরদের রক্ষায় জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান বক্তারা।
বুধবার (৫ এপ্রিল) বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অডিটোরিয়ামে ‘পূর্ব তুর্কিস্তানের ব্যারেনে শহীদদের স্মরণে’ আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে এ আহ্বান জানানো হয়। ১৯৯০ সালের ৫ এপ্রিল চীনের ব্যারেন শহরে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিদের ওপর চীন সরকার কর্তৃক গণহত্যার প্রতিবাদে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
ইসলামিক প্রগতিশীল জনতা ফ্রন্ট আয়োজিত আলোচনা সভায় লেখক, গবেষক, বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও বিভিন্ন ইসলামী দলের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য রাখেন।
সভায় লিখিত বক্তব্যে ইসলামিক প্রগতিশীল জনতা ফ্রন্টের আহ্বায়ক মাওলানা আতাউর রহমান আতীকি বলেন, চীন সরকার ১৯৯০ সালে কাশগরের কাছে ব্যারেন জনপদে যে গণহত্যা ও বর্বরতা চালিয়েছিল সে জন্য তাদের আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। ১৯৯০ এর ৫ এপ্রিলে চীনা কর্তৃপক্ষ ২০ হাজারের বেশি সৈন্য পাঠিয়ে ও আর্টিলারি, হেলিকপ্টার গানশিপ ও বিমান হামলা চালিয়ে পূর্ব তুর্কিস্তানের মুক্তিকামী মানুষদের ওপর ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা চালিয়ে ছিল। হাজার হাজার উইঘুর ও তুর্কি জনগণকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছিল। বিশ্ব আজও তার বিচার দেখতে পায়নি।
তিনি আরও বলেন, ব্যারেন আন্দোলনের পর চীন সরকার ৭ হাজার ৬০০‘র বেশি লোককে গ্রেফতার করে অনেককে দীর্ঘ মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়। অনেককে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। আমরা মনে করি চীনকে এ গণহত্যার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
পূর্ব তুর্কিস্তানের স্বাধীনতার দাবির প্রতি উইঘুরদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আমরা আহ্বান জানাবো চীন সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করুন এবং ব্যারেন বিদ্রোহে গণহত্যার সঙ্গে জড়িত চীনা সেনাবাহিনীর সদস্যদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের ব্যবস্থা করুন।
আলোচনা সভায় ওআইসি ও মুসলিম বিশ্বকে উইঘুরদের রক্ষায় জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান বক্তারা।
তারা বলেন, চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে বসবাসরত সংখ্যালঘু উইঘুরদের ওপর প্রতিনিয়ত নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। চীন সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে উইঘুরদের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। চীন যেভাবে উইঘুর মুসলিমদের উপর নির্যাতন করছে কিন্তু এতে কারো কোনো মাথা ব্যাথা নেই। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিকট আহবান উইঘুর নির্যাতন বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে চীনের ওপর কঠোর চাপ সৃষ্টি করে উইঘুরদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।
পবিত্র এ রমজানে উইঘুর মুসলিমরা রোজা রাখতে পারছেন না জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ ওঠার পর রোজা রাখাসহ বিভিন্ন ইবাদত বন্দেগিতে সময় পার করছেন বিশ্বের সব মুসল্লি। তবে রমজানের রোজা রাখাতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে চীনের মুসল্লিদের। তারা যেন রোজা রাখতে না পারেন সেজন্য চালানো হচ্ছে নজরদারিও।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বরাতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম রেডিও ফ্রি এশিয়া (আরএফএ) জানিয়েছে, বিশেষ করে উত্তরপূর্বাঞ্চলের জিনজিয়াংয়ের উইঘুর মুসমিল সম্পদ্রায়ের মানুষদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা যেন তাদের সন্তানদের রোজা রাখতে না দেন। অপরদিকে শিশুদের জেরা করা হচ্ছে— বাড়িতে তাদের বাবা-মা রোজা রাখছেন কিনা।
বিশ্ব উইঘুর কংগ্রেসের মুখপাত্র দিশাত রিসিত বলেছেন, ‘রমজানের সময়, জিনজিয়াংয়ের ১ হাজার ৮১১টি গ্রামে সার্বক্ষণিক নজরদারি চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ, যার মধ্যে বাড়িতে তল্লাশি চালানোর বিষয়টিও রয়েছে।’
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ঢাকা মহানগরীর আহ্বায়ক মাওলানা আবদুল কাইয়ুম সোবহানী, সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবু জাফর কাসেমি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র সহ সভাপতি মাওলানা শহিদুল ইসলাম আনসারী, আলেম মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম ফোরামের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা কাবিরুল ইসলাম, হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরীর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় ইমাম পরিষদের আহ্বায়ক মাওলানা আবদুল্লাহ ইয়াহইয়া।
আরও বক্তব্য রাখেন- নেজামে ইসলাম পার্টির সহ সভাপতি মুফতি জিয়াউল হক মজুমদার ও মহাসচিব মুফতি আবদুল কাইয়ুম নেজামী, খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব আজম খান, ইসলামী মুভমেন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খাইরুল আহসান, গুলিস্তান পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদের খতিব মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী, ইসলামী ঐক্যজোটের সহ সভাপতি জহুরুল ইসলাম, জনপ্রিয় তরুণ বক্তা মাওলানা মির্জা ইয়াসিন আরাফাত, খতমে নবুওয়ত আন্দোলনের আমির মুফতি আরিফ বিল্লাহ কাসেমী প্রমুখ।
এনটি