বিপর্যয়েও গ্রামীণ অর্থনীতির ভরসা ছিলেন তারা
'ভিনগ্রহ’ থেকে আসা এক ভাইরাসে স্থবির ছিল ২০২০ সাল। প্রাণঘাতী সেই ভাইরাস থেকে বাঁচতে সবাই যখন নিজ নিজ সুরক্ষা নিয়ে ব্যস্ত, ঠিক তখনই স্রোতের বিপরীতে হেঁটেছেন কেউ কেউ। এসব নিবেদিত প্রাণের কারণে করোনাযুদ্ধে সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। সবার মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দিতে, একইসঙ্গে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সদা মাঠেই ছিলেন তারা। যাদের কারণে দেশ খাদ্য সংকটে পড়েনি।
বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন অধিদফতর ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা নিরলসভাবে কাজ করেছেন। এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৯২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ২২ জন
বিজ্ঞাপন
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, করোনার আঘাত সইতে হয়েছে শতাধিক গবেষক, বিজ্ঞানী, মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সর্বোপরি মাঠ আগলে রাখা কৃষককে। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে কেউ বেঁচে ফিরেছেন, কেউ আবার পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। করোনাকালে দায়িত্ব পালনে বিন্দুমাত্র অবহেলা করেননি তারা। বরং মাঠে থেকে খাদ্যশস্য উৎপাদনে দিয়েছেন নেতৃত্ব। শ্রমিক সংকট থেকে শুরু করে নানা প্রতিবন্ধকতা সামলেছেন সফলভাবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. দেলোয়ার হোসেন এ প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন অধিদফতর ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা নিরলসভাবে কাজ করেছেন। এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৯২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ২২ জন।
কৃষি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সবার সম্মিলিত পরিশ্রমেই আমরা মূলত করোনায় খাদ্য ঘাটতিতে পড়িনি। নইলে বর্তমান সময়ে এসে দেশের মানুষকে না খেয়ে থাকতে হতো
কৃষিবিদ মো. আসাদুল্লাহ, মহাপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন সবচেয়ে বড় দফতর হলো কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। এ অধিদফতরের কর্মীরা সবচেয়ে বেশি মাঠপর্যায়ে কাজ করেন। অধিদফতরের মহাপরিচালক থেকে শুরু করে প্রায় ৪৭৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাণ গেছে ১৩ জনের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. আসাদুল্লাহ নিজেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আসলে আমরা যদি ঘরে থাকতাম তাহলে দেশের খাদ্যশস্য উৎপাদনের এই ধারাবাহিকতা থাকত না। করোনায় আক্রান্ত সময়টুকুই চিকিৎসা নিয়েছি। সুস্থ হয়ে আবার মাঠে নেমে কাজ করে যাচ্ছি।’
এ কৃষিবিদ বলেন, কৃষি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সবার সম্মিলিত পরিশ্রমেই আমরা মূলত করোনায় খাদ্য ঘাটতিতে পড়িনি। নইলে বর্তমান সময়ে এসে দেশের মানুষকে না খেয়ে থাকতে হতো। অথবা অনেক বেশি দামে আমদানি করা খাদ্যশস্যের ওপর নির্ভর করতে হতো। আমাদের জন্য এটা কত বড় দুর্বিষহ হতো তা বলে বোঝানো যেত না।
করোনাকালে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের ছয়জন কৃষিবিজ্ঞানী ও কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। আমাদের মধ্যেও ভয় ছিল, কিন্তু সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে পিছপা হইনি
ড. মো. নাজিরুল ইসলাম, মহাপরিচালক, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. নাজিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘করোনাকালে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের ছয়জন কৃষিবিজ্ঞানী ও কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। তবে করোনার সময় আমাদের গবেষণা থেকে শুরু করে সবধরনের কাজ চলমান ছিল। আমাদের মধ্যেও ভয় ছিল, কিন্তু সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে পিছপা হইনি।’
জীবনের মায়া তো সবারই আছে। কে চান ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে? কিন্তু আমরা করেছি। কারণ, কৃষিকে বাঁচিয়ে রাখাই আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব
ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম, মহাপরিচালক, বিনা
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলামও দায়িত্বপালনরত অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এই গবেষক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘জীবনের মায়া তো সবারই আছে। কে চান ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে? কিন্তু আমরা করেছি। কারণ, কৃষিকে বাঁচিয়ে রাখাই আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।’
তিনি বলেন, ‘খুব কঠিন সময় পার করতে হয়েছে আমাদের। এখনও আমরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছি। কৃষিবিজ্ঞানীদেরও অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছি। কৃষিবিজ্ঞানীদের সফলতায় দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।’
একে/জেডএস/এমএআর/এমএমজে