জালিয়াতির মাধ্যমে রপ্তানি : ৭ কনটেইনার পণ্য জব্দ
জাল দলিলের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির অভিযোগে রাজধানীর দক্ষিণখান থানার মোল্লারটেক এলাকায় অবস্থিত সাবিহা সাইকি ফ্যাশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ৭ কনটেইনার পণ্য জব্দ করেছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। ৯টি চালানে পণ্যের পরিমাণ ১১৮ টন এবং ঘোষিত মূল্য ৩ কোটি ৪২ হাজার ৯২৫ টাকা। তবে পণ্যের নমুনা দেখে প্রকৃত বিনিময়মূল্য বেশি হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ঘটনা তদন্তে ইতোমধ্যে ৮ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর জানায়, সাবিহা সাইকি ফ্যাশন দীর্ঘদিন পণ্য রপ্তানি করছে কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে না, এমন অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে কাস্টমস গোয়েন্দা। ৩১ জানুয়ারি একটি গোয়েন্দা দল চট্টগ্রাম নগরের উত্তর পতেঙ্গা কাটগড় এলাকায় সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড (ওসিএল) ডিপোতে অভিযান পরিচালনা করে। এদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত অভিযানে জালিয়াতির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় ১৫টি বিল অব এক্সপোর্টের রপ্তানি কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করা হয়।
বিজ্ঞাপন
এরপর এসব বিল অব এক্সপোর্টের রপ্তানি সংক্রান্ত দলিলাদি যাচাই করার জন্য অগ্রণী ব্যাংকে চিঠি পাঠানো হয়। ২ ফেব্রুয়ারি ব্যাংক জানায় সাবিহা সাইকি ফ্যাশন তাদের কোনো গ্রাহক নন এবং বিল অব এক্সপোর্টগুলো অন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের নামে ইস্যু করা হয়েছিল। এতে প্রমাণিত হয় জাল দলিলের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে এবং হচ্ছিল। তাই পণ্য চালানগুলোর বিপরীতে কোনো বৈদেশিক মুদ্রা বৈধ পন্থায় দেশে আসার সুযোগ নেই বিধায় এক্ষেত্রে মানিলন্ডারিং সংঘটিত হয়েছে।
এ বিষয়ে রপ্তানিকারকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ পণ্য চালানগুলোর সঙ্গে তিনি সংশ্লিষ্ট নন এবং এ বিষয়ে তিনি উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি জিডি করেছেন।
কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আরও জানান, পণ্য চালানগুলোর কায়িক পরীক্ষায় সহযোগিতা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো সহযোগিতা করেননি। তবে কায়িক পরীক্ষার সময় ১৫টির মধ্যে ৯টি চালান ডিপোতে পাওয়া যায়। চালানগুলোতে টি-শার্ট এবং লেডিস ড্রেস রপ্তানির কথা থাকলেও কায়িক পরীক্ষায় বেবি ড্রেস, জিন্স প্যান্ট, শার্ট, লেগিন্স, শালসহ ঘোষণা ছাড়াও বিভিন্ন পণ্য পাওয়া যায়।
কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শাকিল খন্দকার বলেন, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে এই রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ৯৪টি চালানের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৮৫টি চালানে ৮৮২ টন পণ্য রপ্তানি হয়ে গেছে। এসবের ঘোষিত মূল্য ২২ কোটি ৬ লাখ ৩৬ হাজার ১৯৪ টাকা। ৯টি চালানে পণ্যের পরিমাণ ১১৮ টন এবং ঘোষিত মূল্য ৩ কোটি ৪২ হাজার ৯২৫ টাকা। তবে জব্দ করা পণ্যের নমুনা দেখে প্রকৃত বিনিময়মূল্য বেশি হবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সবগুলো রপ্তানি চালানের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এছাড়াও অন্যান্য রপ্তানিকারকের বিষয়ে গোপন সংবাদ থাকায় সেগুলোর বিষয়েও তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সার্বিক অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের যুগ্ম-পরিচালক মো. সাইফুর রহমানকে আহ্বায়ক করে ৮ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এমআর/এসকেডি