গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেছেন, রাজনীতি মানেই অর্থ বিত্তশালী আর গাড়ি-বাড়ির মালিক হওয়ার প্রতিযোগিতা। রাজনীতি আজ লুটেরাদের হাতে। অর্থনীতি সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি। প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে চাটুকাররা ফায়দা লুটছে এবং চেষ্টা করছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর নীতি-নৈতিকতা আর আদর্শের সেই আওয়ামী লীগ নেই।

রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।

সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এক বক্তব্যের জের ধরে মোকাব্বির খান বলেন, শক্তিশালী আর দুর্বল যাই বলেন না কেন, বর্তমানে এই সংসদে আমিই একমাত্র সত্যিকারের বিরোধী দলের সদস্য। এর বাইরে যারা আছেন তারা আসলে সবাই মহাজোটের শরিক দল। এরা অনেকেই আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন এবং ২০১৮ সালেও মন্ত্রিসভায় যাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন।

গত ৯ জানুয়ারি সংসদে সম্পূরক প্রশ্নের প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের একাংশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সঠিক তথ্য নিয়ে কথাগুলো বলেননি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আমি বিরোধী দলে শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করছি। আমার সেকেন্ড হোমের কথা বলেছেন, আমার বিলাসী জীবনযাপনের কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, এই পার্লামেন্টের বর্তমান এবং সাবেক সংসদ সদস্য, আমলা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ তাদের অনেকেই বাংলাদেশের অর্থ লুটপাট করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে বেগমপাড়া, সেকেন্ড হোম, থার্ড হোম তৈরি করেছেন। এই সেকেন্ড হোম নিয়ে কথা বললে দেখা যাবে, কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে আসছে। তখন প্রধানমন্ত্রী হয়তো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যাবেন, তাই সেদিকে যাব না।

গণফোরামের এই সদস্য বলেন, যুক্তরাজ্যে আমার সেকেন্ড হোম গোপনীয় কিছু নয়। প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি বলেন, আমার সেকেন্ড হোম কোন লুটপাটের অর্থ বা বাংলাদেশ থেকে পৈত্রিক জমি বিক্রি করে করিনি। ৪০ বছর আগে ইংল্যান্ডে ব্যবসা করে বাড়ির মালিক হয়েছি।

এই সংসদের অনেকে এমপি হওয়ার সুবাদে হয়তো শত শত বা হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন মন্তব্য করে মোকাব্বির খান বলেন, আমার মতো হতভাগা এমপি হয়তো এই পার্লামেন্টে একজনও নেই। ঢাকা বা সিলেটে বা বাংলাদেশের কোথাও কোনো স্থাবর সম্পত্তি নেই। সরকারি কোনো ফ্ল্যাট বা প্লটের জন্য আবেদনও করিনি। উত্তরায় একটি বাড়ি কিনলেও এমপি হওয়ার পর অর্থাভাবে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। বিলাসবহুল গাড়ি তো দূরের কথা একমাত্র সংসদ সদস্য যার কোনো গাড়িই নেই। ট্যাক্স ফ্রি একটি গাড়ি নেওয়ার সুযোগ থাকলেও সেই গাড়িটি নেইনি এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছি গাড়ি নেব না। কারণ বিবেক, নীতি-নৈতিকতার কাছে সেটি স্বস্তিদায়ক মনে হচ্ছে না। তাছাড়া ব্যাংকে এতো টাকাও নেই। একটি ভাড়া গাড়িতে আমি চলাফেরা করি।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কঠিন সময়ে ড. কামাল হোসেন একজন ত্যাগী কর্মী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন। আজ যারা সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ড. কামাল হোসেনের সমালোচনা করছেন, সেদিন তারা কোথায় ছিলেন? আজকের সংসদ উপনেতা (মতিয়া চৌধুরী) থেকে শুরু করে অনেকেই বঙ্গবন্ধুর সরকারকে অস্থিতিশীল করতে আন্দোলন করেছেন।

মোকাব্বির খান চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসের দাবিদাররা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যেতে পারবেন না। কারণ অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মুখে ফেনা তুললেও অন্তরে ধারণ করেন না। এক-এগারো শিক্ষা দিয়েছে, আওয়ামী লীগের এখনো কোনো দুঃসময় আসলে সুবিধাভোগীদের অনেককেই খুঁজে পাওয়া যাবে না।

বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অর্থ পাচার, কিছু কিছু জায়গায় সরকারের অব্যবস্থাপনা, ব্যাংকিং এবং আর্থিক খাতে ব্যাপক লুটপাটের কারণে দ্রব্যমূল্য আজ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। বাজারে গেলে দেশে কোনো সরকার আছে বলে মনে হয় না। যে যেভাবে খুশি সেভাবে লুটপাট করছে, তাদের কোনো বিচার হচ্ছে না।

মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থার মধ্যে আছে মন্তব্য করে গণফোরামের এই সংসদ সদস্য বলেন, অনেকের জীবনমান নিচে নেমে যাচ্ছে, আবার অনেকে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। সরকার এক কোটি নিম্নআয়ের মানুষের জন্য ন্যায্যমূল্যের কার্ড দিয়েছে। এখানে মারাত্মক অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি হচ্ছে। এই কার্ডগুলোর ৮০ ভাগ দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দেওয়া হয়েছে, অসংখ্য প্রমাণ আছে। এমনকি একই পরিবারে একাধিক কার্ড দেওয়া হয়েছে। গরিব মানুষ তেমন কোনো সুবিধা পাচ্ছে না।

এসআর/এসএসএইচ/