কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। চলতি বছরে ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে ট্রুডোর।

সোমবার (২৭ ফ্রেবুয়ারি) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন ও কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী হারজিত এস সজ্জন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ট্রুডোকে ঢাকায় আমন্ত্রণের তথ্য জানান মোমেন।

ড. মোমেন বলেন, আমরা বিশেষ করে দাওয়াত দিয়েছি ওনাদের প্রধানমন্ত্রীকে (জাস্টিন ট্রুডো)। ওনাকে দাওয়াত দিয়েছি বাংলাদেশে আসার আসার জন্য। আমরা বলেছি, এ বছর যদি আসতে পারে, সেপ্টেম্বরে জি-২০ সম্মেলনে তখন যদি ম্যানেজ হয়; এটা হবে প্লাস প্লাস।

কানাডার প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরের বিষয়ে বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী সজ্জন জানান, আমি প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেব।

রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমারকে চাপ দেবে কানাডা

আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে কানাডাও মিয়ানমারের প্রতি চাপ অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছেন দেশটির উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলাপ করেছি। এই সংকট কাটাতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে যাবে কানাডা। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের যাতে মিয়ানমার ফিরিয়ে নেয়, এজন্য আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে কানাডাও মিয়ানমারের প্রতি চাপ অব্যাহত রাখবে।

মন্ত্রী হারজিত বলেন, বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানাই। এই সংকট কাটাতে কানাডা বাংলাদেশকে আরও তহবিল দিয়ে সহযোগিতা করবে এবং সহায়তা অব্যাহত রাখবে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে দীর্ঘ সময় আলাপ হয়েছে জানিয়ে মোমেন জানান, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলাপ হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের তারা আরো অতিরিক্ত তহবিল দেওয়ার কথা বলেছে। তারা ভাসানচর প্রকল্পে সহায়তা করবে বলেছে। আমরা আরো কিছু প্রস্তাব করেছি, কানাডা কীভাবে আরো বেশি করে সাহায্য করতে পারে।

আলাপ হয়েছে নূর চৌধুরীকে ফেরানো নিয়েও

বৈঠকে কানাডায় লুকিয়ে থাকা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনী নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কানাডার মন্ত্রী বলেন, নূর চৌধুরীকে ফেরত দেওয়ার বিষয়টি কানাডার আদালতে প্রক্রিয়াধীন। আদালতের বিষয় নিয়ে আমরা রাজনৈতিক ব্যক্তিরা কোনো মন্তব্য করি না। তবে এটা বলতে পারি যে, বিষয়টি সঠিক প্রক্রিয়ায় চলছে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা নূর চৌধুরী সম্পর্কে বলেছি। এটা একটা লিগ্যাল প্রসেস (প্রক্রিয়া)। তারা বলতে পারেন। কিন্তু তাদের খুব একটা সঠিক উত্তর তিনি বলতে পারবেন না।

অন্য যে বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ হয়েছে

বৈঠকে একাধিক ইস্যু নিয়ে আলাপ হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে আরো বাড়ানো যায় সে বিষয়ে আলাপ করেছি। কৃষি খাতের গবেষণা এবং উদ্ভাবন নিয়ে তাদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। আমাদের ছাত্ররা কানাডায় পড়াশোনা করতে গেলে ভিসা জটিলতার মুখোমুখি হয় এই ভিসার জটিলতা আরো সহজ করার জন্য তাদের সঙ্গে আলাপ করেছি।

মোমেন বলেন, ২০২৬ সালের পর বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উত্তীর্ণ হবে, তাই তাদেরকে বলেছি; এলডিসির পর আগামী ২০২৯ সাল পর্যন্ত কানাডা যাতে বাংলাদেশকে ব্যবসা-বাণিজ্য খাতে জিএসপি সুবিধা দেয়। তারা এতে মোটামুটি একমত পোষণ করেছে। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তাদের বৈঠক হবে।

তথ্যপ্রযুক্তি খাত নিয়ে আলাপ হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এই ক্ষেত্রে আমাদের ফ্রিল্যান্সারদের কিভাবে সহযোগিতা করা যায়, এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।

কানাডার মন্ত্রী সজ্জন তার বাংলাদেশ সফরে ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যুতে দেশটির গুরত্বের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমার এ সফরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল। কানাডার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল নিয়ে আমাদের দুই পক্ষের মধ্যে অনেক কিছু করার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চাই।

জলবায়ু ইস্যুতে আগামী বছর কানাডা বাংলাদেশকে ১০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে সহযোগিতা করবে বলে জানান হারজিত। তিনি জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ যে ক্ষতির স্বীকার হচ্ছে সে বিষয়ে কানাডা বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে। এই ইস্যুতে আগামী বছর কানাডা বাংলাদেশকে ১০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে সহযোগিতা করবে।

সামনের দিনগুলোতেও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার বার্তা দিয়েছেন কানাডার উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী।

এনআই/এমএ