ছবির প্রথম সারিতে- এম এ আজিজ ও ইকবাল আর্সলান, দ্বিতীয় সারিতে- কনক কান্তি ও কামরুল হাসান খান

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) পঞ্চম জাতীয় ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে শুক্রবার (২৫ নভেম্বর)। এবারের সম্মেলনে কমিটি নিয়ে থাকবে বিশেষ চমক। 

আওয়ামী লীগের একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সভাপতি প্রায় চূড়ান্ত হলেও সাধারণ সম্পাদক পদে হেভিওয়েট ডজনখানেক প্রার্থী থাকায় দ্বিধায় পড়েছে দলটির শীর্ষ নেতারা। তবে, কমিটিতে নতুনত্ব আসার সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছেন তারা।

স্বাচিপ সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে সারা দেশ থেকে আসা ১৫ হাজারেরও বেশি স্বাচিপ নেতাকর্মী অংশ নেবেন।

এদিকে, আসন্ন সম্মেলনকে সফল করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও প্রখ্যাত নিউরোসার্জন অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বড়ুয়াকে চেয়ারম্যান, ডা. কাজল কুমার কর্মকারকে কো-চেয়ারম্যান, অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনকে সদস্য সচিব করে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠিত হয়েছে।

কে হচ্ছেন স্বাচিপ সভাপতি?

সম্মেলনকে সামনে রেখে পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা গেছে। বেশি কিছুদিন ধরে পদপ্রত্যাশীরা আকাঙ্ক্ষিত পদের জন্য আওয়ামী লীগদের শীর্ষ নেতাদের কাছে লবিং ও তদবির করছেন বলে জানা গেছে। তবে একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সভাপতি মনোনয়ন প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। কে হচ্ছেন স্বাচিপ সভাপতি— এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কারও নাম না জানালেও সূত্র বলছে বিএসএমএমইউর সাবেক ভিসি প্রখ্যাত নিউরোসার্জন অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া, বর্তমান মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দুজনেই প্রধানমন্ত্রীর গুডবুকে আছেন। এর বাইরে দ্বিতীয় সারির পছন্দের তালিকায় রয়েছেন বিএসএমএমইউর আরেক সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান এবং বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বাচিপ নেতা বলেন, আসন্ন সম্মেলনে বর্তমান মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজকে নতুন সভাপতি হিসেবে দেখা যেতে পারে। তিনি একজন পরীক্ষিত ও স্বচ্ছ ইমেজের সংগঠক। ছাত্রজীবন থেকে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারাবরণের পর তার মুক্তির দাবিতে এবং করোনাকালীন মহামারি নিয়ন্ত্রণে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। এছাড়াও প্রথা অনুযায়ী স্বাচিপ মহাসচিব পদে যারা থাকেন, তারা পরবর্তী সময়ে সভাপতি হয়ে থাকেন। সারা দেশে ডা. আজিজের অনুসারীরা তাকে সভাপতি হিসেবে দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। 

তবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের অন্যতম একজন। চিকিৎসা বিদ্যায় অবদানের জন্য তিনি ২০২২ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এছাড়াও তিনি আওয়ামী লীগের একজন দক্ষ সংগঠক। এদিকে, সামনের বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এক্ষেত্রে নতুন সভাপতিকে দক্ষতার সঙ্গে স্বাচিপকে নিয়ে মাঠে থাকতে হবে। এ পরিস্থিতি বিবেচনায় এই পরীক্ষিত ও সাহসী নেতাকে সামনে রেখেই কমিটি গঠিত হতে পারে।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপচারিতায় অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান / ফাইল ছবি

মহাসচিব পদে আসতে চান ডজনখানেক চিকিৎসক নেতা

সভাপতি মনোনয়ন নিয়ে সহজেই সিদ্ধান্তে পৌঁছালেও মহাসচিব পদে বাছাই নিয়ে অনেকটাই বিপাকে পড়েছে আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যেই ডজনখানেক চিকিৎসক নেতা কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতাদের মাধ্যমে জোর তদবির চালিয়েছেন। এই অবস্থায় ‘কাকে রেখে, কাকে পদ দেবেন’ এনিয়ে দ্বিধায় পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেও। সবশেষে কে বসছেন আকাঙ্ক্ষিত সেই চেয়ারে— এনিয়ে মেলেনি কোনো সদোত্তর। নানা আলোচনা-পর্যালোচনা শেষে বিষয়টি নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ওপরই। শেষপর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন তিনিই বসবেন এই চেয়ারে।

