জিপির নেটওয়ার্ক ও কলড্রপ সমস্যা প্রকট, ভোগান্তিতে গ্রাহক
মোবাইল ফোনে নেটওয়ার্কই পাওয়া যাচ্ছিল না। আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম যে, মোবাইল নষ্ট হলো কি না। খুবই খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে। জিপির নেটে তো মাঝে মাঝেই সমস্যা হয়। কিন্তু গত দুইদিন ধরে অবস্থা খুবই খারাপ।
বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) রাতে কথাগুলো বলছিলেন গ্রামীণফোনের মোবাইল সিম ব্যবহারকারী রাফিউর রহমান (ছদ্মনাম) নামের একজন গ্রাহক। গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক ব্যবহারের অভিজ্ঞতার আলোকে ঢাকা পোস্টকে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
রাফিউর রহমান বলেন, গতকাল (বুধবার, ১০ মার্চ) গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক অবস্থা এত বাজে ছিল, যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। জরুরি কাজ সম্পন্ন করতেও অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। নেটওয়ার্ক ও কলড্রপ নতুন সমস্যা নয়, কিন্তু সম্প্রতি কলড্রপ ও নেটওয়ার্ক সমস্যা খুবই প্রকট হয়ে উঠেছে।
শুধু রাফিউর রহমান নন, গ্রামীণফোনের কলড্রপ ও নেট সমস্যার বিষয়ে প্রায় ২০ জনের বেশি গ্রাহক এমন অভিযোগ করেন ঢাকা পোস্টের এ প্রতিবেদকের কাছে।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিপণন ব্যবস্থাপক জমশেদ (ছদ্মনাম) জানান, জিপিতে (গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক) ৫ মিনিট কথা বলতেই সমস্যা। কর্পোরেট সিম হওয়ায় বাতিলও করা যাচ্ছে না। গত দুইদিন হলো সমস্যা প্রকট আকারে ধারণ করেছে।
তিনি বলেন, নেটওয়ার্ক প্রচুর আপ-ডাউন করছে। ফোরজি থেকে মাঝে মাঝেই থ্রিজি হয়ে যাচ্ছে। ঠিক হতে ১০ মিনিট বা তারও বেশি সময় নিচ্ছে। আমার অফিসের অধিকাংশ কলিগ আমার মতোই সমস্যায় পড়েছেন। আমরা প্রায় ৭ হাজার কর্মী জিপির সিম ব্যবহার করি। আজকে জিপিতে অভিযোগ করেছি, তারা বলছে রোববার লোক পাঠাবে।
কলড্রপের ঘটনা মাঝে কিছুটা কমলেও আবারও প্রকট আকারে বেড়েছে বলে অভিযোগ করেন রাজধানীর উত্তরা এলাকার গোপাল নামের এক গ্রাহক। তিনি বলেন, কলড্রপে শুধু আর্থিকভাবে ক্ষতি হচ্ছে তা কিন্তু না। সময় ও কথা বলারও সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু কার কাছে অভিযোগ করব? প্রশ্ন রাখেন এ গ্রাহক।
গ্রামীণফোনের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজেও দেখা গেল অসংখ্য গ্রাহক কলড্রপ ও নেটওয়ার্কের সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করেছেন। মো. তারেক নামের একজন গ্রাহক লিখেছেন, আপনাদের নেটওয়ার্ক এত ভালো, আমার বাসা থেকে আপনাদের টাওয়ারের দূরত্ব আধা কিলোমিটারও হবে না। তারপরও ফোরজি কখনও পায়, কখনও পায় না। মুখে তো অনেক ভালো ভালো কথা বলেন, বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই মিল নেই। এরকম ধোঁকা মানুষকে দেবেন না। একদিন সবাইকে মরতে হবে। একথাটা সবার মনে রাখা দরকার।
মো পাভেল নামের গ্রাহক লিখেছেন, ভাই নেটওয়ার্ক কথা কী আর বলবো, আমাদের এইখানে কারেন্ট যদি ২ ঘণ্টা না থাকে তাহলে আর ফোনে কোনো ধরনের সিগনাল পাবেন না, কাস্টমার কেয়ারে বার বার অভিযোগ দেওয়ার পরেও এখন পর্যন্ত সমাধান করা হয়নি।
তাজুল ইসলাম নামের গ্রাহক অভিযোগ করে লিখেছেন, গ্রামীণফোনের নেট দু-তিন দিন ধরে ঝামেলা করছে। ফোরজি মোটেও আসছে না।
এক সপ্তাহ আগে ‘আজব এই দুনিয়া’ নামের আইডি থেকে একজন লিখেছেন, নেটওয়ার্ক সমস্যা জিপি সিমে।
এ বিষয়ে গ্রামীণফোন লিমিটেড এক্সটারনাল কমিউনিকেশনের প্রধান মো. হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল (১০ মার্চ) কারিগরি সমস্যার কারণে নেটওয়ার্কে সামান্য সমস্যা দেখা দিয়েছিল। গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে সব গ্রাহককে একটি বার্তাও পাঠানো হয়। এতে লেখা ছিল ‘সম্মানিত গ্রাহক, সড়ক ও রেলপথ উন্নয়নের সময় অপটিক্যাল ফাইবার কেটে যাওয়ায় আপনার টেলিযোগাযোগ সেবা সাময়িকভাবে বিঘ্নিত হতে পারে। আমরা সমস্যা সমাধানে কাজ করছি। সাময়িক এই সমস্যার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’ আজ থেকে আবার নেটওয়ার্ক খুব ভালোভাবে সব গ্রাহক পাচ্ছেন, কোনো সমস্যা এখন নেই বলে জানান তিনি।
গত ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ১১২ কোটি ৯৫ লাখ বার কলড্রপ হয়েছে বলে জানায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এ হিসাবে দৈনিক কলড্রপের সংখ্যা ছিল গড়ে ৪৭ লাখ। জানুয়ারি থেকে আগস্টে গ্রামীণফোনে (জিপিতে) ৪৬ কোটিরও বেশি বার কলড্রপ হয়েছে।
একে/এইচকে