দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বাজারের নিয়মিত চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাল, ডাল, তেল, শাক-সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর দামের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে আগে থেকেই বেশি থাকা গরুর মাংসের দাম ‘মন্দের ভালো’ হয়ে স্থিতিশীল ছিল। তবে এ সপ্তাহে সেই গরুর মাংসের দামও বেড়েছে, সেইসাথে বেড়েছে ব্রয়লার, লেয়ার ও দেশি মুরগির দাম।  

বাজারে গরুর মাংস কিনতে আসা এক নারী সে কারণে বললেন, বড়লোকরাই মাংস খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে, সেখানে আমাদের মতো গরিবরা তো কিছুই না।

শুক্রবার রাজধানীর বাড্ডা এলাকার একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে  বাজারদর নিয়ে ক্রেতাদের অসন্তুষ্টি থাকলেও বিক্রেতারা বলছেন, তারা পরিস্থিতির শিকার।  

আরও পড়ুন : সবজিতে হাত পুড়ছে মধ্যবিত্তের

গরুর মাংসের কিনতে আসা নাসিমা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এত দামের মাংস কি আর নিজেরা খাওয়া যায়? বাসায় মেহমান এসেছে, তাই এক কেজি নিতে এসেছি। তিনি বলেন, আগে যেখানে প্রতি সপ্তাহেই মাংস খাওয়া হতো এখন একমাসেও নিয়মিত হয় না। আগে যখনই মাংস নিয়েছি দুই কেজি করে, এখন এক কেজিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়।

নাসিমা আক্তার আরও বলেন, বাজারে এখন সবকিছুরই দাম বেশি। আগে মুরগির দাম একটু কম ছিল, কিন্তু এখন দেখলাম আবারও বেড়ে গেছে। মাছের দামও বাড়তি। আমাদের দেখার আসলে কেউ নেই।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির যাঁতাকলে শুধু নাসিমা আক্তারই নয়, নিম্ন মধ্যবিত্ত প্রায় প্রতিটি পরিবারই পিষ্ট। 

বাড্ডা এলাকার ডিআইটি প্রজেক্ট বাজারের গরুর মাংস বিক্রেতা নাঈম হাসান জানান তিনি গরুর মাংস বিক্রি করছেন ৭৫০ টাকা কেজি দরে। নাঈমের ভাষ্য মতে, এরপরও তিনি লাভের মুখ দেখতে পারছেন না। তিনি বলেন, আগে প্রতি সপ্তাহে দুইটা গরু জবাই করতাম, এখন একটি করছি। গরুর দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের বাধ্য হয়েই মাংসের দাম বাড়াতে হয়েছে। বাজারে গরুর খাবারের দাম বেশি। সেই সাথে যুক্ত হয় পরিবহন খরচ, এটাও অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি।

নাঈম হাসানের মতে সামনে যদি খাবারের দাম কমে, তাহলে গরুর মাংসের দামটা কমতে পারে। আর গরুর দাম কমলেই মাংসের দাম কমে আসবে। এছাড়া আমাদের কিছুই করার নেই।

বাড্ডা মাছবাজার সংলগ্ন গরুর মাংস বিক্রেতা মো. মনির হোসেন মাংস বিক্রি করছেন ৭২০ টাকা কেজি দরে। তিনি বলেন, আমি সব সময় অন্যদের তুলনায় কিছুটা কমে বিক্রি করার চেষ্টা করি। এখন অন্যান্য জায়গায় ৭৫০ করে বিক্রি হলেও আমার এখানে ৭২০ টাকা। এর আগে দীর্ঘদিন ৭০০ টাকায় মাংস বিক্রি করেছি, তখন অন্যরা ৭২০ টাকা করে বিক্রি করেছে। এখন দামটা অনেকটা বাধ্য হয়েই বাড়িয়েছি।

তিনি বলেন, দাম বেশি হওয়ায় গরুর মাংসের ক্রেতা অনেক কমে গেছে। তারপরও অন্যদের তুলনায় দাম কম হওয়ায় আমিই মনে হয় এই এলাকায় বেশি বিক্রি করি।

ডিআইটি প্রজেক্ট বাজারের মুরগি বিক্রেতা ওয়াসিম মিয়া জানান তিনি ব্রয়লার মুরগি (খুচরা) কেজিপ্রতি বিক্রি করছেন ২২০ টাকা করে। তবে পাইকারি বিক্রি করছেন ২০০-২১০ টাকা কেজি। দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাজারে সবকিছুর দামই বেড়েছে, সে হিসেবে মুরগির দামও বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। মুরগির খাবারের দাম বেশি, পরিবহন খরচ বেশি, সেগুলোর দাম কমলে মুরগির দাম কমে আসবে।

ওয়াসিম আরও বলেন, সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা, যা গতমাসেও ছিল ২৬০ টাকা কেজি। হঠাৎ করেই দামটা বেড়ে গেছে। আমাদের তো কিছু করার নাই। দাম বেশি থাকায় অনেকেই দোকানে এসে ফিরে যায়। আমরাও এখান থেকে নিয়ে খাই না।

এদিকে মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাতল মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়। এছাড়াও শিং মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, পাঙাশ ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, কৈ ২৬০ টাকা। 

আরও পড়ুন : রোজার আগে খরচ বাড়াবে মাছ

এছাড়াও রুই মাছ ৩২০ টাকা, বোয়াল ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, টেংরা ছোটগুলো ৫০০ আর বড় ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, রুই ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা, চিংড়ি ৬০০ এবং গলদা চিংড়ি ৭০০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।

মাছ বিক্রেতা ফারুক মিয়া বলেন, মাছের বাজার খুব বেশি বাড়েনি, আগের মতোই। বাজারে সবকিছুরই দাম বাড়তি, মানুষ এখন দিশেহারা। আমাদেরও বেচাকেনার অবস্থা খারাপ। দাম কম থাকলে বিক্রি বেশি হয়, কম থাকলে কম বিক্রি হয়।

টিআই/এনএফ