বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য (ভিসি) হিসেবে অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৪ মার্চ। মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার একেবারে শেষ প্রান্তে এসে তড়িঘড়ি করে একাধিক চিকিৎসক-কর্মচারীকে পদোন্নতি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

উপাচার্যের বিরুদ্ধে অর্থের লেনদেন ও দলীয় অনুগতদের সিন্ডিকেট সভার অনুমোদন ছাড়াই পদোন্নতি দেওয়ার অভিযোগ করেছে বিএসএমএমইউর একাধিক চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক চিকিৎসক-কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিন বছর আগে কনক কান্তি বড়ুয়া উপাচার্যের দায়িত্ব পান। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠে। দায়িত্বে আসার এক মাস পরই তিনি বিএসএমএমইউ’র মেডিকেল অফিসার নিয়োগকে কেন্দ্র করে আওয়ামীপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ‘স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ’ (স্বাচিপ) নেতাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন।

ওই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে বিএসএমএমইউতে মারামারি ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এমনকি তিনি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও হন। পরে ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া নিজ দলের অনুসারী (স্বাচিপ) কয়েকজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা করেন, যা এখনও চলমান রয়েছে।

বিএসএমএমইউ’র এক চিকিৎসক বলেন, একজন উপাচার্য হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই তিনি পদোন্নতি দিতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদন নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। বর্তমান উপাচার্য কোনো নিয়ম-নীতিকে পাত্তা না দিয়েই প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে পদোন্নতি দিতে ভাইভা নিচ্ছেন। এমনকি শনিবার (২০ মার্চ) ২০ থেকে ৩০ চিকিৎসকের ভাইভা নিতে যাচ্ছেন। চলতি মাসের শুরুতেই সিন্ডিকেট মিটিং হয়েছে। দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তিনি আর কোনো সিন্ডিকেট মিটিং পাচ্ছেন না। তারপরও তিনি সিন্ডিকেট মিটিংয়ের অনুমোদন ছাড়াই পদোন্নতি দিতে তোড়জোড় চালাচ্ছেন। এক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক চিকিৎসক বলেন, পদোন্নতির নীতিমালা না মেনে দলীয় ক্যাডার এবং অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। কয়েক মাস আগেও কারণ ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের নিয়মিত শিক্ষকদের বাদ দিয়ে ঢাকা মেডিকেলের একজন অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসককে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় মেডিসিন বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হয়।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী মেয়াদের শেষ এক মাসে উপাচার্য কোনো ধরনের নিয়োগ বা পদোন্নতি দিতে পারবেন না। নিয়োগ দিতে হলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সর্বসম্মতিতে পাস হতে হয়। কিন্তু বর্তমান উপাচার্য (কনক কান্তি বড়ুয়া) নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই গত কয়েকদিন ধরে দলীয় ক্যাডারদের নিয়োগ এবং পদোন্নতি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বিএসএমএমইউ’র অন্তত ৩০ জন শিক্ষকের পদোন্নতির সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। তাদের দলীয় ক্যাডার এবং অর্থের বিনিময়ে পদোন্নতি দেওয়া হবে বলেও অভিযোগ চিকিৎসকদের। বিষয়টি অনেকে স্বীকারও করেছেন।

এই নিয়মবহির্ভূত পদোন্নতির হিড়িকে বিএসএমএমইউ’র চিকিৎসা এবং শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম। পদোন্নতির বিষয়টি স্বীকার করলেও দলীয় ও অর্থ লেনদেনের কথা অস্বীকার করেছেন বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।

জানতে চাইলে ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, কোনো কিছুই নিয়মবহির্ভূত হচ্ছে না। পরীক্ষার মাধ্যমে আইন মেনে ২৬ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। আগামী ২১, ২২ ও ২৩ মার্চ পরীক্ষা হবে। এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।

অপরদিকে পদোন্নতির কথা শুনেছেন বলে জানান বিএসএমএমইউতে নতুন উপাচার্যের দায়িত্ব পেতে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটির চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগ ও কমিউনিটি অপথালমোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, পদোন্নতির বিষয়টি জেনেছি। তবে এ ব্যাপারে কেউ আমার সঙ্গে আলোচনা করেননি।

টিআই/এমএইচএস/এসএসএইচ