রাজধানীর শাহীনবাগে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে। এ ঘটনায় রাষ্ট্রদূত হাস বেশ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে জানিয়েছেন।

বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আজ হঠাৎ জরুরিভিত্তিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সাক্ষাতে তিনি জানান, সকালে রাজধানীর শাহীনবাগের একটি বাসায় গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে অনেক লোক জড়ো হয়েছিল। তারা রাষ্ট্রদূতকে কিছু একটা বলতে চাচ্ছিল। রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তায় নিয়োজিত লোকজন তাকে বলেছে, আপনি তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে যান। কারণ তারা (বাইরে ও ভেতরে থাকা লোকজন) আপনার গাড়ি ব্লক করে দেবে। নিরাপত্তার কারণে তিনি তাড়াতাড়ি চলে যান। এ ঘটনায় তিনি খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছেন।

আরও পড়ুন : দেশে গুমের কালচার শুরু করেছেন জিয়াউর রহমান : শেখ হাসিনা

মন্ত্রী জানান, তিনি রাষ্ট্রদূতকে বলেছেন, তারা চাইলে সরকার তাদের জন্য আরও বেশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে। কেউ যদি তাদের আক্রমণ করে বা অপমান করে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। 

শাহীনবাগে যাওয়ার তথ্য কীভাবে প্রচার হলো তা রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চেয়েছিলেন মোমেন। জবাবে পিটার হাস কোনো তথ্য দিতে পারেননি বলে জানান।

মোমেন বলেন, আমি বলেছি, আপনি সেখানে গেছেন এ খবরটা কে প্রচার করল? আমরা তো জানি না। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিছুই জানে না। আপনারা আমাদের জানাননি। সুতরাং এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। এ তথ্য কে লিক করল? তিনি এটার উত্তর দিতে পারেননি।

মোমেন বলেন, আমি তাকে বলেছি, আপনি বের করেন, আপনি ওখানে যাচ্ছেন এটা কেমন করে লোকের কাছে প্রচার হলো? আপনার লোকই-তো প্রচার করতে পারে। তিনি একটু দুশ্চিন্তায় আছেন। আমি তাকে বললাম, আপনার নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব আমাদের। আপনার বা আপনার লোকের ওপর কেউ আক্রমণ করেছে? তিনি বলেছেন, না।

আরও পড়ুন : ৪৫ বছর আগের গুমের ঘটনা তদন্তে মা‌র্কিন রাষ্ট্রদূতকে স্মারকলিপি

দেশের গণমাধ্যম খুব সোচ্চার উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি তাকে বলেছি, গণমাধ্যমকে আটকাতে পারব না। আমাদের দেশের গণমাধ্যম খুব সোচ্চার। যদিও আপনারা বলেন, তাদের কথা বলার স্বাধীনতা নেই। যখনই কিছু হয় তারা ওটার পেছনে লেগে থাকে। আমি তাদের আটকাতে পারব না। আমি তাদের দূরে রাখতে পারি, কিন্তু বাধা দিতে পারব না। আর ওখানে লোকজন যারা গেছে, তাদেরও আমি বাধা দিতে পারব না। তারা তাদের বক্তব্য দেবে। আমি তাদের আটক করতে পারব না।

উল্লেখ্য, বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় যান। সকাল ৯টা ৫ মিনিটে সুমনের বাসায় প্রবেশ করেন তিনি। প্রায় ২৫ মিনিট তিনি সেখানে অবস্থান করেন। এরপর তিনি ওই বাসা থেকে বেরিয়ে যান।

সেখান থেকে বেরিয়ে আসার সময় প্রায় ৪৫ বছর আগের গুমের ঘটনা ও সামরিক শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে রাষ্ট্রদূতের কাছে স্মারকলিপি দেয় ‘মায়ের কান্না’ নামে একটি সংগঠন।

প্রশ্ন উঠেছে, মার্কিন দূত সেখানে যাবেন তা এই সংগঠনের সদস্যরা জানলেন কীভাবে, কে বা কারা তাদের সেখানে পাঠালেন?

এনআই/এসকেডি