জলবায়ু ন্যায়বিচারে সাধারণ পরিষদে ঐতিহাসিক প্রস্তাব গ্রহণ
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের ক্ষেত্রে দায়ী রাষ্ট্রগুলোর আইনগত বাধ্যবাধকতার বিষয়ে পরামর্শমূলক মতামত প্রদানের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকে অনুরোধ করে একটি সর্বসম্মত প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
নিইউয়র্ক স্থানীয় সময় বুধবার (২৯ মার্চ) জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। কোর গ্রুপের পক্ষে রেজুল্যুশনটি সাধারণ পরিষদে উত্থাপন করেন ভানুয়াতুর প্রধানমন্ত্রী।
বিজ্ঞাপন
এই রেজুল্যুশনে মানবাধিকার আইনসহ বিদ্যমান আন্তর্জাতিক সকল আইন, স্বীকৃত নীতিমালার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট দায়ী দেশগুলোর আইনি বাধ্যবাধকতার উপর পরামর্শমূলক মতামত প্রদানের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকে অনুরোধ করা হয়।
জাতিসংঘের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন বলছে, বাংলাদেশসহ ১৭ সদস্যবিশিষ্ট কোর গ্রুপ দ্বারা উত্থাপিত এই প্রস্তাবটি জলবায়ু ন্যায়বিচার এবং ন্যায্যতার পক্ষে সমর্থনকারী দেশগুলোর জন্য একটি যুগান্তকারী অর্জন।
স্থায়ী মিশন আরও বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বা ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর সুরক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট আইনি পরিণতি সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকে এই রেজুল্যুশনে অনুরোধ করা হয়েছে।
সাধারণ পরিষদে আয়োজিত উচ্চ অধিবেশনে রেজুল্যুশনটি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব প্রদান করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ধ্বংসাত্মক ও অপরিবর্তনীয় হুমকির বিষয়ে স্পষ্ট সতর্কতা সত্ত্বেও মানবতার বেঁচে থাকার জন্য যে মাত্রায় বৈশ্বিক উদ্যোগ প্রয়োজন, তার ধারে কাছেও নেই বিশ্ব সম্প্রদায়।
এই রেজুল্যুশন ও মতামতের ফলে ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে দায়ী দেশগুলির আইনি বাধ্যবাধকতা, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অধিকার এবং জলবায়ু পরিবর্তন থেকে মানব জাতিকে রক্ষা করার জন্য মানব সভ্যতাকে আরও সম্যক ধারণা দিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন মাসুদ বিন মোমেন।
আদালতের পরামর্শমূলক মতামতের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, এই ধরনের পরামর্শমূলক মতামত জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় আরো সাহসী এবং শক্তিশালী ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করবে। রেজুল্যুশনটি সদস্য দেশগুলির পাশাপাশি জলবায়ু কর্মী এবং যুব সমাজসহ আন্তর্জাতিক সুশীল সংস্থাগুলোর কাছ থেকে অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছে।
ভানুয়াতুর আহ্বানে প্রতিষ্ঠিত কোর গ্রুপটি রেজ্যুলেশন খসড়া প্রণয়ন থেকে প্রস্তাব চূড়ান্তভাবে গ্রহণ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া জুড়ে অত্যন্ত সক্রিয় ছিল।
খসড়া রেজ্যুলেশনের উপর জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রের অংশগ্রহণে উন্মুক্ত এবং স্বচ্ছ পদ্ধতিতে একাধিকবার অনানুষ্ঠানিক সভা করেছে তারা। বাংলাদেশ এই কোর গ্রুপের সদস্য হিসেবে, খসড়া প্রণয়ন ও নেগোশিয়েশন প্রক্রিয়ার পাশাপাশি আউটরিচ প্রচেষ্টায় সক্রিয়ভাবে নিযুক্ত ছিল।
বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মুহিত বলেন, এটি জলবায়ু ন্যায়বিচারের জন্য একটি কালজয়ী মুহূর্ত। আমরা পুরো প্রক্রিয়াজুড়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অসীম আগ্রহ ও সম্পৃক্ততার জন্য কৃতজ্ঞ, যা জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় তাদের গভীর অঙ্গীকারের সাক্ষ্য দেয়।
রাষ্ট্রদূত বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের কাছ থেকে সমর্থন অর্জনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন বলে জানায় স্থায়ী মিশন।
এনআই/এমজে