নদী রক্ষায় বাংলাদেশে একটা জাগরণ তৈরি হয়েছে
নদী রক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে একটা জাগরণ তৈরি হয়েছে। জনগণ যখন জেগে যায়, জনগণ যখন মনে করে নদী বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে, তখন নদী যারা দখল করেছে তাদের হাত থেকে দখলমুক্ত করা খুব কঠিন কাজ নয়। এটা ইতোমধ্যে আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি। জনগণেরও এখানে সম্পৃক্ততা ছিল, সমর্থন ছিল...
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমে উঠে আসেন জাতীয় রাজনীতিতে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনবার সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে দেশের নৌপথের উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা, নদী দখলমুক্তকরণসহ নৌপথ ঘিরে আগামীর পরিকল্পনা এবং সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আমানউল্লাহ আমান। প্রথম পর্বে থাকছে দেশের নৌপথ ও নৌপরিবহন সম্পর্কিত বিষয়।
ঢাকা পোস্ট : নির্বাচনী ইশতেহারে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ তৈরির ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি?
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : আমরা ইতোমধ্যে প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার নৌপথ তৈরি করে ফেলেছি। গত ফেব্রুয়ারির ২৭ তারিখে নতুন একটি রুট চালু করলাম। আরিচা ও কাজীর হাট রুট, এটা পাবনা জেলার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এভাবে আমরা জামালপুর থেকে সরিষাবাড়ি, জামালপুর থেকে গাইবান্ধার সাঘাটা— নতুন নতুন রুট তৈরি করছি। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত ড্রেজিং করে নতুন রুট তৈরি হচ্ছে। রূপপুর থেকে মংলা, রাজশাহী থেকে ধুলিয়ান, কুমিল্লা দিয়ে বিবিয়ানা হয়ে ত্রিপুরা পর্যন্ত নৌপথের কাজ চলছে।
আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ তৈরি করা। সেজন্য যে ধরনের ইক্যুইপমেন্ট (সরঞ্জাম) প্রয়োজন, ড্রেজারসহ জনবল; আমরা তা সংগ্রহ করছি, জনবল নিয়োগ দিচ্ছি। বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমাদের লক্ষ্য, বাংলাদেশে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ থাকতে হবে। সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।
পণ্য পরিবহন, যাত্রী পরিবহনে নৌপথটা সাশ্রয়ী ও আরামদায়ক। সেই জায়গা থেকে আমরা কাজ করছি। যেহেতু একটা হলিস্টিক ওয়েতে (সামগ্রিক পদ্ধতি) আমরা চলছি, আমরা মনে করি এটা সম্ভব।
ঢাকা পোস্ট : অর্থাৎ নদী রক্ষায় আপনার মন্ত্রণালয় নানা কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে। এটি অব্যাহত থাকবে কি না?
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : নদী রক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে একটা জাগরণ তৈরি হয়েছে। জনগণ যখন জেগে যায়, জনগণ যখন মনে করে নদী বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে, তখন নদী যারা দখল করেছে তাদের হাত থেকে দখলমুক্ত করা খুব কঠিন কাজ নয়। এটা ইতোমধ্যে আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি। জনগণেরও এখানে সম্পৃক্ততা ছিল, সমর্থন ছিল।
ঢাকা পোস্ট : ঢাকাকে ঘিরে বৃত্তাকার নৌপথের কথা আমরা শুনে আসছি। নৌপথটি দৃশ্যমান হবে কবে?
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : আপনি যদি ঢাকার বৃত্তাকার নৌপথ ভ্রমণ করতে চান, পারবেন। এই ওয়াটার ওয়ে (নৌপথ) তৈরি আছে। সেটা কীভাবে আরও বাণিজ্যিক করা যায় সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। তবে এখানে কিছুটা দূষণ আছে, দূষণমুক্ত করার চেষ্টা চলছে। এই নৌপথ মানুষের জন্য, যাত্রীদের জন্য কীভাবে আরও পরিবেশবান্ধব হয়, সেই জায়গায় কাজ চলছে। কাজগুলো সম্পন্ন হলে পরিবেশবান্ধব ও যাত্রীবান্ধব ওয়াটার ওয়ে নিশ্চিত হবে।
ঢাকা পোস্ট : বলা হচ্ছে, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কাজের অগ্রগতি নিম্নমুখী, কিছুটা ধীর। এর কোনো বিশেষ কারণ আছে কি না?
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শীর্ষ তিন/চারটি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আমরা একটি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ক্ষেত্রে আপনি যে ডেটার (তথ্য) কথা বলছেন, সেখানে ডেটা সাবমিটের ক্ষেত্রে কিছুটা দুর্বলতা ছিল। কাগজে আপনি যেটা দেখছেন বাস্তব চিত্রটা কিন্তু ভিন্ন। কারণ, মাতারবাড়ির ফাস্ট টার্মিনাল, সেটা আমরা অল্প সময়ের মধ্যে একনেকে পাস করেছি এবং টেন্ডার ডকুমেন্টের কনসালটেন্ট নিয়োগ দিয়েছি। পায়রা ফাস্ট টার্মিনালে নিয়োগ হচ্ছে। ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের জন্য এটা চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে, মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং আমরা শুরু করে দিয়েছি। মংলার আউটারবারের ড্রেজিং শেষ হয়ে গেছে। ইনারবারের ড্রেজিং শুরু হচ্ছে, ইতোমধ্যে মোবিলাইজেশন শুরু হয়ে গেছে। আমাদের মংলার যে আপগ্রেডেশন, সেটাও চলমান। আমাদের নদীবন্দরগুলোর যে কাজ সেগুলোও চলছে।
আমাদের হিসাব অনুযায়ী বাস্তবায়ন ভালো। খারাপ পর্যায়ে নেই, যেকোনো মন্ত্রণালয়ের চেয়ে আমাদের অবস্থান ভালো।
ঢাকা পোস্ট : কিছুদিন পরপর নৌপরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়। কেন এটা হচ্ছে, এ বিষয়ে আপনাদের কোনো উদ্যোগ আছে কি না?
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : এটা (শ্রমিকদের ধর্মঘট কর্মসূচি) থাকতে পারে। প্রথমদিকে কিছুটা ছিল। কিন্তু এখন আমাদের নৌযান শ্রমিক যারা আছেন, তারা বোঝেন যে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার, দেশরত্ন শেখ হাসিনার সরকার শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় সচেষ্ট। শ্রমিকদের যেকোনো চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার তৎপর। শুধু শ্রমিক নয়, সামগ্রিক বাংলাদেশের প্রত্যেকটি বিষয়ে বর্তমান সরকার কাজ করছে বলেই ‘লেস ডেভেলপমেন্ট কান্ট্রি’ থেকে এখন ‘ডেভেলপিং কান্ট্রি’র স্বীকৃতি পেয়েছে। জাতিসংঘে সুপারিশ হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে সামগ্রিক ও পরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে।
এইউএ/এমএআর/