পবিত্র শবে বরাত আজ। নফল ইবাদতের পাশাপাশি হালুয়া-রুটি বিতরণসহ বিভিন্ন আয়োজনে রাতটিকে পালন করা হয়। এদিকে, শবে বরাত উপলক্ষে সকাল থেকেই রাজধানী পুরান ঢাকার বিভিন্ন গলিতে হরেক রকম হালুয়া-রুটির পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। দুপুর গড়িয়ে বিকেল পড়তেই কেনাকাটা শুরু করেছেন বাসিন্দারা। তারা বলছেন, শবে বরাতে হালুয়া-রুটি বিতরণের ধর্মীয় কোনো তাৎপর্য না থাকলেও এটি শত বছর ধরে সামাজিক রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিবেশীর সঙ্গে সামাজিক সম্পর্ক ও নিবিড় যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।

মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর পুরান ঢাকার ওয়ারী ও রায়সাহেব বাজার এলাকা ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।

জানা গেছে, এ দিনটিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন বেকারিতে তৈরি হয়েছে বাহারি নকশার পাউরুটি, সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের হালুয়া। হালুয়ার মধ্যে রয়েছে পেঁপে, চালকুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, ডাল, ময়দা, সুজি, নেশেস্তা গাজরসহ বিভিন্ন প্রকারের হালুয়া।

বিক্রেতারা জানান, দামভেদে একেক হালুয়ার একেক দাম। বুটের হালুয়া বিক্রি হচ্ছে ৫শ টাকা কেজি। গাজরের হালুয়া ৬শ টাকা ও আর নেশেস্তাসহ অন্যান্য হালুয়ার কেজি ৮শ টাকা থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নারিন্দা বোম্বে কনফেকশনারির স্বত্বাধিকারী হাজী সাইফুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, শবে বরাত উপলক্ষে প্রতিবছর বিভিন্ন রকমের রুটির চাহিদা থাকে ব্যাপক। আমাদের ফ্যাক্টরিতে আকার ও নকশাভেদে বিভিন্ন রকমের রুটি তৈরি হয়। এর মধ্যে এক থেকে পাঁচ কেজি ওজনের রুটিও হয়েছে। এছাড়া মাছের নকশা করা রুটিও বেশি বিক্রি হয়। প্রতিবছর শবে বরাতের দিন সকাল থেকেই বেচা-বিক্রি শুরু হয়। তবে এগুলো দুপুর এবং বিকেলে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়।

রায়সাহেব বাজার এলাকার ইউসুফ বেকারিতে দেখা যায়, রেগুলার রুটির কেজি ৪০০ টাকা, স্পেশাল রুটি বড় ৫২০ টাকা, ফিরনি ৪৫০ টাকা কেজি। এছাড়া সুজির হালুয়া ৫০০ টাকা, বুটের হালুয়া ৬০০ টাকা, গাজরের হালুয়া ৬২০ টাকা, মাস্কট হালুয়া ৬৫০ টাকায় কেজি বিক্রি করতে দেখা গেছে।

ফুটপাতে ভ্যানে করে অস্থায়ী রুটি বিক্রেতা জসিম উদ্দিন বলেন, শবে বরাতকে কেন্দ্র করেই রুটি হালুয়ার ব্যবসা আমাদের জমে উঠে। সকাল থেকেই বেচা-কেনা শুরু হলেও দুপুরের পরে ক্রেতার সংখ্যা বাড়তে থাকে। আমরা ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকা কেজিতে রুটি বিক্রি করি। তবে মধুবন রুটির কেজি ৪৬০ টাকা। আশা করি রাত পর্যন্ত বেচা-কেনা ভালোই হবে।

রাজধানীর ওয়ারীর বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, প্রতিবছর এদিনটি আমরা উৎসবের মতো করে পালন করি। ছোটবেলায় গ্রামে থাকাকালীন সময়ে এদিনে চালের রুটির সাথে হালুয়া নিয়ে মসজিদে যেতাম এবং সবাই মিলে নামাজের পরে সেগুলো বিতরণ করতাম। কিন্তু শহুরে জীবনে তো এটা কল্পনাও করা যায় না। তাই প্রতিবছর বিভিন্ন রকমের এসব রুটি হালুয়া দিয়েই সবাই মিলে শবে বরাত পালন করে থাকি আমরা।

পুরান ঢাকার আরেক বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, শবে বরাতে রুটি-হালুয়া বিতরণের ধর্মীয় কোনো তাৎপর্য নেই। তবে নামাজ রোজার পাশাপাশি ঘরে ভোজের আয়োজন এবং দরিদ্রদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়। এর মাধ্যমে প্রতিবেশীদের সঙ্গে আমাদের সামাজিক সম্পর্ক ও ভালোবাসার আদান-প্রদান ঘটে।

টিআই/এফকে