চাকরিজীবীদের এনআইডি সংশোধনে লাগবে নিয়োগকারীর মতামত
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধন করতে হলে নিয়োগকারীর মতামত দিতে হবে। নিয়োগকারীর মতামত ছাড়া কোনও চাকরিজীবীর এনআইডি সংশোধনের আবেদন মঞ্জুর করা হবে না বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন এনআইডি অনুবিভাগ।
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চাকরি পাওয়ার পর অনেকের বেতন আটকে যায় জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সঙ্গে বয়সের মিল না থাকার কারণে। এছাড়া অন্যান্য তথ্যের গরমিলও দেখা যায় অনেকের ক্ষেত্রে। এই অবস্থায় তারা ধরনা দেন নির্বাচন কমিশনে (ইসি)। এতে পাওয়া যায় তথ্য গোপনের আলামত। এতে যেমন যোগ্যপ্রার্থী চাকরি থেকে বঞ্চিত হন, আবার আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হন সংশ্লিষ্টরা। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতামত ছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের এনআইডি সংশোধন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা, বিভাগের সঙ্গে বৈঠকের পর এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বৈঠকটি এনআইডি মহাপরিচালক একেএম হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত হয়।
সরকারি চাকরিতে নিয়োগের সময় এনআইডি আমলে না নেওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে।
এনআইডি মহাপরিচালক একেএম হুমায়ুন কবীর স্বাক্ষরিত বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/সংস্থা হতে জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং পরবর্তী সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তির অনেকে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য এনআইডি শাখায় আবেদন করেছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, নিয়োগলাভের পূর্বে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দেওয়া জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও তা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আমলে নেওয়া হয়নি বা নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি তা গোপন করেছেন।
এক্ষেত্রে চাকরি পাওয়ার পর বেতন নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রে লিপিবদ্ধ তথ্যাদির সঙ্গে নিয়োগপত্র/সার্ভিস বইয়ে লিপিবদ্ধ তথ্যের তারতম্য হওয়ার কারণে বেতন নির্ধারণ সম্ভব হয় না।
সরকারি চাকরির বয়সসীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পরও ভিন্ন ভিন্ন ডকুমেন্টে বয়স কম দেখিয়ে চাকরিতে আবেদনের সুযোগ পেলেও পরবর্তী সময়ে বেতন নির্ধারণ না হওয়ায় ওই সব ব্যক্তি আর্থিক ক্ষতিসহ মারাত্মক ভোগান্তি ও হয়রানির সম্মুখীন হন।
অন্যদিকে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যাদি আমলে না নিয়ে সরকারি দপ্তরে নিয়োগ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তির তথ্য-উপাত্ত বিকৃতি করাসহ নানা রকম অসদুপায় অবলম্বনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। ভোটার তথা পরিচয় নিবন্ধনকালে একটি জন্ম সনদ ব্যবহার করে। পরবর্তী সময়ে ভিন্ন আরেকটি জন্ম সনদ ব্যবহার করে চাকরি লাভ করে; চাকরি পাওয়ার পর জন্মতারিখ অনুসারে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করা হলে আবেদনকারীর পিতা/মাতার বয়সের সঙ্গে তার নিজের বয়সের অসামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হয়।
অনেক ক্ষেত্রে সহোদর ভাই-বোনের বয়সের ক্ষেত্রে কালক্রমিক ব্যাধি দেখা দেয়; বিশেষত চতুর্থ শ্রেণির চাকরির ক্ষেত্রে ব্যক্তির প্রকৃত শিক্ষাগত যোগ্যতা ও জন্ম তারিখ গোপন করে চাকরিতে যোগদানের ফলে যোগ্য ব্যক্তি চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়।
এসব আলোচনার পর সর্ব সম্মতিক্রমে দুটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
(ক) ‘জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যাদি আমলে নিয়ে চাকরিতে নিয়োগদান ও অন্যান্য সেবা প্রদান বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক ইতোপূর্বে জারিকৃত পত্রের ধারাবাহিকতায় পুনরায় নির্দেশনা দেওয়ার জন্য পত্র মারফত অনুরোধ জানানো;
(খ) সরকারি কর্মচারী নিয়োগদানের ক্ষেত্রে বয়স প্রমাণের ভিত্তি হিসেবে জন্ম সনদ অথবা এসএসসি সনদের পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্র বিবেচনায় নেওয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে পত্র মারফত অনুরোধ জানানো;
(গ) তথ্য গোপন করে চাকরি পাওয়ার পর জাতীয় পরিচয়পত্রের বিভিন্ন তথ্য সংশোধনের বিদ্যমান আবেদনগুলো নিস্পত্তির ক্ষেত্রে এনআইডি উইং থেকে পত্র প্রেরণের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/সংস্থার মতামত গ্রহণ করতে হবে। অতঃপর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, এতোদিন চাকরি নেওয়ার পর এনআইডি তথ্য মিল না থাকলে সার্ভিস বুকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংশোধন করে দেওয়া হতো। এই সিদ্ধান্তের ফলে যারা তথ্য গোপন করে চাকরি নিয়েছেন, তারা ফেঁসে যেতে পারেন। কেননা, কর্তৃপক্ষের মতামত কিংবা সুপারিশ ছাড়া আর সংশোধন করা হবে না।
এসআর/এসএম