দেশের বিদ্যুৎ খাতের অন্যতম বৃহৎ প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকার এ প্রকল্পের নির্মাণকাজের সার্বিক অগ্রগতি ৫৩ শতাংশ। তবে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উৎপাদন ও সঞ্চালন লাইন নির্মাণ নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।

সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০২৩ সালের মধ্যে প্রথম ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা। কিন্তু সঞ্চালন ও গ্রিড লাইন ব্যবস্থা তৈরিতে অগ্রগতি না থাকায় ২০২৪ সালের আগে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব নয় বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। জানা যায়, ২০২২ সালের মধ্যে পাঁচটি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের জন্য ২০১৭ সালে ভারতের সঙ্গে ১.০৬ বিলিয়ন ডলারের অর্থচুক্তি করে বাংলাদেশ। প্রকল্পগুলো হলো- ১. ১৩ কিলোমিটার নদী পারাপারসহ ৪৬৪ কিলোমিটারের ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন, ২. ৭ কিলোমিটার নদী পারাপারসহ ২০৫ কিলোমিটারের ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন, ৩. ৪০০ কেভির পাঁচটি বে-এক্সটেনশন, ৪. ২৩০ কেভির চারটি বে-এক্সটেনশন, ৫. ফ্রিকোয়েন্সি নিয়ন্ত্রণে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার গুণগত উন্নয়ন ও জরুরি নিয়ন্ত্রণ।

২০২২ সালের মধ্যে পাঁচটি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের জন্য ২০১৭ সালে ভারতের সঙ্গে ১.০৬ বিলিয়ন ডলারের অর্থচুক্তি করে বাংলাদেশ। প্রকল্পগুলো হলো- ১. ১৩ কিলোমিটার নদী পারাপারসহ ৪৬৪ কিলোমিটারের ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন, ২. ৭ কিলোমিটার নদী পারাপারসহ ২০৫ কিলোমিটারের ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন, ৩. ৪০০ কেভির পাঁচটি বে-এক্সটেনশন, ৪. ২৩০ কেভির চারটি বে-এক্সটেনশন, ৫. ফ্রিকোয়েন্সি নিয়ন্ত্রণে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার গুণগত উন্নয়ন ও জরুরি নিয়ন্ত্রণ

৪৬৪ কিলোমিটারের ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন প্রকল্পটি সহজ ও দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য চারটি প্যাকেজে বিভক্ত করা হয়। এগুলো হলো- ১. ১০২ কিলোমিটার রূপপুর-বগুড়া লাইন, ২. ১৪৪ কিলোমিটার রূপপুর-গোপালগঞ্জ লাইন, ৩. ১৪৭ কিলোমিটার রূপপুর-ঢাকা লাইন এবং ৪. ৫১ কিলোমিটার আমিনবাজার-কালিয়াকৈর লাইন।

আরও পড়ুন >> রূপপুর প্রকল্পের জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন চুল্লি পাবে বাংলাদেশ

নদীর ওপর দিয়ে ১৩ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন টানার কাজটিও কয়েকটি প্যাকেজ নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে রয়েছে- ছয় কিলোমিটার পদ্মা নদী পারাপার লাইন এবং সাত কিলোমিটার যমুনা নদী পারাপার লাইন।

একইভাবে ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন প্রকল্পটি তিনটি প্যাকেজে বিভক্ত। ১. ৬০ কিলোমিটার রূপপুর-বাঘাবাড়ি লাইন, ২. ১৪৫ কিলোমিটার রূপপুর-ধামরাই লাইন এবং ৩. সাত কিলোমিটার যমুনা নদী পারাপার লাইন।

প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদনে দেখা যায়, রূপপুর থেকে বাঘাবাড়ি লাইনের ৬০ কিলোমিটার অংশের নির্মাণকাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। ব্যয় হয়েছে ২৪৫.৮২ কোটি টাকা। আমিন বাজার থেকে কালিয়াকৈর পর্যন্ত ৫১ কিলোমিটার লাইনের নির্মাণকাজের ৮৭ ভাগ শেষ হয়েছে। ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৭৬ কোটি টাকা। রূপপুর থেকে ঢাকা এবং রূপপুর থেকে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত মোট ২৯৩ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের কাজের অগ্রগতি ৫০ শতাংশের মতো। প্রকল্প দুটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২০০ কোটি টাকা।

