সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন/ সংগৃহীত

রাজধানীর শাহীনবাগে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে হওয়া অপ্রীতিকর ঘটনাকে নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে দেখার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। পাশাপাশি এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা ও ওয়াশিংটনের সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না পররাষ্ট্রসচিব।

বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের ৫০ বছরের সম্পর্ক : সম্ভাবনা এবং আগামীর পথচলা’ শীর্ষক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, দুইটা দেশের সম্পর্ক তো অনেক দিনের পুরোনো। বেশিরভাগ দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বয়স প্রায় ৫০ বছরের কোটায়। সুতরাং একটা ঘটনা বা এ ধরনের একটা আচরণে সেই সম্পর্ক রিমুভ করে ফেলবে বিষয়টা এ রকম না। ওই রকম কোনো সম্ভাবনা আমরা দেখি না। আমাদের মন্ত্রী যেটা বলেছেন, সঠিক বলেছেন, এটাকে সিকিউরিটি থ্রেট হিসেবে দেখার সুযোগ নাই।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ঘটনার আকস্মিকতার কারণে ওনাদের (যুক্তরাষ্ট্র) রিঅ্যাকশনটা হয়েছে। আমাদের মন্ত্রী বিষয়টা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। দেখা যাক, একটা ইস্যুতে দুইটা দেশের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় না, সেটা নিষেধাজ্ঞা বা যাই হোক। তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) সঙ্গে অবশ্যই আমাদের আরও অনেক যোগাযোগ হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাখ্যায় পররাষ্ট্রসচিব বলেন, পুরো বছরই আমরা তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) সঙ্গে বিভিন্ন যোগাযোগ রক্ষা করেছি। প্রচুর সফর হয়েছে। আমাদের তরফ থেকে হয়েছে, তাদের থেকে হয়েছে। এ সমস্ত কারণে একটা গুজব আমরা দেখেছি, ১০ ডিসেম্বর আবার নিষেধাজ্ঞা আসছে। কিন্তু সেরকম আমরা কোনো কিছু দেখি নাই। সুতরাং এটা প্রমাণ করে যে, তারাও (যুক্তরাষ্ট্র) এ সম্পর্ককে সিরিয়াসলি নেয়, যেভাবে আমরা নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ কাজ করে যাবে বলেও জানান মাসুদ বিন মোমেন।

কূটনীতিকদের চলাফেরার বিষয়ে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, কূটনীতিকরা যদি কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় যায় বা স্পর্শকাতর এলাকায় যায় তখন একটা অনুমতির প্রয়োজন আছে। এছাড়া ঢাকা শহরে কখন কোথায় মুভ করবে এটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানোর কোনো বিধান নাই। তবে এলাকাভেদে আগে থেকে অনুমতি নেওয়া থাকলে ভালো। তারা (রাষ্ট্রদূত) নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের জানালে সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা করে দেওয়া যায়। সেটা অনুরোধের ভিত্তিতে।

এ সময় মাসুদ বিন মোমেন নিজের ১১ বছরের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনের প্রসঙ্গ টানেন। তিনি বলেন, আমাদের রাষ্ট্রদূতরাও কিন্তু অবাধে চলাফেরা করতে পারে। দেশের আলোকে যদি কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকে নির্দিষ্ট এলাকা ছাড়া সেটা।

বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের শাহীন বাগের বাসায় যান। সকাল ৯টা ৫ মিনিটে সুমনের বাসায় প্রবেশ করেন তিনি। প্রায় ২৫ মিনিট তিনি সেখানে অবস্থান করেন। এরপর তিনি ওই বাসা থেকে বেরিয়ে যান।

সেখান থেকে বেরিয়ে আসার সময় কিছু লোক তাকে ঘিরে ধরেন। এসময় প্রায় ৪৫ বছর আগের গুমের ঘটনা ও সামরিক শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে রাষ্ট্রদূতের কাছে স্মারকলিপি দিতে চায় ‘মায়ের কান্না’ নামে একটি সংগঠন। রাষ্ট্রদূত ঘটনার আকস্মিকতায় বিব্রত হন এবং দ্রুত গাড়িতে উঠে বসেন।

ওইদিন দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক করেন পিটার হাস। বৈঠকে রাষ্ট্রদূত তার ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার কথা উল্লেখ করে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কিন রাষ্ট্রদূতের শাহীনবাগে যাওয়ার খবর কে প্রচার করল, সেটি রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চান। পাশাপাশি মোমেন রাষ্ট্রদূতকে বলেন, রাষ্ট্রদূত বা দূতাবাসের কর্মকর্তারা চাইলে আরও অধিক নিরাপত্তা দেবে সরকার।

এনআই/এমএ