কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের দাম সমন্বয়ের পর চট্টগ্রাম কাস্টমসে খেজুরের খালাস শুরু হয়েছে। সোমবার (৩ এপ্রিল) থেকে মানভেদে উন্নত, মাঝারি ও সাধারণ এই তিন ক্যাটাগরিতে শুল্কায়ন করা হয়। আপাতত কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মেনে রমজানকে সামনে রেখে আমদানি করা খেজুর খালাস করা হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রমজানের পর দামের বিষয়ে পুনরায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে বলে জানান তারা।

গত বুধবার (২৯ মার্চ) থেকে শুল্কায়নে দাম বৃদ্ধিজনিত কারণে চট্টগ্রাম কাস্টমসে খেজুর খালাস বন্ধ থাকে। এরই মধ্যে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে ব্যবসায়ীরা। সবশেষ রোববার কাস্টমস কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনায় দাম সমন্বয় করলে সোমবার থেকে খালাস শুরু হয়।

কাস্টমসের শুল্কায়ন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে উন্নত মানের অর্থাৎ সৌদি আরব-মিশর থেকে আসা মরিয়ম, মেডজুল, আজোয়া খেজুরের মূল্য ধরা হয়েছে কেজিপ্রতি চার ডলার। আবার মাঝারি অর্থাৎ তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আসা খেজুরের মূল্য ধরা হয়েছে কেজিপ্রতি দুই ডলার। 

এছাড়া ইরাক থেকে আসা জাহিদিসহ সাধারণ মানের খেজুরের কেজিপ্রতি মূল্য ধরা হয়েছে এক ডলার। এর আগে কার্টুন আনা খেজুর প্রতিকেজি এক ডলার ও বস্তায় আনা খেজুর ৫০ সেন্টে শুল্কায়ন হতো। তবে খেজুরের আমদানি শুল্ক হার আড়াই কেজির কম ওজনের প্যাকেট ২৫ শতাংশ ও আড়াই কেজির বেশি ওজনের বস্তা বা কার্টুনে ১০ শতাংশ হারে বিদ্যমান রয়েছে।

কাস্টমসের শুল্কায়ন গ্রুপ-১ / (এ) এর রাজস্ব কর্মকর্তা (আরও) হারুন অর রশিদ বলেন, এনবিআরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খেজুরের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। সোমবার থেকে নতুন মূল্যে শুল্কায়ন হচ্ছে।

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, হঠাৎ খেজুরের দাম বৃদ্ধি ইচ্ছেমত বাড়ানোর সিদ্ধান্তে কয়েকদিন খেজুর খালাস করা হয়নি। রোববার কাস্টমস কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকের পর আপাতত সমাধান হয়েছে। নতুন মূল্যে রমজানকে সামনে রেখে আমদানি করা খেজুর খালাস করা হচ্ছে। কারণ এসব খেজুর খালাস না করলে বাজারে সংকট তৈরি হবে। তবে রমজানের পর এটা নিয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের দাবি হলো, উন্নতমানের খেজুরের দাম আরও বাড়ানো হোক। কমদামী খেজুরের মূল্য আরও কমানো হোক। না হয় ব্যবসা করা সম্ভব হবে না।

জানা গেছে, গত ২৫ মার্চ চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার ফলমন্ডি এলাকায় খেজুর আমদানিকারকদের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করেছে জেলা প্রশাসন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম ও প্রতীক দত্তের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় খেজুর আমদানিতে শুল্ক ফাঁকি এবং বেশি দামে বিক্রিসহ বিভিন্ন অনিয়ম চোখে পড়ে জেলা প্রশাসনের।

অভিযানে দেখা যায়, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে ৪০ হাজার ২৪ টন খেজুর আমদানি হয়েছে। এগুলোর গড়মূল্য ৮৯ টাকা ৩৬ পয়সা। কিন্তু ফলমন্ডির আড়তে বিভিন্ন জাতের খেজুর চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে কেজিপ্রতি আজওয়া ৭৫০ থেকে এক হাজার টাকা, মাবরুম এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা, মরিয়ম ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, দাবাস ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, জাহিদি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, মেডজুল এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা এবং আলজেরিয়া ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।

এসব অনিয়মের দায়ের তিন আমদানিকারককে ৯০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মূলত এ অভিযানের পর সংশ্লিষ্টদের টনক নড়ে এবং একপর্যায়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ খেজুরের মূল্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। এতে করে গত ২৯ মার্চ থেকে খেজুর খালাসে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।

এমআর/ওএফ