জানা গেছে, মহাসচিব পদেও বর্তমান মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজের নাম রয়েছে আলোচনার শীর্ষে। যদি সভাপতি পদে তিনি মনোনয়ন না পান, তাহলে মহাসচিব পদে তিনিই থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়াও স্বাচিপের বর্তমান কোষাধ্যক্ষ ও স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির, স্বাচিপ কেন্দ্রীয় নেতা এবং বিএসএমএমইউয়ের নিউরোসার্জারি বিভাগের ডিন ও নিউরোসার্জন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. শাহরিয়ার নবী শাকিল আলোচনায় আছেন।

এছাড়াও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জুলফিকার আলী লেলিন, সিলেট মেডিকেল কলেজের নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু, নিপসম পরিচালক ডা. বায়েজীদ খুরশীদ রিয়াজ এবং ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিটিজের (এফডিএসআর) সভাপতি অধ্যাপক ডা. আবুল হাসনাৎ মিল্টন, বিএসএমএমইউ নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও বিশ্বিবদ্যালয় শাখা স্বাচিপের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিজভী, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মো. তারিক মেহেদী (পারভেজ)-এর নামও শোনা যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী যাকেই নির্বাচিত করবেন, তিনিই হবেন সবার নেতা

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তে যারাই সভাপতি ও মহাসচিব হবেন, তা সবাই একবাক্যে মেনে নেবেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সঙ্গে যুক্ত নেতা-কর্মীরা। এ বিষয়ে মহাসচিব পদ প্রত্যাশী অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি চাই দলের জন্য মঙ্গলজনক হয় এমন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হোক। যারা লুটেরা, যারা পার্টির ইমেজ নষ্ট করবে, সেই সমস্ত লোক যেন না আসে। 

তিনি বলেন, আমার চাওয়া দায়িত্বে এমন কেউ আসুক যিনি হবে সাংগঠনিক, যারা দুঃসময়ে দুর্দিনে দলের সঙ্গে ছিল এবং আগামীতেও যদি দলগুলো ক্রাইসিসে পরে তারা হাল ধরবে। এক্ষেত্রে আমাকে যদি কোনো পদ নাও দেওয়া হয়, এ নিয়ে আমার কোনো আপত্তি থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী যাকেই নির্বাচিত করবেন তিনিই হবেন আমাদের নেতা।

আরেক পদপ্রত্যাশী অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি চাই পরীক্ষিত-ত্যাগী হতে হবে, সাংগঠনিক হতে হবে, সেইসঙ্গে প্রফেশনাল (পেশা) হতে হবে। পেশার বাইরে থেকে যেন কেউ না আসে। অনেক ডাক্তারদের দেখি শুধু রাজনীতিই করে, ডাক্তারির সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। এমন হলে তো হলো না। এক্ষেত্রে আমি চাইবো আবার এমন কেউ আসুক যিনি হবেন সৎ। তার সততা নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকবে না। 

বিভক্তি নেই, সারা দেশের স্বাচিপ ঐক্যবদ্ধ : এম এ আজিজ

বর্তমান মহাসচিব ও সভাপতি পদপ্রত্যাশী অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সম্মেলনকে ঘিরে আমি নিজেকে নিয়ে কোনো কাজ করছি না। যেহেতু সম্মেলন নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছি, সম্মেলনটি কীভাবে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে শেষ করা যায় সেটা নিয়েই কাজ করছি। আমি দীর্ঘদিন স্বাচিপের নেতৃত্ব দিয়েছি, সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি। ব্যক্তিগতভাবে কোনরূপ বিভেদকে প্রশ্রয় দেইনি। আমি মনে করি অতীতের ন্যায় বর্তমানেও সারা দেশের স্বাচিপ নেতারা ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনেই নেতৃত্ব নির্ধারিত হবে।

তিনি বলেন, এই সম্মেলনে যেহেতু প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, সারা দেশের স্বাচিপ নেতাকর্মীরাই সেখানে অংশগ্রহণ করবেন। আমরা আশা করছি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমাদের সম্মেলনে এবার সর্বাধিক চিকিৎসক উপস্থিত থাকবেন। ইতোমধ্যে একটা উৎসব মুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয় অধিবেশনের সার্বিক কার্যক্রম ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলন সফল করতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন নেতাকর্মীরা। 

এম এ আজিজ আরও বলেন, স্বাস্থ্য খাতে সরকারের যে সফলতা, কোভিডকালীনও শেখ হাসিনা আমাদের চিকিৎসকদের যে সাপোর্ট দিয়েছেন, হাজার হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছেন, এমনকি তাদের বিশেষ প্রণোদনাও দিয়েছেন। আশা করছি সম্মেলনের তিনি চিকিৎসকদের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দেবেন, স্বাস্থ্য সেক্টরে কীভাবে আরও সুন্দরভাবে কাজ করতে পারে সেই নির্দেশনা দেবেন।

সমালোচনাগুলোও প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌঁছাতে চাই : কামরুল হাসান খান

চিকিৎসকদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া প্রসঙ্গে স্বাচিপ নিয়ে চিকিৎসক সমাজের নানা অভিযোগ রয়েছে বলে মনে করেন অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, শুধু ভালো বিষয়গুলো নয়, বিভিন্ন দাবিসহ সমালোচনাও আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছাতে চাই। কারণ, এতে করে আমার দলই উপকৃত হবে।

চিকিৎসকদের পক্ষে স্বাচিপ কতটুকু ভূমিকা রাখছে জানতে চাইলে কামরুল হাসান খান বলেন, আমাদের সবার আগে জানতে হবে স্বাচিপের মূল কাজ কী। স্বাচিপ হলো আওয়ামী লীগের একটি ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। এক্ষেত্রে স্বাচিপের কিছু সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব রয়েছে। প্রথমত বঙ্গবন্ধুর আদর্শে যেসব চিকিৎসক রয়েছে, তাদের সংঘটিত করা। তবে নানা সময়ে চিকিৎসকদের দাবি-দাওয়া প্রসঙ্গে বলা হয়, স্বাচিপ কোনো ভূমিকা রাখছে না। আমি মনে করি এটি স্বাচিপের মূল কাজ। 

তিনি আরও বলেন, স্বাচিপের দায়িত্ব হচ্ছে সরকারের কাছে চিকিৎসা বিষয়ে বিভিন্ন সমস্যাগুলো উপস্থাপন করা। এক্ষেত্রে ক্যামেরার সামনে না বললেও নিজস্ব দলীয় ফোরামগুলোতে তো অন্তত বলা যেতে পারে। এমন কোনো বিষয় কি আছে, যা নিজের সংগঠনকে বলা যাবে না? শুধু যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলতে হবে, তা তো নয়। প্রধানমন্ত্রী আলাদা একটি স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটি করে দিয়েছে।

আশাবাদ ব্যক্ত করে এই চিকিৎসক নেতা বলেন, আমি এ পর্যন্ত অসংখ্য বড় বড় সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছি। আমি ঢাকা মেডিকেল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলাম, এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। সাবেক পিজি হাসপাতালের বর্তমান নামটাও আমার দেওয়া। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনে (বিএমএ) আমি দীর্ঘদিন কাজ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর ওপর গ্রেনেড হামলার পর আমরা সমস্ত পেশাজীবী সংগঠনগুলো মিলে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ করেছি এবং সেটার আমি মহাসচিব। আমি মেডিকেল শিক্ষায়ও প্রচুর কাজ করেছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কোনো বিষয় নেই, যেখানে আমার সম্পৃক্ততা নেই।

ডাক্তার বা আমলা বড় কথা নয়, সৎ হওয়া জরুরি : আবু ইউসুফ ফকির

অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির ঢাকা পোস্টকে বলেন, নির্বাচিত হলে আমি প্রথমত শেখ হাসিনার লোকদের দেখব। দলের দুঃসময়ে কারা ছিল, তাদের আমি খুঁজে বের করব। এক্ষেত্রে কে কোন গ্রুপ করেছে, কে কার জন্য লবিং করেছে বা কে আমার বিরোধিতা করেছে— এগুলো আমি খুঁজবো না। 

তিনি বলেন, আমি সবাইকে নিয়েই একসঙ্গে কাজ করব। বিশেষ করে ২০০২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত যেসব চিকিৎসকরা ভোগান্তি স্বীকার হয়েছে, তাদের সবসময় প্রায়োরিটি দেব। এমনকি কে কোন মেডিকেল, সেটা আমি দেখব না।

চিকিৎসকদের দীর্ঘদিনের দাবি নিজেরাই নিজেদের মন্ত্রণালয় চালাবে— নির্বাচিত হলে এবিষয়টি নিয়ে আপনার কার্যক্রম কী হবে? জানতে চাইলে এই নেতা বলেন, আমি বিশ্বাস করি না ডাক্তাররা মন্ত্রণালয় চালালেই সেটি অনেক বেশি ভালো চলবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেও আমরা কিছু ডাক্তারকে বসিয়েছি, তারা তো টাকা পয়সা ছাড়া কোনো কথা বলে না… তাহলে লাভ কী? এজন্য আমি চাই সৎ, যোগ্য ভালো একজন লোক, যিনি আবার আমার দলের প্রতিও আন্তরিক হবে। সেই ব্যক্তি ডাক্তার হোক বা আমলা হোক আমার কিছু যায় আসে না।

স্বাচিপকে ঢেলে সাজাতে চান মনিলাল আইচ লিটু

দায়িত্ব পেলে আপনার পরিকল্পনা এবং কাজ কী হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ডা. লিটু বলেন, নেত্রী যদি আমার ওপর আস্থা রাখেন, তাহলে অবশ্যই আমি স্বাচিপকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করব।

