পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সুইডিশ নাগরিক সৈয়দ আসিফ শাহকার

বাংলাদেশের নাগরিকত্ব চেয়ে এবং বাংলাদেশের মাটিতে সমাহিত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি লিখেছেন সৈয়দ আসিফ শাহকার নামে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত একজন সুইডিশ নাগরিক, যিনি ২০১৭ সালে সুইডিশ হাইকোর্ট বিভাগ থেকে বিচারপতি হিসেবে অবসর নিয়েছেন।  

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। কবে চিঠিটি লেখা হয়েছে প্রতিবেদনে সে বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা না হলেও ‘আমরা একাত্তর’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এ সপ্তাহে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠিতে পৌঁছে দেবে বলে জানিয়েছে।  

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১২ সালের ডিসেম্বরে বিচারপতি শাহকারকে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার’ সম্মাননা দেয়। 

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ঘটানো অপারেশনে গণহত্যার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন বিচারপতি শাহকার। ১৯৭২ সালে তিনি মুক্তি পান। 

আরও পড়ুন : টিআইপির প্রতিবেদনে পাকিস্তানে ফের দুর্নীতিতে শীর্ষে পুলিশ

বিবিসিকে বিচারপতি শাহকার বলেছেন, জেলখানা থেকে ছাড়া পেলেও নিজ দেশ পাকিস্তানে তিনি বিশ্বাসঘাতকের উপাধি পান এবং প্রবল ঘৃণার শিকার হতে থাকেন। অতিষ্ঠ হয়ে ১৯৭৭ সালে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে সুইডেনে চলে যান তিনি। তবে সুইডেনেও তার জীবন কঠিন ছিল। 

তিনি বলেন, পাকিস্তানে কেবল পাকিস্তানিদের ঘৃণার মুখোমুখি হয়েছিলাম আমি, কিন্তু সুইডেনে এসে দেখা গেল সেখানকার বাংলাদেশি কম্যুনিটির মানুষেরা আমাকে পাকিস্তান এবং পাঞ্জাবের বাসিন্দা হিসেবে ১৯৭১ সালের জন্য ঘৃণা করছে। আমি তাদের (সুইডেনে বসবাসরত বাংলাদেশিদের) বোঝাতেই পারছিলাম না আমি বাংলাদেশের জন্য জেল খেটেছি এবং বাংলাদেশের পক্ষ নেওয়ায় আমার নিজের দেশে আমি কী পরিমাণ অপমান, নির্যাতন এবং যন্ত্রণার শিকার হয়েছি।  

এরপর ২০০০ সালে সুইডেনে নিযুক্ত বাংলাদেশ মিশনের একজন কর্মকর্তার সাথে তার পরিচয়ের সূত্রে তিনি প্রথমবার সেখানকার বাংলাদেশিদের মুখোমুখি হয়ে তাদের ভুল ধারণা ভাঙার উদ্যোগ নেন। সে বছরই তিনি বাংলাদেশে আসার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু ২০০১ সালে চারদলীয় জোটের অধীনে নতুন সরকার আসার পর তার সে চেষ্টা থেমে যায়।  

বিচারপতি শাহকার বলেছেন, এরপর ২০১০ সালে তিনি নতুন করে সুইডেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সাথে যোগাযোগ করেন। ২০১২ সালে বাংলাদেশের সরকার ১৯৭১ সালে তার ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে তাকে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার’ সম্মাননা দেয়।

বিবিসিকে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের নাগরিক না হলে যেহেতু সেখানে সমাধিস্থ হতে পারব না, তাই, বাংলাদেশের নাগরিকত্ব চেয়ে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি লিখেছি।  

আরও পড়ুন : একাত্তরে পরাজয় ‘সামরিক ব্যর্থতায়’, পাল্টা দাবি বিলাওয়াল ভুট্টোর

চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ সম্মাননা দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় বলেছিলেন, যে বিদেশি স্বাধীনতা যুদ্ধকে সমর্থন করেছিল তিনিও একজন মুক্তিযোদ্ধা। আপনার কথা আমাকে সরাসরি আপনার কাছে আবেদন করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। 

তিনি আরও বলেনম, আমি বাংলাদেশে টুরিস্ট ভিসা নিয়ে যেতে চাই না, আমি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব চাই, কারণ আমি অন্তর থেকে অনুভব করি পাকিস্তান আমার দেশ না। বাংলাদেশই আমার দেশ।  

এনএফ