হালদা নদী মনিটরিংয়ে সিসি ক্যামেরা

মিঠাপানির মাছের প্রজননক্ষেত্রের জন্য চট্টগ্রামের হালদা নদী বিশ্বে অনন্য। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র এ নদী। প্রতিবছর এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে হালদায় রুই, কাতলা, মৃগেলের মতো কার্পজাতীয় মাছ ডিম দিয়ে থাকে। সামনেই এসব মাছের ডিম দেওয়ার সময়।

হালদা নদীর নিরাপত্তায় মদুনাঘাট থেকে আমোতয়া এলাকা পর্যন্ত ৮টি পয়েন্টে আটটি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এতে করে নদীর ছয় কিলোমিটার এলাকা কঠোর মনিটরিং করা হবে। পাশাপাশি নৌ পুলিশের ঢাকার ডিআইজি কার্যালয় থেকেও এর মনিটরিং করা যাবে। 

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সদরঘাট নৌ পুলিশেরে ওসি এবিএম মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, হালদা নদীর আলাদা একটা বৈশিষ্ট্য আছে। অবৈধ জাল পেতে মা মাছ ধরা, ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল, বালু উত্তোলন বন্ধ করতে এবং ডলফিনের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য এসব সিসি ক্যামেরা ব্যবহৃত হবে। প্রজনন মৌসুমকে সামনে রেখেই ক্যামেরা বসানো হয়েছে। 

তিনি বলেন, হালদা রক্ষার জন্য অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এতে সাত আটজন সদস্য কাজ করছে। অল্পসংখ্যক সদস্য দিয়ে এতো বড় নদী পাহারা দেয়া সম্ভব না। তাই নদীর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়েছি। যেসব স্থানে মা মাছ ডিম ছাড়ে সেসব স্থানকেই টার্গেট করেই ক্যামেরা বসানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, চলতি মাসের শুরুতেই ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। গত এক সপ্তাহে অবৈধভাবে মাছ ধরার সময় ১০ হাজার মিটার জাল জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া তিনটি নিষিদ্ধ ইঞ্জিনচালিত নৌকা জব্দ করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরার জন্য এসব অপরাধ কমে যাচ্ছে। যেসব পুলিশ সদস্য এখানে দায়িত্ব পালন করছেন তাদেরকে ডিআইজি অফিস থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ড. মুহম্মদ মনজুরুল কিবরিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, হালদা নদী থেকে প্রায়ই গোপনে জাল পেতে মাছ ধরা, ডলফিন হত্যা করা বা বালু তোলার মতো ঘটনার অভিযোগ পাওয়া যায়। বিভিন্ন সময় পুলিশের অভিযানে জাল ও ট্রলার আটক করা হয়েছে। এ নদীতে থাকা ডলফিনগুলোর মৃত্যু বা হত্যার মতো ঘটনাও ঘটেছে। আশা করছি সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ফলে এসব অপরাধ কমে আসবে। 

তিনি বলেন, হালদা নদীর প্রায় ১৫ থেকে ১৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মা মাছ ডিম ছাড়ে। আমরা চাচ্ছি এই পুরো এলাকাটাকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে। এর মাধ্যমে কেউ মা মাছ মারছে কি না, অবৈধভাবে বালু তুলেছে কি না অথবা কেউ ডলফিন হত্যা করছে কি না তা দেখা যাবে। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে মনে করি। ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে যে অংশ বাকি আছে তাতে সিসি ক্যামেরা বসানোর জন্য দুটি বেসরকারি সংস্থাকে অনুরোধ করছি। আশা করছি প্রজনন মৌসুমের আগেই তা শুরু হবে। আগামী মাসেই হালদার মা মাছের প্রজনন মৌসুম। 

কেএম/আরএইচ