শেখ হাসিনার ‘প্রেরণায়’ রাজনীতিতে নারীরা
• ক্ষমতাসীন দলে নারীদের উপস্থিতি ২৫ শতাংশের নিচে
• সভা, সমাবেশ, মিছিল-মিটিংয়ের অংশ নিচ্ছেন নারীরা
• শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপে রাজনীতিতে মেয়েরা
প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, জুডিশিয়ালের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বর্তমানে অবদান রাখছেন নারীরা। দেশের সর্বত্র পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও বাংলাদেশের নারীরা সুনাম অর্জন করেছেন। নারীদের শিক্ষায় বেগম রোকেয়া যেমন ভূমিকা রেখেছিলেন ঠিক তেমনি কর্মক্ষেত্র ও রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণে বিশেষ ভূমিকা রাখছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিজ্ঞাপন
অতীতের তুলনায় বর্তমানে রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ ব্যাপক বেড়েছে। সভা, সমাবেশ ও মিছিলে পুরুষদের সঙ্গে অংশ নিচ্ছেন নারীরাও। যেখানে রাজনৈতিক কর্মসূচি সেখানেই মিলছে নারীদের উপস্থিতি। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দেখে অনেকে যুক্ত হচ্ছেন রাজনীতিতে— এমনটি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেত্রী।
তাদের ভাষ্য মতে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশে উন্নয়নের জোয়ার শুরু হয়। নারীদের উন্নয়নের অংশীদার করতে সব ক্ষেত্রে তাদের প্রাধান্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের সব ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ দিচ্ছেন তিনি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নারীদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় তৃণমূল রাজনীতিতে তারা আরও বেশি সক্রিয় হচ্ছেন।
জানতে চাইলে কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সব ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করার সুযোগ দিচ্ছেন। নারীরা রাজনীতিতে যেভাবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন, কর্মক্ষেত্রেও তারা সেভাবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন। পুরুষ শাসিত সমাজে দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরের মধ্যে গত ১৪ বছরে নারীদের অধিকার সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং হচ্ছে।’
‘প্রধানমন্ত্রী আবার ক্ষমতায় এলে নারীর অধিকার আরও বেশি প্রতিষ্ঠিত হবে। সেটা শত ভাগ বলা যায়। একজন ছোট রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে এটা আমি বিশ্বাস করি।’
কৃষক লীগের এই নেত্রী বলেন, ‘কৃষক লীগ সাধারণত কৃষকদের করার কথা, কৃষকদরদীরা করবেন। একজন কৃষকদরদী হিসেবে ২০০৩ সাল থেকে কৃষক লীগের সঙ্গে জড়িত। আমি কৃষক লীগের সহ-সম্পাদক, আইন সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থেকে বর্তমানে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী আমাকে সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছেন। যেসব নারী কৃষক লীগে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তাদের আমি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়েছি। ইতোমধ্যে সাতক্ষীরা জেলা কৃষক লীগের সভাপতি হিসেবে একজন নারীকে দায়িত্ব দিয়েছি।’
চার কমিটির হিসাব অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতেও নারীর সংখ্যা বাড়ছে
জানা গেছে, মন্ত্রিপরিষদে ৪৮ সদস্যের মধ্যে পাঁচজন নারী। জাতীয় সংসদে সরাসরি নির্বাচিত সদস্য ২১ জন এবং সংরক্ষিত ৫০ জন নারী। এর বাইরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বর্তমান ৮১ সদস্যের কমিটিতে সভাপতিসহ ২০ জন নারী সদস্য রয়েছেন। যা শতকরা ২৪.৬৯ শতাংশ। তবে, দলটির সহযোগী সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, কৃষক লীগসহ হিসাব করলে সেটি বাড়বে। আওয়ামী লীগের ২০০৯-২০১২ কমিটির ৭৫ সদস্যের মধ্যে নারী ছিলেন ১১ জন, যা শতকরা ১৪.৬৭ শতাংশ। ২০১২-২০১৬ কমিটির ৭৫ সদস্যের মধ্যে নারী ছিলেন ১১ জন, যা শতকরা ১৪.৬৭ শতাংশ। ২০১৬-২০১৯ কমিটির ৭৮ সদস্যের মধ্যে নারী ছিলেন ১৬ জন, যার শতকরা ২০.০৫ শতাংশ। ২০১৯-২০২২ কমিটির ৮১ সদস্যের মধ্যে নারী ছিলেন ১৫ জন, যার শতকরা ১৮.৫১ শতাংশ। চার কমিটির হিসাব অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতেও নারীর সংখ্যা বাড়ছে।
মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান শিলা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘নারীরা বর্তমানে সফল হচ্ছে। তাদের সফলতার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করছেন। নারীরা আজ বিভিন্ন জায়গায় নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নিচ্ছেন। কেউ বিমান চালাচ্ছেন, কেউ সচিব হয়েছেন, কেউ আবার কূটনীতিক হয়েছেন। নারীরা আজ বুদ্ধিমত্তা দিয়ে পুরুষের পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছেন।’
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য ২০২০ সালের মধ্যে সর্বস্তরে ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণের যে বাধ্যবাধকতা ছিল, তা এখনও পূরণ করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। ক্ষমতাসীন দল থেকে শুরু করে বিরোধী দলেও একই অবস্থা
তিনি বলেন, ‘আগামীতে নারীরা আরও ব্যাপক হারে সফলতা অর্জন করবেন। প্রধানমন্ত্রী নারীদের জন্য কাজ করছেন। আমরা তার অনুপ্রেরণা নিয়ে রাজনীতি করছি। তার কাছ থেকে আমরা অনেক ভরসা পাচ্ছি। তিনি রোল মডেল হিসেবে বিশ্বে আমাদের দেশের নাম ফুটিয়ে তুলেছেন।’
‘রাজনীতি করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা থাকবেই। এটা পুরুষের ক্ষেত্রেও হয়, নারীদের ক্ষেত্রেও হয়। তার মধ্য দিয়ে সব বাধা পেরিয়ে আমাদের নারীরা রাজনীতিতে জায়গা করে নিচ্ছেন। অনেক নারীনেত্রী প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে নারী থাকার কারণে তাদের বিভিন্ন জায়গায় স্থান করে দিচ্ছেন। যেভাবে রাজনীতিতে নারীরা এগিয়ে আসছেন, আগামীতে এটার ব্যাপকতা বাড়বে।’
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য ২০২০ সালের মধ্যে সর্বস্তরে ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণের যে বাধ্যবাধকতা ছিল, তা এখনও পূরণ করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। ক্ষমতাসীন দল থেকে শুরু করে বিরোধী দলেও একই অবস্থা। সব দল নারীদের কোটা পূরণ করলে রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন নারীনেত্রীরা। তবে, দলীয় পদ-পদবিতে নারীদের সংখ্যা কম হলেও কর্মী বা সদস্যের দিক থেকে মোটেও কম নয় বলে মনে করছেন রাজনৈতিক নীতিনির্ধারকরা।
জানতে চাইলে যুব মহিলা লীগের সভাপতি আলেয়া সারওয়ার ডেইজি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘অতীতের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে নারীরা এখন অনেক এগিয়েছে। দেশের রাজনীতিতেও নারীরা সফল। তারা এখন তৃণমূল থেকে নির্বাচন করে, গ্রাম থেকে শহর— কোনো ক্ষেত্রে নারীরা পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীরা অনেক দূর এগিয়েছে। পুরুষ শাসিত সমাজে নারীরা আরও এগিয়ে যাবে। স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে এগিয়ে আসছেন স্মার্ট নারীরা। এখানে পুরুষদের মন-মানসিকতায় আরও পরিবর্তন প্রয়োজন।’
‘নারীদের এখনও প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়। একজন নারীকে সংসার করতে হচ্ছে, ছেলে-মেয়েকে মানুষ করতে হচ্ছে, পরিবারের সব কাজ করে তারপর রাজনীতি করতে হচ্ছে। একজন মায়ের পক্ষে রাজনীতি করা চাট্টিখানি কথা নয়। স্বামী-সন্তানকে সময় দিয়ে তারপর রাজনীতি করতে হয়। এটা সহজ নয়। অনেকেই নারীদের রাজনীতি করার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করেন। কিন্তু আমাদের নেত্রী আমাদের উৎসাহ দেন। তার কারণে অনেক নারী রাজনীতি করতে সাহস দেখাচ্ছেন।’
‘আমি যে রাজনীতিতে এসেছি, যুদ্ধ করলাম, কাজ করলাম— এটা কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুসরণ করেই। নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই। দেশের প্রত্যেকটা সেক্টরে নারীরা কাজ করছেন। পুলিশ, সেনা বাহিনী; রাজনীতি, সচিব থেকে শুরু করে এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে নারীরা কাজ করছেন না।’
‘আমাদের সময়ের তুলনায় এখন রাজনীতিতে নারীর সংখ্যা বাড়ছে। যেমন- আমার বাবা বলতেন, রাজনীতি করা যাবে না। আমার বাড়ি সিলেটে। আমাদের সময়ে বাড়ির বাইরে গিয়ে রাজনীতি করতে দেওয়া হতো না। কিন্তু আজ সিলেটে গিয়ে দেখেন, সেখানকার মেয়েদের চলাফেরা, কথাবার্তা থেকে শুরু করে রাজনীতির প্রতি যে উৎসাহ; অবিশ্বাস্য একটা বিষয়! ২০০২ সালে সিলেটে যখন যুব মহিলা লীগের প্রথম কমিটি গঠন করি তখন ১০ জন নারীকে বের করা অনেক কষ্টকর ছিল। এখন এক হাজার মেয়ে বের করা কোনো ব্যাপার না। এটাই পরিবর্তন। শুধু পরিবর্তন না, অকল্পনীয় পরিবর্তন। আমাদের নেত্রীর উৎসাহ এবং সাহসী পদক্ষেপ না থাকলে কোনো দিনও নারীরা বের হতেন না’— বলেন আলেয়া সারওয়ার।
এমএসআই/ওএফ