কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল

কুয়েতের আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের দুর্নীতির সম্পৃক্ততায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির তিন নেতার পারিবারিক সদস্যদের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করতে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোববার (৭ মার্চ) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিটের (বিএফআইইউ) মহাব্যবস্থাপক বরাবর এ চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিটি দুদকের মানিলন্ডারিং ইউনিটের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে বলে সংস্থাটির জনসংযোগ দফতর ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছে।

যাদের হিসাব ফ্রিজ করতে চিঠি দিয়েছে তারা হলেন- লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন ও তার স্ত্রী রুবিনা ইয়াসমিন লুবনা, তাদের সন্তান নভেরা শামস চৌধুরী ও নুসাইয়া শামস নেহা; ম্যাকসন্স গ্রুপের মালিক ও সাবেক যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী খোকন ও তার স্ত্রী লায়লা আলী, তাদের সন্তান সানজিদ হাসান ও লাভিল হাসান এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের সাবেক উপদেষ্টা ও লক্ষ্মীপুরের টুমচরের বাসিন্দা মোহাম্মদ নোমান ও তার স্ত্রী শামসুন নাহার।

দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের সই করা চিঠিতে হিসাব ফ্রিজ বা অবরুদ্ধ করার পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় নথিপত্র তলব করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের বিষয়ে কানাডা, আমেরিকা, দুবাই ও কুয়েতের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোনো হিসাব আছে কি না বিএফআইইউকে সে বিষয়ে তথ্য যাচাই করতে অনুরোধ করেছেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে-বেনামে দেশি-বিদেশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত হিসাবসমূহ স্থগিত করে জরুরি ভিত্তিতে তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করতে অনুরোধ করা হয়েছে। কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল কুয়েতে মানবপাচার করে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এর আগে ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর আদালতের অনুমতি নিয়ে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল, তার স্ত্রী এমপি সেলিনা ইসলাম, শ্যালিকা জেসমিন প্রধান এবং মেয়ে ওয়াফা ইসলামের নামের ৬১৩টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ বা অবরুদ্ধে চিঠি দেয় দুদক। ওই চিঠিতে পাপুল, তার স্ত্রী, শ্যালিকা ও মেয়ের নামে থাকা হিসাবের বিষয়ে ৮টি ব্যাংকের এমডিকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এছাড়া তাদের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা মোট ৩০.২৭ একর জমি ও গুলশানের ফ্ল্যাট অ্যাটাচমেন্টের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

২০২০ সালের ১১ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল এবং তার স্ত্রী এমপি সেলিনা ইসলাম, শ্যালিকা জেসমিন প্রধান এবং মেয়ে ওয়াফা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। আসামিদের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ ও ১৪৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয় মামলায়।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামিদের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ ও ১৪৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের আড়ালে জেসমিন প্রধানের পাঁচটি হিসাবের মাধ্যমে ২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পাচার হয় ১৪৮ কোটি টাকা। অথচ মাত্র ২৩ বছর বয়সী জেসমিনে নিজের কোনো আয়ের উৎস নেই।

অন্যদিকে এফডিআর হিসাবের ২ কোটি ৩১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৮ টাকার কোনো উৎস পাপুলের শ্যালিকা জেসমিন দাখিল করতে পারেননি। যে কারণে অবৈধ সম্পদের অভিযোগে কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল, তার স্ত্রী এমপি সেলিনা ইসলাম, শ্যালিকা জেসমিন প্রধান এবং মেয়ে ওয়াফা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

অর্থ ও মানব পাচারের মামলায় গত ২৮ জানুয়ারি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় কুয়েতের আদালত। পাশাপাশি তাকে ১৯ লাখ কুয়েতি রিয়াল বা ৫৩ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। গত বছরের ৬ জুন রাতে কুয়েতের বাসা থেকে আটক করা হয় তাকে। আটকের সাড়ে সাত মাস ও বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর সাড়ে তিন মাসের মাথায় দণ্ডিত হন কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল। নৈতিক স্থলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে চার বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ায় লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের পদ বাতিল করা হয়। ওই আসন শূন্য ঘোষণা করে গত ২২ ফেব্রুয়ারি গেজেট প্রকাশ করে জাতীয় সংসদ সচিবালয়।

আরএম/এইচকে