করোনাকালেও থামেনি সংবাদ সংগ্রহ
২০১৯ সালে ডিসেম্বরের শেষের দিকে পৃথিবীতে আগমন ঘটে করোনাভাইরাস নামে অদৃশ্য এক মহা-শত্রুর। ভাইরাসটি বন্ধ করে দেয় মানুষের সব ধরনের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে। প্রাণ হারায় লাখ লাখ মানুষ। এরপর ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এর ঠিক ১০ দিন পর দেশে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে প্রথম ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
করোনার প্রথমদিকে সবকিছু যখন বন্ধ, তখনও মাঠে ঝুঁকি নিয়ে সক্রিয় ছিলেন গণমাধ্যমকর্মীরা। ভয়াবহ এ ভাইরাস থেকে আত্মরক্ষা করে চলেছিলো সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচার। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন সম্মুখ সারির যোদ্ধা হয়ে। আক্রান্তের পাশাপাশি প্রাণহানির তালিকায়ও ছিলো সাংবাদিকদের নাম।
বিজ্ঞাপন
বিভিন্ন সংস্থার তথ্য থেকে জানা গেছে, করোনাকালে কমপক্ষে ৩৮ জন সাংবাদিক বা সংবাদকর্মীর প্রাণহানি ঘটেছে। তবে সরকারি হিসেবে, গত নভেম্বর পর্যন্ত এর সংখ্যা ৩৭। এর মধ্যে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যান কমপক্ষে ১২ জন গণমাধ্যমকর্মী।
দেশে গত বছর করোনা শনাক্ত হওয়ার পর ভাইরাসটির উপসর্গ নিয়ে প্রথম সাংবাদিক হিসেবে হুমায়ুন কবীর খোকনের মৃত্যু হয়। তিনি দৈনিক সময়ের আলোর নগর সম্পাদক এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সিনিয়র সদস্য ছিলেন। এরপর মে মাসেই আরও পাঁচজন সাংবাদিকের মৃত্যু ঘটে।
২০২০ সালের ৬ মে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারান দৈনিক সময়ের আলোর সিনিয়র সাব-এডিটর মাহমুদুল হাকিম অপু। দৈনিক ভোরের কাগজের ক্রাইম রিপোর্টার আসলাম রহমান মারা যান ৭ মে। এরপর ২০ মে মারা যান দৈনিক বাংলাদেশের খবরের প্রধান আলোকচিত্রী মিজানুর রহমান খান। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও সিনিয়র সাংবাদিক সুমন মাহমুদ করোনা উপসর্গ নিয়ে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় আসগর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ২২ মে। করোনার উপসর্গ নিয়ে চাঁদপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দৈনিক সমাচার ও চাঁদপুর জমিন পত্রিকার ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক আবুল হাসনাত ৩০ মে মারা যান।
তালিকা দেখতে ক্লিক করুন এখানে>>>
জুনেও মৃত্যুর মিছিলে যোগ দেন আরও কয়েকজন সাংবাদিক। এর মধ্যে দৈনিক বগুড়া পত্রিকার বার্তা সম্পাদক ওয়াসিউর রহমান রতন করোনা পরীক্ষা করার লাইনে দাঁড়ানোর পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ১১ জুন তিনি হাসপাতালে মারা যান। সিলেটের আঞ্চলিক নিউজ পোর্টাল আজকের সিলেট ডটকমের (বালাগঞ্জ) প্রতিনিধি লিটন দাস করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন ১৪ জুন। রাজশাহীর আঞ্চলিক দৈনিক সোনালী সংবাদের প্রধান প্রতিবেদক তবিবুর রহমান মাসুম করোনা উপসর্গ নিয়ে ২৮ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
ফেনীর স্থানীয় সাপ্তাহিক হকার্সের প্রকাশক ও সম্পাদক নূরুল করিম মজুমদার করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন ৫ জুলাই। সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মহসিন হোসেন করোনা উপসর্গ নিয়ে ১৯ জুলাই মারা যান। খুলনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ওয়াদুদুর রহমান পান্না ভাইরাসটির উপসর্গ নিয়ে মারা যান ২২ আগস্ট। দৈনিক নয়া দিগন্তের সাবেক অতিরিক্ত বার্তা সম্পাদক হুমায়ুন সাদিক চৌধুরী মারা মারা যান ২৬ নভেম্বর।
এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমের মধ্যে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি, যমুনা টিভি, দীপ্ত টিভি, এটিএন নিউজ, আমাদের নতুন সময়, একাত্তর টিভি, বাংলাদেশের খবর, মাছরাঙা টিভি, শীতলক্ষ্যা পত্রিকা, রেডিও টুডে, ভোরের কাগজ, চ্যানেল আই, দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ, অনলাইন নিউজ পোর্টাল পূর্বপশ্চিম, দৈনিক আজকালের খবর, অনলাইন পোর্টাল বিবার্তা, দৈনিক কালের কণ্ঠ, এনটিভি, আরটিভি, বাংলাভিশন, এসএ টিভি, দৈনিক সময়ের আলো, ইত্তেফাক, দেশ টিভি, বিটিভি, ডিবিসি দেশ রূপান্তরসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও কর্মীরা করোনায় আক্রান্ত হোন।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গত নভেম্বরে এক অনুষ্ঠানে তথ্য দিয়ে বলেছেন, ওই সময় পর্যন্ত ৩৭ জন সাংবাদিক ও সংবাদকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকর্মীদের করোনাকালের নির্ভীক যোদ্ধা হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, করোনার শুরু থেকেই ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে সাংবাদিকরা কাজ করে চলেছেন। সত্যিই এটি প্রশংসনীয়। আমি কোনো সাংবাদিককে ভীতি নিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে দেখিনি। এতে করে আমার অনেক ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক মৃত্যুবরণ করেছেন। যা আমি কখনও ধারণা করতে পারিনি।
করোনাভাইরাস মহামারিতে গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকতা মুখোমুখি হয় নতুন এক চ্যালেঞ্জের। সব মিলিয়ে এক নতুন রাস্তা তৈরি করতে হয়েছে তাদের। এছাড়াও লকডাউন, কারফিউ কিংবা চলাচলে নিয়ন্ত্রণের কারণে এ সময় কমে গিয়েছিলো ছাপা কাগজের প্রচার সংখ্যা। তবে জনপ্রিয়তা পায় অনলাইন পত্রিকা।
পিএসডি/এমএইচএস