সবচেয়ে ধীরগতিতে চলছে রিভার ক্রসিং সঞ্চালন লাইনের নির্মাণকাজ। যমুনা ও পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত ১৬ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের অগ্রগতি মাত্র ২ শতাংশ। ৪০০ কেভি বে-সম্প্রসারণ এবং ২৩০ কেভি বে-সম্প্রসারণের কাজের অগ্রগতি ২৩ শতাংশ

রূপপুর থেকে ধামরাই এবং রূপপুর থেকে বগুড়া পর্যন্ত ২৪৭ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের কাজের অগ্রগতি যথাক্রমে ৪৪ ও ৬০ শতাংশ। মোট নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৮২১ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন >> রূপপুর প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটের পরমাণু চুল্লি উদ্বোধন

তবে, সবচেয়ে ধীরগতিতে চলছে রিভার ক্রসিং সঞ্চালন লাইনের নির্মাণকাজ। যমুনা ও পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত ১৬ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের অগ্রগতি মাত্র ২ শতাংশ। ৪০০ কেভি বে-সম্প্রসারণ এবং ২৩০ কেভি বে-সম্প্রসারণের কাজের অগ্রগতি ২৩ শতাংশ। 

এদিকে, সঞ্চালন লাইন তৈরিতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানি করতে পারছে না পিজিসিবি। চুক্তি অনুযায়ী রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সরবরাহ করত রাশিয়া। বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠান থেকে যন্ত্রাংশগুলো সংগ্রহ করা হতো।। কিন্তু ইউক্রেনের সঙ্গে সংঘাতে জড়ানোর পর সংগ্রহকারী দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এমন অবস্থায় রাশিয়া অন্য দেশ থেকে আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সংগ্রহের অনুরোধ করেছে। চুক্তি অনুযায়ী সেসবের মূল্য পরিশোধ করতে সম্মতিও জানিয়েছে রাশিয়া।

চুক্তি অনুযায়ী রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সরবরাহ করত রাশিয়া। বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠান থেকে যন্ত্রাংশগুলো সংগ্রহ করা হতো। কিন্তু ইউক্রেনের সঙ্গে সংঘাতে জড়ানোর পর সংগ্রহকারী দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এমন অবস্থায় রাশিয়া অন্য দেশ থেকে আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সংগ্রহের অনুরোধ করে

সেই লক্ষ্যে যন্ত্রপাতি আমদানিতে ঋণপত্র খোলার জন্য দুই মাস ধরে বিভিন্ন ব্যাংকে আবেদন করেছে পিজিসিবি। কিন্তু কোনো ব্যাংকই পাঁচ হাজার ২৪০ কোটি টাকার ঋণপত্র খুলতে রাজি হয়নি।

এসব কারণে যথাসময়ে সঞ্চালন লাইন তৈরিতে শঙ্কা প্রকাশ করছেন প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত রূপপুর প্রকল্পের ব্যয় বা মেয়াদ কোনোটাই বাড়ানো হয়নি। কিন্তু সঞ্চালন লাইনের কাজ সময়ের মধ্যে শেষ না হলে সার্বিক ব্যয় বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

সঞ্চালন লাইনের অগ্রগতির বিষয়ে চলতি মাসে (ডিসেম্বর) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান জানান, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঞ্চালন ব্যবস্থাপনার কাজ যথাসময়ে শেষ করতে সমন্বিতভাবে কাজ করছে বিদ্যুৎ বিভাগ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের দাম বাড়াসহ নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন >> রূপপুরে একসঙ্গে কাজ করতে চান রুশ-ইউক্রেনিয়ানরা

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হলেও কাছাকাছি সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে— আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এ বিষয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঞ্চালন লাইন প্রকল্পের পরিচালক কিউ এম শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বেশ কয়েকটি সঞ্চালন লাইনের নির্মাণকাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে, নদীর ওপরে লাইন টানতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আশা করি, যাবতীয় সমস্যা সমাধান করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারব।

ওএফএ/এমএআর/