বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার ভেঙে কয়েকজন আহন হয়েছেন

মাত্র ১৩ দিনের ব্যবধানে সরকারি দুটি প্রকল্পের আওতায় চলমান ব্রিজ ও উড়াল সড়কের গার্ডার ভাঙার ঘটনা ঘটলো। এর আগে গত ১ মার্চ (সোমবার) ভোরে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের একটি সেতুর গার্ডার ভেঙে বিকল হয়ে যায়। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পের (বিআরটি) গার্ডার ভেঙে চীনা নাগরিকসহ আহত হয়েছে কমপক্ষে ছয়জন।

বিমানবন্দর এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে হঠাৎ করে গার্ডার ভেঙে ওপরে থাকা বেশ কয়েকজন শ্রমিক নিচে পড়ে যান। এতে অন্তত ছয়জন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের পুলিশের সহায়তায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এখানে কর্মরত লোকজনের কোনো ধরনের নিরাপত্তা উপকরণ ছিল না। আহত হওয়ার পর হাসপাতালে পাঠানোর জন্য গাড়ি ছিল না, রাস্তার দুইপাশে যানজট হওয়ায় তাদের হাসপাতালে নিতে দেরি হয়েছে।

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের একটি সেতুর গার্ডার ভেঙে পড়ে আছে

বিআরটির গার্ডার ধসের বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ সকালে ঘটনাটি দেখার পরই আমি তাৎক্ষণিক আইএমইডির সংশ্লিষ্ট সেক্টরকে প্রাথমিকভাবে ব্রিফিং দিতে বলেছি। সংশ্লিষ্ট সেক্টর ব্রিফিং দিলেই আইএমইডি থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এর আগে, সুনামগঞ্জের-জগন্নাথপুর সড়কে নির্মাণাধীন একটি ব্রিজ উদ্বোধনের আগেই ধসে পড়েছে। জগন্নাথপুরের কোন্দানালা খালের ওপর নির্মাণাধীন ব্রিজটি গার্ডার বসানোর সময় হাইড্রলিক জ্যাক বিকল হয়ে ধসে পড়ে। ওই সময় ব্রিজের ৫টি গার্ডার ভেঙে যায়। প্রায় ২ বছর ধরে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ চলছিল।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানায়, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর সড়কে ৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। বাস্তবায়নের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ এম বিল্ডার্স।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকনোমিক ড. জাহিদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এখানে কাজের কোয়ালিটি সমস্যা রয়েছে। কোয়ালিটির প্রবলেম কেন হয় এটাই এখানে বড় প্রশ্ন। কারণ এগুলো তো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান করে। যেসব ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়, তারা কাজ করার কারিগরি যোগ্যতা রাখে কিনা বা যোগ্যতা থাকলে সেটা প্রয়োগ করতে পারে কিনা এটা দেখা দরকার। এভাবে যে ভেঙে পড়ছে, সেখানে নিশ্চই ম্যাটেরিয়ালস বা কারিগরি কোনো ত্রুটি ছিল। কারিগরি ত্রুটি না থাকলে এসব ঘটনা ঘটতে পারে না। এইসব প্রকল্পে কারিগরি কোনো ত্রুটি থাকার কথা না। কারিগরি ত্রুটির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স থাকার কথা।’

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের একটি সেতুর গার্ডার ভেঙে পড়ে আছে

তিনি বলেন, ‘কোয়ালিটির প্রবলেম সর্বত্রই দেখা যাচ্ছে। এখানে গভর্নেন্সের প্রবলেম উঠে এসেছে। এখানে কে কী করছে, তার কোনো মনিটরিং নেই, মনিটরিং থাকলেও জবাবদিহিতার কোনো জায়গা নেই। জবাবদিহিতার ব্যবস্থা থাকলেও সেটার কোনো প্রয়োগ হচ্ছে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলেও আবার কিছু ক্ষেত্রে করছে না। সবার জন্য জবাবদিহিতা একইরকম নয়। কোনো ঠিকাদার ফেসে যাচ্ছেন আবার কোনো কোনো ঠিকাদার পার পেয়ে যাচ্ছেন। আইনের চোখে সবাইকে যদি এককভাবে দেখা না হয়, তাহলে আইন ভয় পাবে কেন। মূলত গুড গভর্নেন্সের প্রবলেমের কারণে এরকম হচ্ছে।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এভাবে ভেঙে পড়ার বিষয়টি আগে অনুসন্ধান করে দেখা দরকার। অনুসন্ধানের পরে যাতে এগুলোর রিপিটিশন না হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলে কি দেশের উন্নয়ন টেকসই হচ্ছে না? এমন প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, কিছু কিছু উন্নয়নে তো যাচ্ছেতাই হচ্ছে। যেমন রাস্তা করলে দুই-তিন মাসের মধ্যে রাস্তা উঠে যায়, ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙে যায়, এগুলো তো নতুন সমস্যা না। সুতরাং প্রত্যেক কাজের কোয়ালিটি ভালো না হওয়ার পেছনে কী কারণ বের করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

এসআর/এসএম