ডিসি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী
প্রকল্পের অপচয় বন্ধে নজরদারি থাকতে হবে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যখন কোনো প্রজেক্ট নেওয়া হয়, সেটি যে এলাকার জন্য নেওয়া হয় সেখানে কতটুকু কার্যকর হবে, মানুষ কতটুকু লাভবান হবে, অপচয় কীভাবে বন্ধ হবে- এসব দিকে জেলা প্রশাসকদের নজরদারি থাকতে হবে।
তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় পর্যায় এবং উপজেলা পর্যায়ের প্রত্যকের দেখার অধিকার আছে। কাজের মান সঠিক হচ্ছে কি না, মানুষের জন্য কতটুকু কার্যকর সেই বিষয়টা তদারকি করা আপনাদের দায়িত্ব।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, যেহেতু একটা জেলার দায়িত্বে রয়েছেন স্বাভাবিকভাবেই আপনারা তদারকি করতে পারেন। আমি বলছি আপনাদের, দরকার হলে আমাকে খবর দেবেন। আমি দেখব কী হলো? শুধু পয়সার জন্য যেখানে-সেখানে প্রকল্প নেওয়া আমি পছন্দ করি না।
সরকারপ্রধান বলেন, আমরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে যতটুকু সুযোগ-সুবিধা পাই বা আপনারা সরকারি আমলা হিসেবে সুযোগ সুবিধা পান এগুলো জনগণের অবদান। জনগণের অর্থ, জনগণের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে সবকিছু চলে। সেই জনগণকে যেন আমরা অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম করে তুলতে পারি, যেটা আমাদের সব সময়ের লক্ষ্য। আপনারা লক্ষ্য করেছেন, আমাদের প্রত্যেকটা পদক্ষেপে তৃণমূল থেকে দেশকে উন্নত করে আনতে চাই, সেই প্রচেষ্টা আমরা চালাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের উন্নয়ন রাজধানী কেন্দ্রিক বা শহরভিত্তিক হবে না। যে কারণে ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছি, ‘আমার গ্রাম আমার শহর’। প্রত্যেক গ্রামের মানুষকে আমরা শহরের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে দিতে চাই। তাতে শহরমুখী যে প্রবণতা সেটি কমে যাবে। গ্রামে অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে যখন দুর্নীতির অভিযোগ এসেছিল আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারেনি। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করেছি। অনেক বাধা পেয়েছি, অনেকে বলেছে এটা কোনোদিন সম্ভব না। অনেকে বলেছিল বিশ্ব ব্যাংকের টাকা ছাড়া আমরা কিছু করতে পারব না। তাদের পরামর্শ ছাড়া কোনো উন্নতি করতে পারব না। আমি শুধু ভাবতাম, কোনো একটা ফেরেশতা নেমে এসে আমাদের পরামর্শ দিচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করতাম, সেখানে একেকটা অফিসার এসে কাজ করছে, সে আমার দেশের সর্ম্পকে কতটুকু জানে। যারা আসে বিদেশ থেকে, তাদের আমার দেশের মানুষ ও মানুষের প্রতি কতটুকু জ্ঞান আছে। তাদের কথা শুনে আমাদের সব করতে হবে কেন? আমাদের নিজেদের চিন্তা নিজেদের করতে হবে। একক সিদ্ধান্তে আজকে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করেছি। তার ফলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন সবাই বাংলাদেশকে সমীহ করে।
ভবিষ্যতে কার্গো বিমান কেনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের নিজেদের কার্গো বিমান থাকবে সেই পরিকল্পনা রয়েছে। আমাদের উৎপাদিত পণ্য যেন সঙ্গে সঙ্গে বিদেশে রপ্তানি করতে পারি সেই ব্যবস্থাটা আমরা করতে চাই। তাতে রপ্তানি বাড়বে, রপ্তানি বহুমুখী হবে। তবে এই মুহূর্তে কিনতে পারছি না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ আমরা কমিয়ে দিয়েছি, সেটার ব্যাপারে আপনারা সচেতন থাকবেন। যেগুলো এখনই প্রয়োজন নেই, সেগুলো কেন আমরা করতে যাব? আজকে পেপারে দেখলাম, আমাদের বিরোধী দলের একজন বলে ফেলেছেন, ‘ইভিএমের জন্য ৮ হাজার কোটি টাকা লাগবে।’ কাজেই সেটা পরিকল্পনা কমিশন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে আর্থিক সংকট।
আর্থিক সংকট সারা বিশ্বব্যাপী রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদেরও আছে, কিন্তু এমন পর্যায়ে নাই যে আমরা চলতে পারব না। এই মুহূর্তে আমাদের কাছে অগ্রাধিকার কী? আমাদের কাছে অগ্রাধিকার হচ্ছে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা। মানুষের কল্যাণ আগে দেখা।
কৃষি উৎপাদন যাতে বাড়ে তার জন্য যা লাগে তা করা হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের চিকিৎসা ক্ষেত্রে যা লাগে আমরা করব। বিনা পয়সায় আমরা ভ্যাকসিন দিয়েছি। পৃথিবীর ধনী দেশগুলো তো দেয়নি। এখানে হাজার হাজার কোটি টাকা আমরা খরচ করেছি। শুধু ভ্যাকসিন দেওয়া নয়, ভ্যাকসিন দিতে গেলে কত আয়োজন করতে হয়। সব করেছি।
এমআইএস/এসএম