করোনার মধ্যে বইমেলা হবে কি না শঙ্কা থাকলেও গতকাল (বৃহস্পতিবার) অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেলা শুরু হলেও পাঠক-দর্শনার্থীদের আনাগোনা কম। পুরোপুরি গুছিয়ে ওঠেনি স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলো। প্রত্যাশা অনুযায়ী বইও বিক্রি হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন প্রকাশকরা। 

শুক্রবার (১৯ মার্চ) বইমেলার দ্বিতীয় দিন। প্রথম সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় বেলা ১১টা থেকে মেলা শুরু হয়। প্রথম দিকে ফাঁকা থাকলেও বিকেল থেকে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। পুথিনিলয়, স্টুডেন্ট ওয়েজসহ কয়েকটি প্যাভিলিয়ন ও স্টলে এখনো কাজ চলছে। পাঠক-দর্শনার্থীরা নিজেদের মতো করেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন মেলাজুড়ে। সকালে একদমই ফাঁকা থাকলেও বিকেলের পর কিছুটা বাড়ে দর্শনার্থীর সংখ্যা।

মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশকরা বলছেন, প্রথম কয়েক দিন মানুষ ঘুরতেই আসে। কোন লেখকের কী বই নতুন এলো খোঁজ নেয়। আজ মেলার প্রথম ছুটির দিন হওয়ায় মানুষ পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছে। তাই বই বিক্রি কম। আরও কয়েক দিন এই অবস্থা থাকবে। মেলার সময় যত কমে আসবে বই বিক্রি তত বাড়বে। তাছাড়া গত কিছুদিন ধরে দেশে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তার কিছুটা প্রভাবও মেলায় পড়েছে।

মেলায় অংশগ্রহণকারী ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন খান কাজল ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেলার প্রথম কয়েক দিন বই বিক্রিও কম হয়। আজ মেলার প্রথম ছুটির দিন। আগামী শুক্রবার মেলার দ্বিতীয় ছুটির দিন আজকের তুলনায় বই বিক্রি বাড়বে। এভাবে এর পরের ছুটির দিন অর্থাৎ এরপরের শুক্রবারে আরও বেশি বিক্রি হবে। মেলার দিন যত যাবে বিক্রিও তত বাড়বে।

এদিকে মেলার পূর্বপ্রান্তের প্রায় সবগুলো বইয়ের স্টল ক্রেতা শূন্য দেখা যায়। তবে, অন্যধারার স্টলের সামনে বেশ কিছু তরুণ-তরুণীর দেখা মেলে। পুরো মেলায় তেমন জনসমাগম না থাকলেও এখানে লাইন ধরে লেখকের অটোগ্রাফসহ বই সংগ্রহ করছিলেন বইপ্রেমীরা। কথা বলে জানা গেল, তারা তরুণ লেখক সাদাত হোসাইনের নতুন উপন্যাস স্মৃতিগন্ধা কিনছেন। আবার লেখকের অটোগ্রাফও নিচ্ছেন। পাঠকদের কাছে পেয়ে লেখক নিজেও আনন্দিত।

লেখক সাদাত হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেলায় ঢোকার পর জনসমাগম কম দেখে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু স্টলে এসে বসার পরেই অন্যরকম অনুভূতি হল। একজন লেখক হিসেবে পাঠকের এমন সাড়া পাওয়া অনেক বড় আশীর্বাদ। এতে আরও ভালো কিছু লেখার অনুপ্রেরণা জাগে।

স্টুডেন্ট ওয়েজের দায়িত্বে থাকা দীপক বিশ্বাস বলেন, স্বত্বাধিকারী অসুস্থ থাকায় আমরা এখনো গুছিয়ে উঠতে পারিনি। কাজ চললেও কয়েকটি বই তুলছি। আশা করছি আজকের মধ্যে গোছানোর কাজ শেষ করতে পারব।

চারুলিপি প্রকাশনের প্রকাশক হুমায়ূন কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেলা তো মাত্র শুরু। বিক্রি এখনো খুব সামান্য। তবে দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রিও বাড়বে বলে আমি আশাবাদী।

শোভা প্রকাশের প্রকাশক মিজানুর রহমান বলেন, বইমেলায় এখনো পাঠক-দর্শনার্থী কম। তাই স্বাভাবিকভাবেই বিক্রি কম। সকালে বিক্রি খুব কম হলেও বিকেলে দর্শনার্থী বাড়ায় কিছুটা বিক্রি হচ্ছে। আশা করি কয়েক দিনের মধ্যে মেলা জমে ওঠবে আর বিক্রিও বাড়বে।

প্রকাশনী সংস্থা রাবেয়া বুকস স্টলের রাহাত বলেন, মেলার প্রথম দুই দিন যে রকম দেখলাম তাতে হতাশ হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। করোনা পরবর্তীতে মেলা নিয়ে যে প্রত্যাশা ছিল, সেটা এখন আর নেই। কারণ আশা ছিল, করোনার ক্ষতি কিছুটা হলেও মেলা থেকে পুষিয়ে নিতে পারব। কিন্তু গত দুই দিনে যে অবস্থা দেখলাম, তার পরিবর্তন না হলে কোনো প্রত্যাশাই থাকবে না।

বই বিক্রি কম হওয়ায় নিজেদের মধ্যে গল্প করেই সময় কাটাচ্ছেন বিভিন্ন স্টল ও প্যাভিলিয়নের বিক্রয়কর্মীরা। কাকলি প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী আব্দুর রহিম বলেন, বিক্রি তেমন নেই, তাই নিজেদের মতো করে সময় কাটাচ্ছি। প্রথম দিনের তুলনায় বিক্রি কিছুটা বেড়েছে।

অন্য প্রকাশনীর প্যাভিলিয়নের সামনে কথা হয় পুরান ঢাকা থেকে আসা আহসান হাবিবের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ ছুটির দিন ছেলেমেয়েদের নিয়ে মেলায় এসেছি। কিছু ছোটদের গল্পের বই নিয়েছি। আমার পছন্দ রাজনৈতিক বই। তেমন কোনো বই পছন্দ হয়নি। তাই কেনাও হয়নি।

আরিফ হোসেন নামে এক দর্শনার্থী জানান, বন্ধুরা একসঙ্গে মেলায় ঘুরতে এসেছি। মেলায় এখনো আমেজ লক্ষ্য করিনি, করোনার কারণে হয়তো এমন। এখনো বই কিনিনি, তবে কিনব।

এএইচআর/এইচআর/ওএফ