মাদক নিয়ে দ্বন্দ্ব
পুলিশের সোর্সের হাতেই খুন হন আরেক সোর্স কায়েস
পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন মো. হুমায়ুন কবির ওরফে মাসুদ তালুকদার (৪৫) ও মোহাম্মদ কায়েস (৩৩)। তারা আইসের একটি বড় চালান রাঙ্গামাটির পাহাড়ি এক ব্যক্তির কাছ থেকে আনার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক চার মাস আগে দুজনই যান সেখানে। কথাবার্তা বলে সব ঠিকঠাক হলে ফিরে আসেন তারা।
মাসুদ পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করেন, এ তথ্য পাহাড়ি ওই মাদক ব্যবসায়ীকে জানিয়ে দেন কায়েস। এরপর মাসুদকে ডেকে পাহাড়ে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করেন পাহাড়ি মাদক ব্যবসায়ী। কোনোমতে প্রাণে বেঁচে এসে মাসুদ কায়েসকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। তবে পরিকল্পনার কথা যাতে বুঝতে না পারে সেজন্য কায়েসের সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়িয়ে দেন মাসুদ। একপর্যায়ে কায়েসকে খুন করার জন্য এক লাখ টাকা দিয়ে মো. জাহিদ নামে একজনকে ভাড়া করেন। এরপর মাসুদ এবং জাহিদ মিলে কয়েকজনের সহায়তায় গত ২০ জানুয়ারি রাতে কৌশলে ডেকে এনে কায়েসকে খুন করে।
বিজ্ঞাপন
চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা বন্দর-পশ্চিম জোনের উপ-কমিশনার আলী হোসেন এসব বিষয় নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, কায়েস হত্যার ঘটনায় রোববার (২২ জানুয়ারি) রাত থেকে পরদিন সোমবার দিবাগত রাতে পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তারা হলেন, মো. হুমায়ুন কবির ওরফে মাসুদ তালুকদার (৪৫), খোকন ওরফে সোনা মিয়া (৩১), মো. রফিকুজ্জামান সানি মিয়া প্রকাশ আফরান (২২), মো. নজরুল ইসলাম ও (২৩), মো. রায়হান (২১) ও আব্দুল কাদের জীবন (২২)।
তিনি আরও বলেন, গত ২১ জানুয়ারি কর্ণফুলী উপজেলার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে সিডিএ আবাসিক এলাকা থেকে কায়েসের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। কায়েসের গ্রামের বাড়ি পটিয়ার জিরি ইউনিয়নের কৈয়গ্রাম এলাকায়। তার বাবার নাম আবু তাহের।
তিন মাস ধরে কায়েসকে হত্যার চেষ্টা করে আসছিলেন মাসুদ। কিন্তু কায়েসকে যতবার হত্যার উদ্দেশ্যে ডাকেন ততবার তিনি কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে আসতেন। সবশেষ ২০ জানুয়ারি বিকেলে কর্ণফুলী থানার মইজ্জারটেক এলাকায় কায়েসকে ডাকেন মাসুদ। এদিন আগে থেকে খুনিরা প্রস্তুতি নিয়ে বসেছিল। কায়েস মইজ্জারটেক এসে মাসুদের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি তাকে চা-নাস্তা খাওয়ান, বিভিন্ন বিষয়ে কথাবার্তা এবং ঘোরাঘুরি করে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন।
উপ-কমিশনার আলী হোসেন বলেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যা পার হলে একটি কাজের কথা বলে ভুক্তভোগীকে সিএনজিচালিত অটোরিকশাতে তুলে কলেজ বাজার ঘুরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পশ্চিম পাশে সিডিএ আবাসিক এলাকার সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। রাস্তায় অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে কায়েসকে সেখানে বসিয়ে রেখে নেমে যায় মাসুদ। কিছুক্ষণ পর অন্যান্য আসামিরা আরেকটি অটোরিকশাযোগে এসে কায়েসের পেছনে অবস্থান নেন। প্রথমে অটোরিকশায় বসা অবস্থায় কায়েসকে মারধর করা হয়। ছুরিকাঘাতে কায়েস চিৎকার দিয়ে রাস্তার পশ্চিম পাশে সিডিএ আবাসিক ড্রেনের দিকে দৌড় দেয়। সেখানেও হত্যাকারীরা পুনরায় তাকে ধরে ছুরিকাঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
নগর পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, এ ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরেকজনকে আমরা চেষ্টা করেও গ্রেপ্তার করতে পারিনি। তবে তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
এম আর/এসকেডি