প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আপনারা যারা জনপ্রশাসনে কাজ করেন, মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন, আপনাদের দায়িত্ব অনেক। শুধু চাকরির ক্ষেত্রে চাকরি করা না, জনসেবা দেওয়া। এটা ছিল সংস্থাপন মন্ত্রণালয়। আমি নাম দেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। নামেরও একটা প্রভাব থাকে। নামের সঙ্গেও যেন কর্মক্ষেত্রটা আপনাদের বিস্তৃত হয়।

তিনি বলেন, আমি যেসব পদক্ষেপ নিয়েছি, বিশেষ করে ২০০৯ যে রূপকল্প ঘোষণা দিয়েছি, সেগুলো বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে আপনাদের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করেছেন। আন্তরিকতা ছাড়া বা দেশের মানুষের প্রতি কর্তব্যবোধ ছাড়া কখনো সফল হওয়া যায় না।

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা এই কোভিডকালীন সময়ে প্রত্যেকে আন্তরিকভাবে কাজ করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, মানুষের জন্য যে মানুষ, সেটা আপনারা প্রমাণ করেছেন। করোনার সময়ে বাবা, মা, ভাই, বোন বা নিজের ছেলেমেয়ে দূরে সরে গেছে। সেখানে আমাদের প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সংস্থা বা আমাদের নিজের দলের লোকজনদের দেখেছি, প্রত্যেকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে। মানুষের পাশে থেকে মানুষের সঙ্গে কাজ করা এটাই তো সবচেয়ে বড় কথা।

তিনি বলেন, একটা পরিবর্তন দেখেছি আপনাদের মধ্যে। আমার বাবাও ক্ষমতায় ছিলেন, দেখেছি। আমি যখন বিরোধী দলে তখনও দেখেছি। ৮১ সালে সারাদেশ ঘুরেছি, তখনও দেখেছি। আমি আসার পর কর্মকর্তাদের মধ্যে জনমুখী মনোভাব এবং মানুষকে সেবা দেওয়ার যে আন্তরিকতা সৃষ্টি হয়েছে, এটা প্রশংসনীয়। আমরা তো জনপ্রতিনিধি, আমরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আসি। আমাদের মেয়াদ পাঁচ বছর।

তিনি আরও বলেন, ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৩’ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। তৃণমূল পর্যায়ে সরকারের নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সমস্যাগুলো এবং এর উত্তরণের কৌশল নির্ধারণে ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন’ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। জেলা প্রশাসক সম্মেলনে সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের সঙ্গে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সরাসরি মতবিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়। জেলা প্রশাসক সম্মেলন আয়োজন করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

সরকার প্রধান বলেন, পল্লী উন্নয়নকে অগ্রাধিকার প্রদান করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য দূরীকরণ ও তাদের স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করেছি। ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ ধারণার ওপর ভিত্তি করে পল্লী এলাকায় উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, অবকাঠামো নির্মাণ, ইন্টারনেট, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ সব আধুনিক নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। দেশের প্রতিটি গ্রামকে শহরের সব সুবিধা প্রদান ও নাগরিক জীবনের মান উন্নয়নের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, পল্লী উন্নয়নে সরকারের এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং জেলা ব্র্যান্ডিংয়ে আপনাদের কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। জাতির পিতা ১৯৭২ সালে সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘সরকারি কর্মচারী ভাইয়েরা, আপনাদের জনগণের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। এখন থেকে অতীতের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিবর্তন করে নিজেদের জনগণের খাদেম বলে বিবেচনা করতে হবে।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। 

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফরউল্লাহ, নরসিংদী জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান, বান্দরবানের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি প্রমুখ।

এমএসআই/এসএসএইচ/