বর্তমান স্বাচিপ নিয়ে আপনার কোনো পর্যবেক্ষণ আছে কি না—এবিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের হাতে গড়া স্বাচিপকে দেখছি গ্রুপিং, দল-উপদলে বিভক্ত হতে হতে আগের মত সেই স্বাচিপ এখন নেই। ১৯৯৩ সালে যেই স্বাচিপ আমরা শুরু করেছিলাম, এখন দেখি তখন কার সঙ্গে বিস্তর ফারাক। বিশেষ করে বর্তমান কমিটিতে যে বিভক্তি আর অনৈক্য চলে আসছে, তা আমি আর কখনো দেখিনি। এ বিভক্তির কারণে অনেক ত্যাগী নেতাই মূল্যায়ন পাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, ১৯৯৩ সালে এই সংগঠনটি তৈরি হওয়ার আগেই আমি তৈরি করার জন্য বিভিন্ন দিকে দৌড়াদৌড়ি করেছি। যার ফলে হয়তো সেই প্রথম কমিটি থেকে শুরু করে ২০১৫ সাল পর্যন্ত স্বাচিপের কার্যকরী কমিটিতে আমাকে রাখা হয়েছিল। কিন্তু পরে সর্বশেষ যে কমিটি হয়েছে, সেখানে আমাকে কোনো মূল্যায়নই করেনি। সভাপতি-সেক্রেটারি মিলে নিজেদের পছন্দমতো লোক নিয়েছে। এর ফলে আমার মত ত্যাগী অনেকেই কমিটি থেকে ছিটকে পড়েছে। কারণ, আমরা কারও পকেটের নই। আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো গ্রুপ করি না।

দলের প্রয়োজনে দেশে ফিরতে প্রস্তুত আবুল হাসনাৎ মিল্টন

প্রবাসী চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. আবুল হাসনাৎ মিল্টন বলেন, আমি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের জন্মের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলাম। কেন, কোন পরিস্থিতিতে, নিজের প্রভাবশালী অংশের বিরোধিতা সত্ত্বেও স্বাচিপের জন্ম হয়েছিল, অনেকের চেয়ে আমি ভালো করে জানি। এই সংগঠনটির সঙ্গে আমার আত্মার সংযোগ। সম্মিলিতভাবে আমরা এই সংগঠনটিকে শেখ হাসিনার অনুপ্রেরণায় এবং ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে প্রকৃত অর্থে একটি আদর্শিক সংগঠনে পরিণত করেছিলাম।

সমালোচনা করে তিনি বলেন, কথা ছিল বঙ্গবন্ধুর গণমুখী স্বাস্থ্যব্যবস্থা বাস্তবায়নে স্বাচিপ অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। আমরা স্বপ্ন দেখতাম স্বাস্থ্যখাতের সব দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে স্বাচিপ সোচ্চার থাকবে। আমরা সবসময় ভাবতাম, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশিত পথে স্বাস্থ্যখাতের সংস্কার ও পরিবর্তনে স্বাচিপ নেতৃত্ব দেবে। কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকরা নির্যাতিত হলে স্বাচিপ তার প্রতিবাদ করবে। আমাদের সেই স্বপ্ন ও ভাবনারা অনেকদিন হয়ে গেলো পথ হারিয়েছে। স্বাচিপকে দেখে দূর থেকে আজকাল অনেকটাই চেনা যায় না। 

ডা. মিল্টন বলেন, আমি মনোনীত হলে সবাইকে নিয়ে স্বাচিপের রিব্র্যান্ডিং করবো। সমস্যা সমাধানে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত সবাই মিলে কাজ করবো। ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতার মিশেলে আমরা চাইলেই আমূল বদলে দিয়ে স্বাচিপকে একটি কার্যকর সংগঠনে পরিণত করা সম্ভব। শক্তিশালী স্বাচিপ মানে শেখ হাসিনার হাত আরও বেশি শক্তিশালী হওয়া। স্বাচিপ পুনর্গঠনের সেই লড়াইয়ে আমি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে চাই। সন্তানের প্রয়োজনে মা যেভাবে সব ছেড়ে এগিয়ে আসেন, অনেকটা সেরকম ভাবেই। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা চাইলে দলের প্রয়োজনে যে কোন মুহূর্তেই আমি দেশে ফিরতে প্রস্তুত।

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। বুধবার (২৩ নভেম্বর) ভোর থেকে উদ্যানে সাধারণ দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। এরই মধ্যে সম্মেলনের প্রস্তুতি কমিটি গঠনের মাধ্যমে সম্মেলন সফল করতে দিনরাত কাজ চলছে।

এর আগে ২০১৫ সালের ১৩ নভেম্বর স্বাচিবের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি ৫ বছর পর পর সংগঠনটির সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারির কারণে সময়মত স্বাচিবের সম্মেলন আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। তবে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলানকে সভাপতি ও অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হয়।

টিআই/এসএম