ডাক বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকের সঞ্চয়পত্রের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের প্রধান কার্যালয়ের এনফোর্সমেন্ট টিমের অভিযানে ঢালাওভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া না গেলেও বেশকিছু অসঙ্গতি ও অনিয়ম ধরা পড়েছে বলে জানা গেছে। 

অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করে রোববার (৮ জানুয়ারি) দুদকের সহকারী পরিচালক ( জনসংযোগ) মোহাম্মদ শফিউল্লাহ বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগে পরিপ্রেক্ষিতে এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান পরিচালনা করে। দুদক টিম যাচাই-বাছাই শেষে প্রতিবেদন দাখিল করবে।

আরও পড়ুন >>> দুদকের ধার গেল কই? 

দুদক জানায়, ডাক বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকের সঞ্চয়পত্রের অর্থ উত্তোলনপূর্বক আত্মসাতের অভিযোগে এনফোর্সমেন্ট টিম প্রথমে তাদের ঢাকা জি.পি.ও কার্যালয়ের কর্মকর্তা আক্তার জাহানের সঙ্গে অভিযোগের বিষয়ে কথা বলে। তিনি দুদক টিমকে জানান, ২০১৯ সালের জুন মাস থেকে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে অটোমেশন চালু হয় এবং ২০২১ সালের জুন মাসে সঞ্চয় ব্যাংকের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে অটোমেশন পদ্ধতি চালু করে। দুদক টিম অভিযোগের বিষয়ে একজন গ্রাহকের সঞ্চয়পত্রের ক্রয় থেকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টাকা জমা বা সঞ্চয়পত্র মেয়াদ শেষ হলে টাকা উত্তোলন পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপ পর্যালোচনা করে।

সূত্র আরও জানায়, অভিযানকালে ঢালাওভাবে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের ভিত্তিতে দুদকে তদন্ত চলমান আছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিধি অনুযায়ী ডাক বিভাগে প্রতিদিন বিভিন্ন খাতের কি পরিমাণ অর্থ ডাকঘরে জমা পড়ে একটি হিসাব জমা হয়। প্রতিদিনের হিসাব প্রতিদিন সম্পাদন হয়। বিভিন্ন খাত থেকে অর্থ প্রাপ্তি এবং বিভিন্ন খাতে অর্থ পরিশোধের পর বিশাল অংকের অর্থ ডাকঘরেই রয়ে যায়। পোস্ট অফিসে কর্মরত দুর্নীতিগ্রস্ত, প্রতারক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ সুযোগটিই কাজে লাগান। অর্থ আত্মসাতের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা নামে-বেনামে একটি সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর খুলে ‘পাস বই’ নেন। সেই পাস বইয়ে বিভিন্ন তারিখে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা ‘এন্ট্রি’ দেখান। ডাক বিভাগের প্রতারক কর্মকর্তা-কর্মচারী পাস বইয়ে এন্ট্রির বিপরীতে লেজার বুকের পাতায়ও সমপরিমাণ অর্থ এন্ট্রি করান। পাস বইয়ে এন্ট্রি থাকলে লেজার বইয়েও সেটি এন্ট্রি হতে বাধ্য। কিন্তু অপরিমেয় অংকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার হাতিয়ারটি হচ্ছে ওইদিনের ‘সিডিউল’ বা ‘জার্নাল’। পাস বই এবং লেজারে উল্লেখ করা হলেও দৈনন্দিন অর্থ জমা পড়া কিংবা উত্তোলনের কোনো তথ্য জার্নালে তোলা হয় না।

আরও পড়ুন >>> দুর্নীতি থামাবে কে?

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, কোটি কোটি টাকা অর্থ আত্মসাতের ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে তিনটি ধাপ একত্রিত হয়ে। অর্থ আত্মসাৎকারীরা প্রথমে পাস বইয়ে টাকা ‘এন্ট্রি’ দেখান। পাস বইয়ে এন্ট্রিকৃত অর্থ লেজারে এন্ট্রি করান। কিন্তু জার্নাল কিংবা সিডিউলে ওই অর্থ তোলেন না। এভাবেই বছরের পর বছর অর্থ আত্মসাৎ করছেন ডাক বিভাগেরই সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। অর্থ আত্মসাতের জন্যই সুপরিকল্পিতভাবেই ডাক বিভাগে একটি ‘পদ্ধতিগত ত্রুটি’ জিইয়ে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।

আরএম/এসএসএইচ/