প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি পিআইডি।

সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচজন বিশিষ্ট নারীকে ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০২২’ প্রদান করেছেন। পদকপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ, এগিয়ে যাবে নারী সমাজ। 

শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে পাঁচ নারীর হাতে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা। 

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারী জাগরণের মধ্যেই আমাদের সকলের সম্মিলিত অংশগ্রহণে বাংলাদেশকে একটি উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম সেই ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু। ভাষা আন্দোলনে আমাদের নারী-পুরুষ সমানভাবে অংশগ্রহণ করেছে। আমাদের বোনেরাও সেদিন মিছিল নিয়ে মাঠে চলে এসেছিলেন। যে আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই আন্দোলনের পথ দিয়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। 

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী যে গণহত্যা শুরু করেছিল ২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে, সে সময় আমাদের নারীদের যে নির্যাতন তারা করেছিল এবং এ দেশের তাদেরই কিছু দোসর, যারা হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিল আমাদের মা-বোনদের, দিনের পর দিন তাদের  ক্যাম্পে রেখে নির্যাতন করা হয়। 

আরও পড়ুন : ‘তারেককে ধরে এনে সাজা বাস্তবায়ন করব’

শেখ হাসিনা বলেন, নারীকে উন্নয়নের মূলধারায় আনতে সরকার কাজ করছে। নারী ও শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নারীর ক্ষমতায়নে সরকার আন্তরিক। নারীরা সমাজের সব ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। ঘর সামলানো, খেলাধুলা, কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে সব জায়গায় অবদান রাখছে তারা। 

নারীর সংসার সামলানোকে কর্মক্ষেত্রের স্বীকৃতি দিতে হবে বলেও জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা। 

পাঁচ নারীর হাতে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি পিআইডি। 

নারীদের জন্য সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর উচ্চ আদালতে বিচারক ও সশস্ত্র বাহিনীতে অফিসার নিয়োগসহ সব ক্ষেত্রে নারীদের সুযোগ করে দিয়েছে। দেশে জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। নারী-পুরুষ সমানতালে না এগোলে দেশ এগোতে পারে না।’

সরকারপ্রধান বলেন, নারীদের সংসারের কাজও কম নয়, সেটাও কর্মক্ষেত্র। ঘরের কাজ নারী-পুরুষ দুজনে মিলেই ভাগ করে নেন। এতে লজ্জার কিছু নেই। এতে কোনো ক্ষতি হয় না। বরং পরিবারকে সময় দেওয়া যায়। নারী অধিকারে বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন প্রায় পূরণ করতে পেরেছে বাংলাদেশ। সংসদ উপনেতার পদ কোনো নারীকে দিয়েই আমরা পূরণ করব।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সরকারপ্রধান বলেন, করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ইউরোপ-আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা প্রতিটা মানুষের জীবন দুর্বিসহ করে ফেলেছে। শুধু এটা আমাদের দেশে না, উন্নত দেশ আরও খারাপ অবস্থায় আছে। সেজন্য আমি আহ্বান করেছি যার যেটুকু জায়গা আছে, যে যা পারেন উৎপাদন করেন, সাশ্রয় করেন। বিদ্যুৎ, পানি, তেল ব্যবহারে সবাই সাশ্রয়ী হোন, সবাই সঞ্চয়ী হোন। আন্তর্জাতিক বিশ্বে যে ধাক্কাটা লেগেছে সেই ধাক্কাটা যেন না আসতে পারে এজন্য আমাদের নিজেদেরই ব্যবস্থা নিতে হবে। 

আরও পড়ুন : নেতাকর্মীদের বলছি, সবাই প্রস্তুত থাকুন

এ সময় নারী সমাজের অগ্রগতির জন্য সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের চিত্রও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বেগম রোকেয়া পদক পেলেন যারা 
নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান রাখায় চট্টগ্রাম জেলার প্রফেসর কামরুন নাহার বেগম (অ্যাডভোকেট), নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় সাতক্ষীরা জেলার ফরিদা ইয়াসমিন, সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে নারী জাগরণের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় নড়াইল জেলার ড. আফরোজা পারভীন, পল্লী উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় ঝিনাইদহ জেলার নাছিমা বেগম এবং নারী শিক্ষায় বিশেষ অবদান রাখায় ফরিদপুর জেলার রহিমা খাতুন এবার বেগম রোকেয়া পদক পেয়েছেন। 

পদকপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে একটি করে স্বর্ণপদক, চার লাখ টাকার চেক ও সনদ প্রদান করা হয়।


এমএসআই/এনএফ