বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি জনবান্ধব সিদ্ধান্ত নয়
দেশে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে সরকার। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক নির্বাহী আদেশে এ মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা করা হয়, যা চলতি মাসে থেকেই কার্যকর হয়েছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সিদ্ধান্তের আগেই নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত মূল্যস্ফীতি আরেকবার বাড়িয়ে দেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি ভোক্তাদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করবে বলে মনে করছেন তারা।
বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় বিইআরসির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। এর মাধ্যমে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিইআরসির জবাবদিহিতার সংস্কৃতি নষ্ট হয়ে গেল মনে মত জানিয়েছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন>>বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর মাধ্যমে কার্যত বিইআরসিকে সমাহিত করা হলো। এর আগে বিইআরসি কর্তৃক জ্বালানির মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত হতো। কিন্তু জবাবদিহিতার সে সংস্কৃতি নষ্ট হয়ে গেল। অধ্যাদেশ আইন সংশোধনের মাধ্যমে সরকার নিজেদের জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নিয়ে গেল। যার পরিনাম ভয়াবহ। সরকার যখন-তখন বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়িয়ে জনগণের দুর্ভোগের মাত্রা আরও বেশি বাড়িয়ে দেবে। ইতোমধ্যে সেটা বেড়েও গেছে। কোনো জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্রের চরিত্র এমন হতে পারে না। সরকার বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি, সিস্টেম লস ও অনিয়ম বন্ধে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। এখনও পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন ও উন্নতমানের বিদ্যুৎ সরবরাহের কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব হয়নি। বিদ্যুতের এই মূল্যবৃদ্ধি কার্যতই মূল্যস্ফীতিকে আরেকধাপ বাড়িয়ে দেবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে আবশ্যিকভাবেই একটা সামাজিক প্রভাব পড়বে। যেটা তেল বা গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সময়েও হয়েছিল। মূল্যস্ফীতি এখন ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে, সবকিছুর দামও বেড়ে গেছে। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে এর সংশ্লিষ্ট সব কিছুর দাম আরেক দফা বেড়ে যাবে। যেটা মানুষের জীবনযাত্রার ওপর বাড়তি চাপ ফেলবে।
আরও পড়ুন>>বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে : শামসুল আলম
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদের জনজীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে বলেও মনে করছেন অনেকে। দাম অনুযায়ী বিদ্যুতের সরবরাহ ঠিকমতো দেওয়া সম্ভব না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। সে কারণে দাম অনুযায়ী সঠিক মানের বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মশিউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের প্রতি এই বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব বেশিই পড়বে। সরকার এই খাতে প্রচুর ভর্তুকি দিয়ে থাকে। সে ভর্তুকি সমন্বয় করতেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন জনগণকে অতিরিক্ত দাম পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু সে যদি দাম অনুযায়ী সার্ভিস না পায়, তাহলে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে। সুতরাং সরকারের উচিত মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি সঠিক মানের বিদ্যুৎসেবা নিশ্চিত করা।
আরও পড়ুন>>নির্বাহী আদেশেই বাড়ছে বিদ্যুতের দাম
বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ দাম বাড়ানোয় মূল্যস্ফীতিতে এর প্রভাব খুব একটা পড়বে না বলেও মতামত জানিয়েছেন অনেক অর্থনীতিবিদ। তবে নিজ ক্ষমতাবলে সরকারের বিদ্যুতের দাম বাড়ানো সিদ্ধান্ত জনবান্ধব নয় বলে মনে করছেন তারা।
অর্থনীতিবিদ ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক কর্মকর্তা আহসান এইচ মনসুর ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকার বিইআরসির মাধ্যমে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে পারত, যেহেতু শুনানি তারাই করেছে। কিন্তু সরকার নিজ ক্ষমতাবলেই বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। ভবিষ্যতে যদি মাল্টিপল সাপ্লায়ার আসে সেক্ষেত্রে বিইআরসিকে কিন্তু দায়িত্বে রাখতে হবে। তবে মূল্যস্ফীতির যতটা আশঙ্কা করা হচ্ছে, ততটা বাড়বে না। ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হলেও সেটা ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। পুরোটা বৃদ্ধি করা হলে একটা ব্যাপক চাপ আসত। তবে সার্বিকভাবে সরকারের এ সিদ্ধান্তগুলো সঠিক এবং জনবান্ধব নয়।
ওএফএ/কেএ