আরও ৮০০ কোটি টাকা লোপাটে পি কে হালদারের নাম
হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতে অভিযুক্ত পলাতক এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের বিরুদ্ধে আরও ১০টি মামলা হচ্ছে। এসব মামলায় তার সঙ্গে আসামি হচ্ছেন আরও ৩৭ জন। অভিযোগ রয়েছে, পি কে হালদারসহ এ ৩৭ জন মিলে ৮০০ কোটি টাকা লোপাট করেছেন।
আজ (মঙ্গলবার) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশন থেকে এ সংক্রান্ত মামলাগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে দুদক সচিব ড. মু আনােয়ার হােসেন হাওলাদার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলাগুলো শিগগিরই দায়ের করবেন।
বিজ্ঞাপন
দুদক সচিব বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই না করে ও কোনো মর্টগেজ ছাড়া ১০টি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের মালিককে ঋণ দেওয়া হয়। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ভুয়া ঋণের নামে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ভুয়া কোম্পানি এবং ব্যক্তির হিসাবে ওই অর্থ স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং প্রতিরােধ আইন ও দুর্নীতি প্রতিরােধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযােগ্য অপরাধ করায় মােট ৩৭ জনের বিরুদ্ধে পৃথক ১০টি মামলার অনুমােদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। অনুমোদনকৃত প্রতিটি মামলাতে পি কে হালদারকে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম এ হাশেম, এমডি মো. রাশেদুল হক, ভারপ্রাপ্ত এমডি মাে. আবেদ হােসেন এবং প্রতিষ্ঠানটির বাের্ড সদস্যসহ পি কে হালদারের অন্যান্য সহযোগীকে আসামি করা হচ্ছে।
আরও যাদের আসামি করা হচ্ছে- দৃনান অ্যাপারেলসের চেয়ারম্যান কাজী মমরেজ মাহমুদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবু রাজীব মারুফ, ইমেক্সোর প্রােপাইটর ইমাম হােসেন, লিপরাে ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উত্তম কুমার মিস্ত্রি, উইন্টেল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের দুই পরিচালক সুকুমার সাহা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা সাহা, আর্থস্কোপ লিমিটেড চেয়ারম্যান প্রশান্ত দেউরী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরা দেউরী, ওকায়ামা লিমিটেডের চেয়ারম্যান সুব্রত দাস, আরবি এন্টারপ্রাইজের মালিক রতন কুমার বিশ্বাস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের পরিচালক পাপিয়া ব্যানার্জি ও তার স্বামী পরিচালক বাসুদেব ব্যানার্জি।
এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের পরিচালক এম নূরুল আলম, পরিচালক মাে. নওশের-উল ইসলাম, পরিচালক নাসিম আনােয়ার, পরিচালক মাে. নুরুজ্জামান, পরিচালক মােহাম্মদ আবুল হাসেম ও জহিরুল আলমসহ মোট ৩৭ জনকে আসামি করা হয়।
এর আগে ২৫ জানুয়ারি পি কে হালদার কেলেঙ্কারিতে ৩৫০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৩৩ শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক ৫ মামলা করে দুদক। মামলায় আনান কেমিক্যাল লিমিটেডের নামে ৭০ কোটি ৮২ লাখ টাকা, সুখাদা প্রোপার্টিজ লিমিটেডের নামে ৬৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা, মেসার্স বর্ণ-এর নামে ৬৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, রাহমান কেমিক্যালস লিমিটেডের নামে ৫৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ও মুন এন্টারপ্রাইজের নামে ৮৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।
ক্যাসিনো অভিযানের ধারাবাহিকতায় প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করে দুদক। গত ৮ জানুয়ারি দুদকের অনুরোধে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা দিয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করে ইন্টারপোল। এ কেলেঙ্কারিতে এখন পর্যন্ত ২৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। গ্রেফতার হয়েছেন ৭ জন। যাদের মধ্যে উজ্জ্বল কুমার নন্দী ছাড়াও পি কে হালদারের সহযোগী শংখ বেপারী ও রাশেদুল হক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
২০১৯ সালে দেশ ছাড়েন পি কে হালদার
অর্থ পাচারের মামলা মাথায় নিয়ে ২০১৯ সালে বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশ ছাড়েন পি কে হালদার; যদিও পি কে হালদার যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন সে অনুরোধ জানিয়ে পুলিশের বিশেষ শাখাকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তবে চিঠি পৌঁছানোর দুই ঘণ্টা ৯ মিনিট আগেই ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশ ত্যাগ করেন পি কে হালদার। ইমিগ্রেশন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়কে এ তথ্য জানিয়েছে।
আরএম/এনএফ/এমএমজে