ড. রহিমা খাতুন, জেলা প্রশাসক, মাদারীপুর

অদম্য সাহস ও মনোবল থাকলে ব্যর্থ হওয়ার পরও মানুষ সফল হয়। এমনটাই প্রমাণ করলেন ড. রহিমা খাতুন। বর্তমানে তিনি মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি)। অথচ একসময় স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হবেন। দিয়েছিলেন ভর্তি পরীক্ষাও। কিন্তু সেই যাত্রায় সফল হননি। তাই বলে থেমে যাননি। কিছু একটা করতেই হবে— দৃঢ় এ মনোবল নিয়ে এগিয়ে গেলেন। তিনি এখন মাদারীপুর জেলার প্রধান প্রশাসনিক ও রাজস্ব কর্মকর্তা।

নারী দিবস উপলক্ষে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন ড. রহিমা খাতুন। জানিয়েছেন, নিজের বিষয়ে জানা-অজানা নানা তথ্য। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাকা পোস্টের নিজস্ব প্রতিবেদক শাহাদাত হোসেন।

ঢাকা পোস্ট : ভবিষ্যতে কী হতে চেয়েছিলেন, যদি বলতেন…

রহিমা খাতুন : আমার জীবনের প্রথম লক্ষ্য ছিল ডাক্তার হব। মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষাও দিয়েছিলাম, কিন্তু চান্স (সুযোগ) পাইনি। তবে মনোবল হারাইনি। ভালো কিছু করব, করতেই হবে এবং ভালো জায়গায় পৌঁছাতে হবে— দৃঢ় এ মনোবল নিয়ে পড়াশোনা করেছি।

মা ইলিশ রক্ষায় রাতভর নদীতে অভিযান চালান মাদারীপুরের ডিসি রহিমা খাতুন

বাবার ইচ্ছা ছিল, আমি সরকারি চাকরি করব। যদিও তিনি এখন নেই, ২০০৮ সালে মারা গেছেন। বাবার ইচ্ছা থেকেই প্রশাসন ক্যাডারে আসি। এখানে আসার আগে দুই বছর ঢাকা সিটি কলেজের প্রভাষক ছিলাম।

ভালো কিছু করব, করতেই হবে এবং ভালো জায়গায় পৌঁছাতে হবে— দৃঢ় এ মনোবল নিয়ে পড়াশোনা করেছি

ড. রহিমা খাতুন, জেলা প্রশাসক, মাদারীপুর

ঢাকা পোস্ট : বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে চাকরি পাওয়ার অনুভূতিটা কেমন ছিল?

রহিমা খাতুন : আসলে আমি তো বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে পড়াশোনা করেছি। এই বিষয়গুলো (প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি) আমার আগে ভালো লাগত না। আমার প্রথম ইচ্ছা ছিল, ডাক্তার হওয়ার। সেটি হলো না। দ্বিতীয় ইচ্ছা ছিল, সায়েন্টিস্ট (বিজ্ঞানী) হব, গবেষণা করব। এ লাইনে (প্রশাসনে) আমার চিন্তাধারা ছিল না। বন্ধু-বান্ধব সবাই পরীক্ষা দিচ্ছে, ফরম ফিল-আপ করছে, তাই আমিও তাদের দেখাদেখি করেছি।

আমার নিজের ততটা ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু আমার বাবা যেহেতু চাইতেন সেজন্যই এখানে আসা। তবে এত বড় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে পাস করা, প্রতিটা ধাপে ধাপে উৎসাহিত হয়েছি, ভালো লেগেছে। প্রিলিমিনারিতে এত মানুষের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছি, যখন নিজের রোল নম্বর দেখেছিলাম, তখন অনেক ভালো লেগেছিল। ভাইভার (মৌখিক) ফলাফল যখন দেবে, তখন খুবই চিন্তিত ছিলাম। সবশেষে চূড়ান্ত উত্তীর্ণের তালিকায় নিজের রোল নম্বরটা দেখে খুব ভালো লেগেছিল।

নারী বলে কাজ করতে পারছি না বা পুরুষরা ওই সুবিধা বেশি পাচ্ছে— এমন কিছুই আমি অনুভব করিনি। আমি মনে করি, ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের জন্য কাজ করাটা বেশি সুবিধার

ড. রহিমা খাতুন, জেলা প্রশাসক, মাদারীপুর

মাদারীপুরে মধুকোষের মোড়ক উন্মোচন করলেন রহিমা খাতুন

ঢাকা পোস্ট : এ পেশায় কোনো চ্যালেঞ্জ দেখছেন কি না?

রহিমা খাতুন : চাকরিজীবনের শুরু থেকেই কোনো জায়গায় কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হইনি। নারী বলে কাজ করতে পারছি না বা পুরুষরা ওই সুবিধা বেশি পাচ্ছে— এমন কিছুই আমি অনুভব করিনি। আমি মনে করি, ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের জন্য কাজ করাটা বেশি সুবিধার। আর বর্তমানে মানুষ আমাদেরকে ইতিবাচকভাবেই দেখছে।

কাজের ক্ষেত্রে আমি তেমন কোনো চ্যালেঞ্জ দেখছি না। তবে মেয়েদেরকে কাজ করতে গেলে অনেক কিছু সামলাতে হয়। যেমন— পরিবার, বাচ্চা। 

মানুষ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমার কাছে আসেন, সমাধান দিতে পারলে তাদের মুখে হাসি ফোটে। এটা আমার কাছে আনন্দের বিষয়

ড. রহিমা খাতুন, জেলা প্রশাসক, মাদারীপুর

ঢাকা পোস্ট : জেলা প্রশাসক হওয়ার পেছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি? 

রহিমা খাতুন : আমি অবশ্যই আমার বাবার কথা প্রথমে বলব। বাবার অবদান ও প্রচেষ্টা, মায়ের দোয়া, ভাই-বোনদের অনুপ্রেরণা ছিল। এছাড়া ছিল নিজের চেষ্টা। সবকিছু মিলিয়ে আল্লাহর হুকুম ছিল। সেজন্যই এ পর্যায়ে আসতে পেরেছি।

ঢাকা পোস্ট : চিকিৎসক হতে চেয়েছিলেন, হয়েছেন জেলা প্রশাসক। বিষয়টি ভাবলে কেমন লাগে...

রহিমা খাতুন : আসলে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। মানুষের সেবা করার জন্য আল্লাহ আমাকে সুযোগ দিয়েছেন। এজন্য শুকরিয়া আদায় করছি। মানুষ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমার কাছে আসেন, সমাধান দিতে পারলে তাদের মুখে হাসি ফোটে। এটা আমার কাছে আনন্দের বিষয়। কারণ উপকার করতে পারলে সবার কাছেই ভালো লাগে। 

এসএইচআর/এফআর/এমএআর/এমএমজে