পৌষ মাসের শেষ আর মাঘ মাসের আগমনী সময়ে শীতে জবুথবু অবস্থা মানুষের। অন্যদিকে বাঘ পালানো মাঘ মাস আসার আগেই আবহাওয়া অফিস বলছে, দুই থেকে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে৷ এর মধ্যে আবার একটি শৈত্যপ্রবাহ তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। এ অবস্থায় হালকা শীতের কাপড়ের উষ্ণতায় তেমন স্বস্তি পাচ্ছেন না মানুষজন। তাই গত কয়েকদিনে মোটা ও ভারী শীতবস্ত্র কিনতে ফুটপাত থেকে শুরু করে মার্কেট, বিপণিবিতান ও দোকানগুলোতে ভিড় বেড়েছে আগের চেয়ে কয়েক গুণ।

শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বিকেল থেকে সন্ধ্যায় রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা মানুষের ভিড় পরিণত হয়েছে জনসমুদ্রে। শীতবস্ত্র কিনতে আসা ক্রেতাদের চাপে ফুটপাতে হাঁটাও কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরেজমিনে নিউমার্কেট ও সাইন্স ল্যাবরেটরি এলাকার ফুটপাত এবং মিরপুর রোডের গ্লোব শপিং সেন্টার, নুরজাহান সুপার মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, নূর ম্যানশন মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মানুষের ব্যাপক উপস্থিতির চিত্র চোখে পড়েছে। এছাড়াও নানা ফ্যাশনের হুডি, ব্লেজার, সোয়েটার, খাদির চাদর,  মাফলার, কানটুপি, চামড়া বা র‌্যাক্সিনের জ্যাকেট, বাচ্চাদের শীতের জামার সেট, গেঞ্জির কাপড়ের প্যান্ট, জিনসের মোটা শার্ট, উলের সুতার হাতাওয়ালা শার্ট সহ অসংখ্য শীতবস্ত্রের ব্যাপক সমাহারও দেখা গেছে এসব মার্কেটে। তবে দোকানের তুলনায় দাম কম থাকায় ফুটপাতেই ক্রেতাদের উপস্থিতির পরিমাণ বেশি দেখা গেছে।

ক্রেতারা বলছেন, এবারের শীতের মাত্রা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি। তাই হালকা বা পাতলা শীতবস্ত্রের উষ্ণতায় তেমন স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়েই ভারী কিংবা মোটা কাপড় কিনতে বের হয়েছেন তারা। আবার মার্কেটগুলোতে নতুন পণ্য আসায় শীতবস্ত্রের দাম অনেক বেশি। ফুটপাতে গত বছরের পুরোনো কাপড় তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যাচ্ছে।

ক্রেতাদের অনেকেই আবার মনে করছেন চলতি মাসের শেষ দিকে শহরে শীতের প্রকোপ কমে গেলে ভারী কাপড় আর পরার প্রয়োজন হবে না। তাই আপাতত স্বস্তি পেতে কম দামে সাধারণ কাপড়-চোপড় কেনাকাটা করেই ঘরে ফিরতে চাইছেন তারা।

তারেক আজিজ নামের এক ক্রেতা বলেন, গত কয়েক বছরে ঢাকায় এমন শীত পড়তে দেখিনি। বিশেষ করে সকালে অফিসে যাওয়ার সময় কিংবা সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফেরার সময় ঠান্ডা বাতাসে শরীরে কাঁপুনি ধরে। অন্য বছর সাধারণ ব্লেজার বা পাতলা জ্যাকেটেই শীত চলে যেত কিন্তু এবার আর সেটি হচ্ছে না। তাই একটু মোটা ও ভারী কাপড় কিনে নিলাম। ফুটপাতে বা বাইরের দোকানগুলোতে দাম কম, মার্কেটের ভেতরে সব কাপড়ের দামই বেশি।

লুনা শারমিন নামের আরেক ক্রেতা বলেন, এই শীতে বড়দের তুলনায় ছোটরা সহজে কাবু হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে বাচ্চাদের সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় অনেক ঠান্ডা থাকে। তাই শুধু স্কুলের ইউনিফর্মের সোয়েটারে শীত মানে না। আলাদা করে শীত উপযোগী নীল কালারের মোটা সোয়েটার নিতে এসেছি। মার্কেটগুলোতে দাম একটু বেশিই চাইছে। তবুও বাধ্য হয়ে নিয়ে নিলাম। বাইরে ফুটপাতে তো আর এসব পাওয়া যাবে না। ঢাকায় এমন শীত আমি দেখিনি এ বছরই তুলনামূলক বেশি শীত পড়েছে। তবে আশা করি জানুয়ারি মাসের শেষে শীত কমে যাবে।

অপরদিকে ক্রেতাদের ব্যাপক উপস্থিতিতে বেশ খুশি বিক্রেতারা। ফুটপাতের অধিকাংশ দোকানেই ডাক উঠিয়ে শীতের কাপড় বিক্রি করতে দেখা গেছে। ঢাকা কলেজের বিপরীত পাশে গ্লোব শপিং সেন্টারের সামনের ফুটপাতের বিক্রেতা আরিফুল বলেন, ডিসেম্বরের শেষ থেকে এখন পর্যন্ত বেচাকেনা বেশ জমজমাট হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজারের কাছাকাছি টাকার কাপড় বিক্রি হচ্ছে। আজ শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মানুষের উপস্থিতি আরও বেড়েছে। পুরো জানুয়ারি মাসেই এমন শীত অব্যাহত থাকলে ভালো বিক্রি হবে বলে আশা করছি।

তবে কিছুটা মন খারাপ মার্কেটের ভেতরের দোকানগুলোর বিক্রেতাদের। তারা বলছেন, ক্রেতারা আসছেন কিন্তু কেনাকাটা করছেন না। কাপড় দেখে দাম শুনেই চলে যাচ্ছেন। চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের বিক্রেতা নাজমুল হাসান বলেন, আমরা যারা পাইকারি দোকান থেকে কাপড় কিনে এনে খুচরায় বিক্রি করি তাদের অনেক কিছু হিসাব-নিকাশ করতে হয়। দোকান ভাড়া, কর্মচারী বিল, পানি বিল, বিদ্যুৎ বিল, সিকিউরিটিসহ সব খরচের হিসাব মিললে তবেই ব্যবসায় লাভ হয়। এখন সামগ্রিকভাবেই সবকিছুর দাম বেশি। শীতের যেসব নতুন কাপড় দোকানে উঠানো হয়েছে তার উপরও এর প্রভাব কিছুটা পড়েছে। তবে বিক্রি একেবারেই হচ্ছে না তেমন নয়। আমরা আশা করছি, দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাশা অনুযায়ী বিক্রির পরিমাণ আরও বাড়বে।

আরএইচটি/এসএসএইচ/