বাসযোগ্য এবং পরিকল্পিত ঢাকা গড়ে তোলার লক্ষ্যে নগর সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ড্যাপ বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি বলে উল্লেখ করেছেন বক্তারা।

শনিবার (১২ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলন (পবা) এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টের যৌথ উদ্যোগে ‘ঢাকা মহানগর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (২০২২-৩৫) বাস্তবায়নে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় আলোচকরা এ কথা বলেন।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট্রের প্রজেক্ট ম্যানেজার নাঈমা আকতার বলেন, ব্যক্তিগত গাড়ি বৃদ্ধির বর্তমান প্রবৃদ্ধির হার ৫.২ শতাংশ থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ শহরে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা দাঁড়াবে ৩ লাখ ৬০ হাজার এবং এগুলো পার্ক করতে জায়গা প্রয়োজন ৩.৬ বর্গকিলোমিটার। উন্নত বাস পরিষেবা, মনোরম হাঁটার পরিবেশ, সাইকেল লেন তৈরি করার মাধ্যমে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এ কারণে ড্যাপে অগ্রাধিকারমূলকভাবে প্রথম ৫ বছরে ১০০০ কিলোমিটার হাঁটার পথ, ৫০০ কিলোমিটার সাইকেল লেন তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

দি ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইইবি) সভাপতি প্রকৌশলী মো. নুরুল হুদা বলেন, ড্যাপ বাস্তবায়নে একটি অ্যাকশন প্ল্যান প্রয়োজন। রাজউক থেকে পরিকল্পনা অনুমোদন করার পরে পরিকল্পনায় ব্যত্যয় ঘটে। একটি রেগুলেটরি বডির মাধ্যমে উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাশাপাশি সব অংশীদারদের সমন্বয়ে একটি সংস্থা তৈরি করে একজন মন্ত্রীর দায়িত্বে ড্যাপ বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন।

ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, একটি এলাকার নাগরিক সুবিধাকে বিবেচনায় না নিয়ে ভবনের উচ্চতা বৃদ্ধির অনুমোদন দেওয়া হলে এলাকাটি বাসযোগ্যতা হারাবে। আবাসিক এলাকায় রাস্তার প্রশস্ততা এবং জমির পরিমাণের ওপর নির্ভর করে এফএআর নির্ধারণ করা হয়েছে। এফএআর প্রতি তিন বছরে এবং পুরো ড্যাপ প্রতি পাঁচ বছরে রিভিউ এর সুযোগ আছে। উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের জন্য এলাকাভিত্তিক মনিটরিং টিম তৈরির চেষ্টা করছি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, ড্যাপের জনঘনত্ব এবং ভবনের উচ্চতা বিষয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হয়েছে। কেন্দ্রীয় ঢাকায় প্রতি স্কয়ার কিলোমিটারে ৪৯ হাজার মানুষ বাস করে। জনঘনত্ব বেশি হওয়ার কারণে স্কুল, মাঠ-পার্কসহ অন্যান্য সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে একটি শহরকে ধ্বংস করা অনুচিত।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. আব্দুস সোবহান বলেন, পুনরুদ্ধারের আগে ড্যাপের চিহ্নিত জায়গায় মাঠ-পার্ক তৈরি করতে হবে। আমাদের পুরোনো জেলখানাকে একটি সবুজ বলয় হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ঢাকা শহরে বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে বিকেন্দ্রীকরণের বিকল্প নেই।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, ড্যাপ বাস্তবায়নের ফলে তেঁতুলতলা মাঠ এবং প্যারিস রোড মাঠ রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। ড্যাপে চিহ্নিত মাঠ-পার্কের তালিকা তৈরি করে সেগুলো উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে।

পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, বর্তমান ড্যাপে অনেক আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত ধারণা দেওয়া হয়েছে। ভুলত্রুটি বা বিতর্ক যাই থাকুক না কেন বাসযোগ্য ঢাকা গড়ে তোলার বিষয়ে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। একটি রোড ম্যাপের মাধ্যমে রাজউকের নেতৃত্বে ড্যাপ বাস্তবায়নে উদ্যোগ প্রয়োজন।

এএসএস/জেডএস