দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আলোচিত কর্মকর্তা ও চাকরিচ্যুত উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনের করা একটি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। এতে সাবেক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলামের ছেলে মুজিবুর রহমানসহ পাঁচজনকে অব্যাহতি দিতে আবেদন জানানো হয়।

বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুদক প্রধান কার্যালয়ের কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হকের সই করা একটি চিঠি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে পৌঁছায়। গত ৯ ফেব্রুয়ারি চিঠিতে সই করেছিলেন তিনি। চিঠিটি চিঠিটি ইস্যু হয় ১৩ ফেব্রুয়ারি।

ওই চিঠিতে বলা হয়, তদন্ত কর্মকর্তার দাখিল করা সাক্ষ্য-স্মারক ও অন্য কাগজপত্র পর্যালোচনায় উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় দুদক আইন–২০০৪–এর ৩২ ধারা এবং দুদক কমিশন বিধিমালা ২০০৭–এর বিধি ১৫ উপবিধি ১–এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের অনুমোদন দেওয়া হলো। 

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস এম দিদার উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেছেন, চূড়ান্ত প্রতিবেদন সত্য এর মানে হচ্ছে- অপরাধ সংগঠিত হয়েছে। কিন্তু কার দ্বারা সংগঠিত হয়েছে এটার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। অথবা আসামিদের বিষয়ে কোনো তথ্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। এ ক্ষেত্রে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রতিবেদন সত্য দিয়ে থাকেন।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকারি নির্দেশনায় আবাসিক খাতে নতুন করে গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ রয়েছে। এই আদেশ অমান্য করে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) মন্ত্রিপুত্র মুজিবুর রহমানকে ২২টি অবৈধ সংযোগ দেয়। ২০১৭ সালের ২ মার্চ থেকে ২০১৮ সালের ২ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে এসব সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে ২০২১ সালের ১০ জুন দুদকের চাকরিচ্যুত ও তৎকালীন চট্টগ্রামের উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন মামলাটি দায়ের করেছিলেন। মামলা দায়ের তিন দিন পর কেজিডিসিএল কর্মকর্তারা অবৈধ ২২টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

মন্ত্রিপুত্র মুজিবুর রহমান ছাড়াও এ মামলার আসামিরা হলেন- কেজিডিসিএলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং ও সার্ভিসেস) মো. সারওয়ার হোসেন, সাবেক দক্ষিণ জোনের টেকনিশিয়ান (সার্ভেয়ার) মো. দিদারুল আলম, সাবেক মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) মোহাম্মদ আলী চৌধুরী ও সাবেক ব্যবস্থাপক মজিবুর রহমান। তাদের মধ্যে সাবেক মহাব্যবস্থাপক মো. সারওয়ার হোসেন, টেকনিশিয়ান দিদারুল আলম ও সাবেক ব্যবস্থাপক মজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে তারা জামিনে মুক্ত হন। তবে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে পাঁচজনের সবাইকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক মো. আতিকুল আলম বলেন, তদন্ত অনুযায়ী কমিশনে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, দুদক সাধারণত অনুসন্ধান করে মামলা দায়ের করে। প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় মামলাটি দায়ের হয়েছিল। এ ধরনের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ায় দুদকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।

এমআর/ওএফ