রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচর মিয়ানমারের চেয়েও নিরাপদ
সামাজিক, শারীরিক ও অবকাঠামোসহ সব দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচর তাদের নিজেদের দেশের চেয়েও নিরাপদ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল।
শনিবার (০৬ মার্চ) ঢাবিতে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। বেলা ১১টায় ঢাবির নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যায়ন বিভাগ ‘বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর: সুবিধা এবং প্রতিকূলতা’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফল প্রকাশের জন্য এ সেমিনারের আয়োজন করে।
বিজ্ঞাপন
সেমিনারে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, জিওলজিক্যালি এই আইল্যান্ডটি স্ট্যাবল। এখন শর্ত হলো ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প কিংবা সুনামি হলে কি হবে? এখন যেখানে ভাসানচর আছে তার আশেপাশে অর্থাৎ ১৭৬২ সালে একটি ভূমিকম্প হয়েছে আরাকানে । সে ভূমিকম্পে এ অঞ্চলের বহু আইল্যান্ড তলিয়ে গেছে। এখন ভাসানচরে এমন ঘটনা ঘটতে পারে কি না? এটা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন ৫০০-৯০০ বছর পর আবার হয়ত বা একটা ভূমিকম্প হতে পারে, সেক্ষেত্রে আমাদের হাতে এখনও ২৫০ বছরের বেশি সময় আছে।
তিনি আরও বলেন, আরেকটা বিষয় হলো ঘূর্ণিঝড়। আর আমি ব্যক্তিগতভাবে ঘূর্ণিঝড়ের পথ নিয়ে স্টাডি করে দেখেছি দ্বীপটির ওপর দিয়ে কোনো ঘূর্ণিঝড়ের পথ যায়নি, আছে দ্বীপটির দুই পাশে। এখন যদি ১৯৭০ সালের মতো ঘূর্ণিঝড়ও হয় সেটাকেও মোকাবিলা করার জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা এই দ্বীপে রাখা হয়েছে। কারণ সরকার এখানে ১৯ ফুট উঁচু বাঁধ দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। এছাড়াও বন, ওয়েভ ব্রেকারসহ এখানে চার ধরনের বেরিয়ার থাকার কারণে ৭০ সালের মতো ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তিনি ভাসানচরকে রোহিঙ্গাদের জন্য নিজ দেশের চেয়েও নিরাপদ জায়গা উল্লেখ করে বলেন, ২০১৭-১৮ সালের ইউএনএইচসিআর ও আমার বিভাগ একটি গবেষণা করেছিল, তাতে দেখা যায় যে, রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে যেসব জায়গায় রয়েছে তাতে যেকোনো সময় পাহাড়ধস ও ভূমিধসের কারণে লক্ষাধিকেরও বেশি মানুষ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে। তবে এখন সামাজিক, শারীরিক ও অবকাঠামোসহ সব দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচর তাদের নিজেদের দেশের চেয়েও নিরাপদ।
শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, বাস্তুচ্যূত জনগোষ্ঠীর জন্য বিশ্বে এমন ঘনবসতিপূর্ণ ক্যাম্প আছে বলে আমার কাছে প্রতীয়মান হয় না। বিপুল জনগোষ্ঠী এই অঞ্চলের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে জটিল করে তুলছে।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেন্ট্রাল ফাউন্ডেশন ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ (সিএফআইএসএস) এর চেয়ারম্যান কমোডর এম এন আবসার। বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন, গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
জেডএস